প্রথম পাতা
চূড়ান্ত হচ্ছে নীতিমালা
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় নিয়োগ আসছে
পিয়াস সরকার
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবারদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ পুরনো। অর্থের বিনিময়, স্বজনপ্রীতি, দলীয় নিয়োগসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ ছাড়াও ফাঁকা আসনের তুলনায় অধিক সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার ঘটনার নজিরও আছে। এরইমধ্যে ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের হিসাবে একজন শিক্ষকের সাপ্তাহিক ওয়ার্কলোড হবে মাত্র ১৩ ঘণ্টা বা ৭৮০ মিনিট। পাঁচদিন সপ্তাহে ক্লাস নিলে প্রতিদিন ওয়ার্কলোড হবে মাত্র ১৫৬ মিনিট বা ২ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট। আর ব্যবহারিক কোর্সের জন্য প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক হবেন একজন করে। বর্তমানে ৪৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৯৫৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন ১৫ হাজার ১৯৪ জন। কিন্তু এই শিক্ষকদের ৩ হাজার ৫১১ জন অর্থাৎ ২৩ শতাংশই আছেন বিভিন্ন ছুটিতে। নতুন নীতিমালার আলোকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়ার্কলোড অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে দ্বিগুণ বা তারও বেশি।
নন-কন্টাক্ট আওয়ারে থাকবে কোর্স মেটিরিয়াল প্রস্তুতকরণ, গবেষণা, ল্যাবরেটরি, বই/প্রবন্ধ লেখা, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, মৌখিক পরীক্ষা/থিসিস উপস্থাপনে অংশগ্রহণ, একাডেমিক/প্রশাসনিক কাজে সহায়তা করা, একাডেমিক/প্রশাসনিক সভায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি। এতে বলা হয়, ৬০ এর অধিক শিক্ষার্থী হলে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনে একাধিক সেশন করা যাবে। স্টুডেন্ট কাউন্সিলিংয়ের জন্য শিক্ষক প্রতি সপ্তাহে এক ঘণ্টা সময় ব্যয় করবেন। এই নীতিমালায় যদি কোনো বিভাগে শিক্ষক বেশি হয় তবে অবসরে যাওয়া পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। শিক্ষক সংখ্যা নির্ধারণের জন্য বার্ষিক গড় টিচিং লোড নির্ধারণের পর শিক্ষক সংখ্যা দিয়ে ০.৬৫ গুণ করে শিক্ষক সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। কোনো বিভাগে অধিক সংখ্যক শিক্ষক থাকলে প্রাপ্ত শিক্ষকের ২০ শতাংশ শিক্ষক অধিক ধরে আবেদন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচিং লোড ক্যালকুলেশন নীতিমালার ওপর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গত বুধবারের এই বৈঠকে পূর্বে বর্ণিত নীতিমালা পাস করা হয়। এই নীতিমালা অনুসরণ করে প্রাপ্ত ফল চেয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠানো হবে। এর আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শূন্যপদ ও নতুন প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষকের সংখ্যা জানা যাবে। এরই ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য ও টিচিং লোড ক্যালকুলেশন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, একটা রিপোর্ট তৈরি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এই রিপোর্ট গ্রহণ করার পর সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েও দেয়া হয়েছে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয় গুণগত শিক্ষা পরিবেশের জন্য যে কয়জন শিক্ষক প্রয়োজন হবে সেই সংখ্যাটা যাবে। তিনি আরও বলেন, এই নীতিমালা অনুযায়ী তারা বিভাগের ধরন শিক্ষার্থী সংখ্যা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে যাতে শিক্ষা কার্যক্রমটা সুন্দরভাবে চলতে পারে তাই তাদের কাঠামো নির্ধারণের জন্য এটি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আছে নানা দুর্নীতির অভিযোগ। নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসিকে যেতে হয়েছিল কারাগারে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে করা হয়েছে অপসারণ। আবার সম্প্রতি খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি শহীদুর রহমানের নিয়োগ বাণিজ্য দেখে হতবাক ইউজিসি। প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রতিবেদনে বলে, ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে কর্মচারী-কর্মকর্তা রয়েছেন ৪২৬ জন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভিসির স্বজন ৯ জনসহ সর্বমোট ৭৩ শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে। তার মেয়াদ শেষের দিন রাতের আঁধারে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে হয়। এ ছাড়াও শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে অহরহ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি রুখতে অভিন্ন নীতিমালার কথাও বলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। পূর্ববর্তী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঘোষণা দিয়েছিলেন এই নীতিমালার। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও দিয়েছেন ঘোষণা।
কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও আলোর মুখ দেখেনি অভিন্ন নীতিমালা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবী যখন অর্থনৈতিক সংকটে পতিত তখন এই নীতিমালা ব্যবহার করে বিদ্যমান পদের দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত শিক্ষকের পদ সৃষ্টি ও নিয়োগদানের কর্মসূচি শুরু হবে। আবার পূর্বের শূন্যপদ না থাকা সত্ত্বেও যে পরিমাণ শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে তারাও বৈধভাবে থাকার সুযোগ পাবেন কারণ এতে বলা হয়েছে ক্যালকুলেশনের পরও যদি অধিক শিক্ষক থাকে তারা অবসর পর্যন্ত এই পদে থাকতে পারবেন। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দেশের উচ্চ পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা, তাদের হাত ধরে দেশকে নেতৃত্ব দিতে আসবেন। কিন্তু দেখা যায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চেয়ার পাওয়া মানেই নিয়োগ বাণিজ্য। তারা দেশের কথা সমাজের কথা না ভেবে ভাবছেন নিজ স্বার্থের কথা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে শিক্ষক নিয়োগ না হলে অচিরেই শিক্ষার মান আরও তলানিতে নেমে যাবে।
মন্তব্য করুন
প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন
প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত
ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রতিক্রিয়া/ কেবল নির্বাচনে প্রভাব নয় ভাগ্যও নির্ধারণ করবে

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]