শিক্ষাঙ্গন
অমিতের রুমে মিলল ‘সুইসাইড নোট’
জাবি প্রতিনিধি
(১ বছর আগে) ১১ মে ২০২২, বুধবার, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৬:১৫ অপরাহ্ন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শহীদ রফিক-জব্বার হলের ছাদ থেকে পড়ে নিহত অমিত কুমার বিশ্বাসের (২৫) রুমে ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (১০ মে) রাত দশটার দিকে তার বালিশের নিচে এ সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। পরে রাতেই অমিতের রুম পরিদর্শন করে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সোহেল আহমেদ। তিনি ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সুইসাইড নোটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। আমার মস্তিষ্কই আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী। আমি নিজেই নিজের শত্রু হয়ে পড়েছি অজান্তেই। নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে আমি ক্লান্ত। আর না। এবার মুক্তি চাই। প্রিয় মা-বাবা, ছোট বোন সবাই পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।’
এছাড়া অমিতের পড়ার টেবিলে আরও কয়েকটি সুইসাইড বিষয়ক মন্তব্য লেখা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ছিল, ‘মানুষ তার জৈবিক চাহিদার জন্য আত্মহত্যা করে না, আত্মিক আশায় টান পড়লে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।’
এ বিষয়ে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে নোটের লেখার সঙ্গে তার আগে খাতার লেখার মিল পেয়েছি।
অমিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক জব্বার হলের ৩১৫ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তদন্তের স্বার্থে রুমটিতে তালা দিয়ে রেখেছে প্রশাসন।
অমিত কোন বিষয় নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন কি না, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানা যায়নি। চিরকুটের বিষয়েও নিহতের রুমমেটরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে সুইসাইড নোট পাওয়ার আগে অমিতের রুমমেট, একই বিভাগের শিক্ষার্থী রবিন ঘোষ বলেন, অমিত খুবই ভালো ছেলে। তার কোনো ধরনের হতাশা ছিল না। ও নিয়মিত মেডিটেশন করত। তবে ইদানিং একটু অসুস্থ ছিল। এছাড়া কোন ধরনের সমস্যা ছিল না। আজকে দুপুরে আমরা বন্ধুরা মিলে একসাথেই খাবার খেয়েছি। অমিতও আমাদের সাথে ছিল। পরে সে হলে চলে আসে। কিছুক্ষণ পর শুনি সে ছাদ থেকে পড়ে গেছে।
অমিতের পিতা অজয় কুমার বিশ্বাস জানান যে, আমাদের পারিবারিক কোন ঝামেলা ছিল না। গত ৭ তারিখ ছেলেকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছি ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। পরিবারের সাথে তেমন কোন মনোমালিন্যও হয়নি।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে অভিযুক্তের একটি সুইসাইড নোট, মোবাইল ও খাতা সংগ্রহ করেছি। তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে দ্রুত রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। অমিতের লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে, দুপুর আড়াইটার দিকে শহীদ রফিক-জব্বার হলের রফিক ব্লকের পাঁচতলার ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় অমিত। পরে তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
এরপর বিকাল সাড়ে পাঁচটায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। অভ্যন্তরীণ রক্তপাত ও মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণে তার মৃত্যু হয় বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক।