শেষের পাতা
ডেঙ্গু: ৭৭ ভাগ রোগী রাজধানীতে
স্টাফ রিপোর্টার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবারডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৬০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৩৮ জনে। চলতি মাসে ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যু আগস্ট মাসের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। এ মাসে ৮ হাজার ৬৪১ জন আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। আগস্টে ছিল ৩ হাজার ৫২১ জন। ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি মাসেই মারা গেছেন ৩৩ জন। যা আগস্ট মাসে ছিল ১১ জন। এ বছর ১৪ হাজার ৮২২ ডেঙ্গু রোগী সারা দেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। তার মধ্যে ১১ হাজার ৩৯১ জন রাজধানী ঢাকায় এবং ৩ হাজার ৪৩১ জন ঢাকার বাইরে। অর্থাৎ ৭৭ ভাগ রোগী রাজধানী ঢাকায় এবং বাকি ২৩ ভাগ ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। গতকাল সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৪৬০ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩২০ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৪০ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ৪৬০ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৩৮ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ৩১৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪২৪ জন। এতে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ২৭শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি ছিলেন ১৪ হাজার ৮২২ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছিলেন ১৩ হাজার ৩০ জন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক জেলায় যদি পুরো বছর পাঁচজন রোগী পাওয়া যায়, তাহলে ধরে নেয়া যায়, আক্রান্ত রোগী অন্য জেলা থেকে এসেছে। তবে এর বেশি হলে ধরে নেয়া হয় ডেঙ্গু স্থানীয়ভাবে ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ডেঙ্গুর স্থানীয় সংক্রমণ এরই মধ্যে ৪০ জেলায় দেখা দিয়েছে। দেশজুড়ে যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, ডেঙ্গু মোকাবিলা করা কঠিন হবে। তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখনই জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সারাবছর অভিযান চালানো এবং কীটতত্ত্ব সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার এ বিষয়ে গণমাধ্যমে বলেন, স্থানীয় সংক্রমণ যেসব এলাকায় দেখা দিয়েছে, এসব এলাকায় দ্রুত শনাক্ত করে মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হয়। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে- জেলা-উপজেলাগুলোতে এখনো এডিস মশা নিধনে কার্যকার ব্যবস্থা নেই। এসব এলাকায় মশা নিধনে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও যন্ত্রপাতি নেই। এ সমস্যা নিরসনে দ্রুত উদ্যোগী হতে হবে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার নগর কর্তৃপক্ষের অভিজ্ঞতা আছে। তবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে পৌরসভাগুলোর দক্ষতা সীমিত। ফলে ডেঙ্গু জেলা থেকে উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ায় সামনে আরও জটিল পরিস্থিতির শঙ্কা রয়েছে। জেলা আক্রান্ত হলে উপজেলাগুলোতেও ডেঙ্গু ছড়াবে। কারণ নগরায়ণের প্রভাব উপজেলা পর্যন্ত চলে গেছে। মশা নিয়ন্ত্রণে দেশের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। গঠন করতে হবে জাতীয় মশা নিধন সেল।