বাংলারজমিন
এখনো রহস্যাবৃত
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার
খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশা থেকে নিখোঁজের ২৯ দিনের মাথায় সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা গৃহবধূ রহিমা বেগমের নিখোঁজের ঘটনা রহস্যাবৃতই থেকে গেছে। এমনকি নিখোঁজের প্রথম ২০ দিন তিনি কোথায় ছিলেন তা সহ নানা প্রশ্ন নগরবাসীর। পিবিআই’র পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, জিজ্ঞাসাবাদে রহিমা বেগম জানিয়েছেন, ২৭শে আগস্ট রাতে ৪ জন তাকে অপহরণ করেছিল। এরমধ্যে তিনি মহিউদ্দিন ও তার ভাই গোলাম কিবরিয়াকে চিনতে পেরেছেন। পরে তার নাকে কিছু একটা তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। যখন তার জ্ঞান ফেরে তিনি সাইনবোর্ডে দেখেন বান্দরবন জেলার কোনো এক স্থান। এরপর একটি সাদা কাগজে সই নিয়ে কিছু টাকা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেন। পরে তিনি গাড়িতে করে ঢাকা হয়ে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর হয়ে আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে আশ্রয় নেন। আব্দুল কুদ্দুস ২৮ বছর আগের রহিমা বেগমের ভাড়াটিয়া ছিলেন। তিনি ওই সময় সোনালী জুট মিলে চাকরি করতেন।
কেন সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন না, এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। অপরদিকে তাকে উদ্ধার করার সময় সঙ্গে একটি সাদা রঙের ব্যাগ ছিল। যাতে পোশাক, আয়না, ওষুধসহ ব্যবহারের বিভিন্ন জিনিস ছিল। এ ছাড়া একটি পার্টস-এ কিছু গহনাও ছিল। তিনি যদি অপহৃত হন তাহলে এগুলো তার সঙ্গে থাকার কথা না। এদিকে রহিমা বেগম আদালতে লিখিত বয়ানে বলেছেন, অপহরণকরীরা তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছেড়ে দেয়। সেখানে থেকে রেল স্টেশনে গিয়ে রেলে চড়ে প্রথমে ঢাকা ও পরে গাড়িতে করে বোয়ালমারী যান। এই বয়ান সম্পর্কে এসপি মুশফিকুর রহমান বলেন, আদালতে দেয়া রহিমা বেগমের এই বক্তব্য বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেননা আমরা সকলে জানি রেলে চড়তে হলে তাকে চট্টগ্রাম থেকে উঠতে হবে। এছাড়া তিনি বলেন, আমাদের প্রশ্ন হলো তিনি যদি অপহৃত হন তাহলে তাদের কাছ থেকে মুক্ত হয়ে সন্তানদের কাছে না এসে বোয়ালমারী যাবেন কেন। বোয়ালমারী কবে এলেন এমন প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, গত ১৭ই সেপ্টেম্বর। তাহলে ঘুরেফিরে আসছে তার আগের ২০ দিন তিনি কোথায় ছিলেন। এসপি জানান, এমন প্রশ্ন তাকে করা হলে তিনি বলেছেন, ওই ২০ দিন তিনি অজ্ঞান ছিলেন। তবে এসব কিছু নিয়ে তদন্ত করছে পিবিআই। যেহেতু তাকে সুস্থ অবস্থায় পাওয়া গেছে সেহেতু তার নিখোঁজের প্রকৃত ঘটনা উন্মোচিত হবে বলে দাবি এসপির। এদিকে, রহিমা বেগম কী স্বেচ্ছায় অন্তর্ধানে গিয়েছেন, নাকি পরিবারের সদস্যরা এর সঙ্গে জড়িত নাকি আসলেই তিনি অপহৃত হয়েছেন এটাই এখন প্রশ্ন। ২৭শে আগস্ট নিখোঁজের পরদিন প্রতিবেশী ৬ জনের নামে দৌলতপুর থানায় অপহরণের মামলা করেন মেয়ে আদুরী খাতুন।
আসামিদের মধ্যে প্রতিবেশী মহিউদ্দিন ও তার ভাই গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে রহিমা বেগমদের জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক মো. আল আমিনের কাছে জবানবন্দি দেন রহিমা বেগম। সেখানে তিনি বলেন, ৪ জন তাকে অপহরণ করেছিল। এরমধ্যে তিনি মহিউদ্দিন ও গোলাম কিবরিয়াকে চিনেছেন। এরপর চিফ মেট্রোপলিটন আদালত-৪ এর বিচারক সারোয়ার আহমেদের নির্দেশে মেয়ে আদুরী খাতুনের জিম্মায় তাকে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানের লাইমলাইটে আসা, তার নানা পোস্ট, মায়ের লাশ পাওয়ার দাবি ভাবিয়ে তুলেছিল সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
রহিমাকে পাওয়ার পর পাল্টেছে মরিয়মের ভাষাও। এসব কিছু নিয়ে গণমাধ্যমের পাঠক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা যখন আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত, তখন উঠেছে আরেক অভিযোগ। মরিয়ম মান্নান নাকি প্রভাবশালী, ঢাকায় তার আছে বিভিন্নজনের সঙ্গে সম্পর্ক! এমন অভিযোগ তুলেছেন রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি ফুলবাড়ীগেট এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী হেলাল শরীফের স্ত্রী মনিরা আক্তার। হেলাল শরীফ গ্রেপ্তার আছেন। মনিরা আক্তার জানান, তার স্বামী হেলাল বিনা অপরাধে গত ২৮ দিন ধরে জেল খাটছেন। গত ৩০শে আগস্ট হেলালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আগামী অক্টোবরে তার সন্তান প্রসবের কথা থাকলেও স্বামীর দুশ্চিন্তায় গত ৬ই সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। মনিরা আরও বলেন, মরিয়ম খুব প্রভাবশালী। ঢাকার বিভিন্ন লোকের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। তিনি নিজে তার মায়ের নিখোঁজ হওয়ার মতো গর্হিত কাজ করেছে বলে আমি মনে করি। প্রভাবশালী লোক দিয়ে তিনি পুলিশকে প্রভাবিত করে আমার স্বামীকে জেল খাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, মরিয়মের কারণে অপরাধ না করেও আমার স্বামী জেল খাটছেন। এতে আমাদের হয়রানি, অর্থদণ্ড ও মানহানি হয়েছে। আমরা নিশ্চিত, গ্রেপ্তার হওয়া কেউই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। মনিরা আশা করছেন দ্রুত তার স্বামী জেল থেকে ছাড়া পাবেন।
মন্তব্য করুন
বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন
বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]