কলকাতা কথকতা
যে ক্যান্টিনে সাদা টোস্ট জ্যাম-জেলি-বাটার টোস্টের থেকেও দামি
বিশেষ সংবাদদাতা, কলকাতা
(২ বছর আগে) ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, রবিবার, ৭:৫০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:২৪ পূর্বাহ্ন

জানেন কি পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ক্যান্টিনে চার পিস সাদা টোস্ট জ্যাম-জেলি-বাটার মাখানো টোস্টের থেকেও দামি? বিধায়ক থেকে শুরু করে মন্ত্রী, বিধানসভার কর্মীরা ক্যান্টিনের খাদ্যতালিকা দেখে হাসছেন। চারটি বাটার টোস্ট বা জেলি টোস্টের দাম ১৯ টাকা। আর সাদা টোস্ট এক এক পিস পাঁচ টাকা মানে চারটি টোস্ট নিলে দাম দাঁড়াবে ২০ টাকা। এখানেই শেষ নয়, বিধানসভার অধিবেশনের ফাঁকে ডাল, ভাত, মাছের কিংবা ডিমের ঝোল খেতে বিধানসভার ক্যান্টিনে আসে মানুষ, তা তিনি মন্ত্রী হোন বা বিধায়ক হোন। খুন্নিবৃত্তি করতেই ক্যান্টিনে আসা। খিদে বিধায়ক কিংবা মন্ত্রী মানে না। কিন্তু, ক্যান্টিনে এসে মেন্যু কার্ডটি হাতে নিলেই চোখ কপালে উঠবে।
বিরিয়ানি, চিকেন চিলি, চওমিন সব আছে। নেই শুধু বাঙালির মন পসন্দ ভাত-মাছের ঝোল কিংবা ডিমের কারি। অথচ একটা সময়, এই করোনাকালের আগে বিধানসভা ক্যান্টিনে ৩৫ টাকায় মিলতো সবজি-ভাত, ৪০ টাকায় ডিম- ভাত, মাছ ভাতের জন্য দিতে হতো ৫০ টাকা আর চিকেন কারি রাইসের দাম ছিল ৭০ টাকা।
দশ টাকায় মিলতো ওমলেট। একটা লাড্ডুর দাম ছিল সাত টাকা, এক কাপ চায়ের দাম ছিল ১০ টাকা। একটি বিস্কুটের দাম একটাকা। আট টাকায় মিলতো ডিমের চপ, ১১ টাকায় এক প্লেট ঘুগনি। বিধানসভার ক্যান্টিনের নামডাক এমনই ছিল যে, রাজ্যের ডাকসাইটে মন্ত্রীরাও ক্যান্টিনে খেতে আসতেন কিংবা তাদের ঘরে যেত ক্যান্টিনের খাবার। ক্যাটারার মৃধা অ্যান্ড কোম্পানি দীর্ঘদিন ক্যান্টিন চালিয়েছে বিধানসভায়। তাদের এক কর্তা আক্ষেপ করছিলেন- সেই রামও আর নেই ,অযোধ্যাও নেই। খেতে ভালোবাসতেন এমন মন্ত্রী-বিধায়কের সংখ্যা কমেছে। বরকত গনি খান চৌধুরী যতদিন বেঁচে ছিলেন, ক্যান্টিনের খাবার-দাবার তার অতি প্রিয় ছিল। ঘুগনি, বাটার টোস্ট ছাড়াও তার ঘরে নিয়ম করে যেত ডিমের চপ, আলুর দম ইত্যাদি।
সুব্রত মুখোপাধ্যায় ডিমের চপ খেতে ও খাওয়াতে ভালোবাসতেন। মৃধা ক্যান্টিনের এগরোল তার খুব পছন্দের ছিল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন জেলে। কিন্তু, ক্যান্টিনের খাবার দাবার তিনি যতদিন ছিলেন তার ঘরে অর্ডার যেত।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? প্রাক্তন ক্যান্টিন কর্তা জানাচ্ছেন, চা-বিস্কুট ছাড়া মমতার ঘরে তিনি বিশেষ কিছু যেতে দেখেননি। যখন দীর্ঘসময় বিধানসভায় থাকতেন কখনও কখনও তার ঘরে ঘুগনি-পাউরুটি যায়নি তা নয়, কিন্তু ক্যান্টিন কর্তা হলফ করে বলতে পারবেন না যে, মমতা তার ক্যান্টিনের ঘুগনি কখনও খেয়েছেন। বরং হলফ করে বলতে পারেন যে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু লিকার চা ছাড়া আর কিছু ক্যান্টিন থেকে খেয়েছেন। কখনও -সখনও একটি বা দুটি ক্রিম ক্র্যাকার বিস্কুট। ব্যাস, আর কিছু নয়। তবে, জ্যোতি বসুর কাপটি ঝকঝকে, তকতকে হওয়া চাই। তাই ক্যান্টিনে ওর জন্য আলাদা কাপ রাখতে হতো।