শরীর ও মন
ক্যান্সার রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়সমূহ
ডা. মাহমুদুল হাসান সরদার
১১ মে ২০২২, বুধবারশুরুতেই ক্যান্সার ধরা পড়লে ও সঠিক চিকিৎসা করালে মরণব্যাধি এই রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়। কিন্তু দেখা যায় শুধু সচেতনতার অভাবে অনেকেরই প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। রোগটিকে অবহেলা করে চিকিৎসা নিতে বিলম্ব করলে শেষ পর্যায়ে জটিলতা বেড়ে যায় ও রোগটি ছড়িয়ে শরীরে বিস্তার লাভের কারণে ভালো কোনো চিকিৎসা দেয়াও সম্ভবপর হয় না। দেখা যায়, অনেক নামকরা হাসপাতালেও ক্যান্সারের জটিলতা বা শেষ স্টেজে চলে গেলে রোগীকে চিকিৎসা দিতে চান না বা হাসপাতালে ভর্তি করতে চান না। ফলে রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য বাকি জীবনটাতে লড়াই করতে হয়। প্রকৃত অর্থে এখনো পর্যন্ত ক্যান্সারের চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তবে বিভিন্ন জার্নালে বা খবরে প্রকাশ হতে দেখা যায় কিছু কিছু ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি ক্যান্সার প্রতিরোধে ও নিরাময়ে যথেষ্ট সহায়ক। প্রকৃতপক্ষে ক্যান্সারের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসকরা পদ্ধতিগত চিকিৎসা করে রোগীকে সুস্থ ও আরোগ্য লাভ করানোর চেষ্টা করেন। চিকিৎসকরা গবেষণায় দেখেছেন যে মানুষ প্রায় ২০০ প্রকারেরও বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। প্রতিটি ক্যান্সারই আলাদা আলাদা এবং এদের চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা। বেশিরভাগ ক্যান্সারের ঝুঁকির অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, স্থূলতা ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কিছু বদঅভ্যাস।
ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণসমূহ
১. খুব ক্লান্ত বোধ করা
২. ক্ষুধা কমে যাওয়া বা ক্ষুধা মন্দা।
৩. শরীরের যেকোনো জায়গায় চাকা বা দলা দেখা দেয়া
৪. দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ভাঙ্গা
৫. মলত্যাগে পরিবর্তন (ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া বা কালো মল)
৬. জ্বর রাতে ঠাণ্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া
৭.অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমা
৮. অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়া
৯. ত্বকের পরিবর্তন দেখা যাওয়া
১০। মানসিক অস্বস্তি বোধ
ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়সমূহ
১. অ্যালকোহল মুক্ত থাকুন
অ্যালকোহল যেমন- রাম, মদ, বিয়ার, ব্রান্ডি ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস ছেড়ে দিন।
২. ধূমপান পরিহার করুন
ধূমপান মারাত্মক ক্ষতিকর। দেহের যে কোষগুলোতে ক্যান্সার বাসা বাঁধতে পারে, ধূমপান সে কোষগুলোতে ক্যান্সার ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। তাই ক্যান্সারকে দূরে রাখতে অবশ্যই ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
৩. খাদ্য তালিকা
খাদ্য তালিকায় সবজি, ফল এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখুন। এগুলো বাওয়েল বা মলাশয় ক্যান্সারের আশঙ্কা দূর করে। পুষ্টিকর খাবার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়।
৪.পারিবারিক ইতিহাস
বংশ বা পরিবারে ক্যান্সারঘটিত কোনো ইতিহাস রয়েছে কিনা তা খুঁজে দেখুন। যেমন- পরিবারের কারও স্তন ক্যান্সার থাকলে আপনারও এ সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এটা অনেকটাই বাস্তব হয়ে থাকে।
৫. সূর্যের আলো এড়িয়ে চলুন
অতিরিক্ত সূর্যের আলোতে ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমার থাকে যাতে ত্বকে ক্যান্সারের আশঙ্কা রয়েছে। তাই গরমকালে সূর্যের আলো সব সময় এড়িয়ে চলুন।
৬. রাসায়নিক পদার্থ
নানা ধরনের খাবার, দূষিত বায়ু এবং দূষিত পানি থেকে আমরা বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ গ্রহণ করি। এসব পদার্থ ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। তাই যতটুকু সম্ভব এসব থেকে দূরে থাকতে হবে।
৭. ওজন নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত ওজন মোটেও ভালো নয়। নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণ ক্যান্সার থেকে দূরে থাকার বড় একটি উপায়। নিজের উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
লেখক: হোমিও ক্যান্সার চিকিৎসক ও গবেষক, সরদার হোমিও হল, ৬১/সি, আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সেল-০১৭৩৭৩৭৯৫৩৪।