শরীর ও মন
ব্রে ই ন অ্যা নি উ রি জ ম ক্লি পিং
ব্রেইন-এর একটি আধুনিক অপারেশন
ডা. রকিবুল ইসলাম (রকিব)
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, রবিবারকিছু বছর আগে বাংলাদেশে সফল অ্যানিউরিজম ক্লিপিং অপারেশন হতো না এবং যা ছিল কল্পনাতীত। জটিল মস্তিষ্কের এই রোগটির প্রয়োজন অনুভব করে আমরা বিদেশে অ্যানিউরিজম সার্জারির উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। আর বর্তমানে অত্যাধুনিক মাইক্রোস্কোপ-এর ব্যবহার এবং দেশে আধুনিক টাইটেনিয়াম ক্লিপ সহজলভ্য হওয়ায় আমরা এখন প্রতিনিয়ত সফল অ্যানিউরিজম ক্লিপিং সার্জারি করছি। বলা হয়ে থাকে ব্রেইন বা মস্তিষ্কের এটা সবচেয়ে কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং অপারেশন। বিষয়টিকে একটু কেস স্টাডি করে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করছি।
মৌসুমীর (৩৩ বছর) হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা শুরু হয়, এমন মাথাব্যথা জীবনে কখনো হয়নি এবং সঙ্গে কয়েকবার বমি করে। সিটিস্ক্যান করলে মস্তিষ্কে সাব অ্যারাকনয়েড হেমারেজ বা রক্তক্ষরণ ধরা পড়ে। সিটি এনজিওগ্রাম করলে ব্রেইন এর রক্তনালিতে অ্যানিউরিজম শনাক্ত হয় । রোগীকে আমি জানাই দ্রুত অপারেশন করলে পুনরায় রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করা যাবে। কারণ পুনরায় রক্তক্ষরণ হলে মৃত্যু ঝুঁকির সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। পরবর্তীতে অ্যানিউরিজম ক্লিপিং অপারেশন করে আলহামদুলিল্লাহ সফলভাবে অ্যানিউরিজম ব্লক করে দেয়া হয়।
এ ধরনের অপারেশনে অধিক রক্তক্ষরণ এর সম্ভাবনা থাকে ও অপারেশন পরবর্তী আইসিইউ এর প্রয়োজন হয়, কিন্তু মৌসুমীর ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা ছাড়াই সফলভাবে অপারেশন সম্পন্ন হয় এবং আইসিইউ’র প্রয়োজন হয়নি।
মস্তিষ্কের বা ব্রেইনের অ্যানিউরিজম কি?
মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজম হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে ব্রেইন-এর রক্তনালির দুর্বল দেয়ালে ফোসকা বা বেলুনের মতো অংশ দেখতে পাওয়া যায়।
উপসর্গসমূহ:
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়- বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগী কোনো উপসর্গ অনুভব করে না যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো অ্যানিউরিজম ফেটে রক্তক্ষরণ না হয়। মাঝে মাঝে ফেটে যাওয়ার আগে অ্যানিরিউজম প্রসারিত হয় এবং হঠাৎ একটু মাথাব্যথা করে এবং চলে যায়। একে ওয়ার্নিং হেডেক বলে। ওয়ার্নিং হলে দ্রুত নিউরো সার্জনের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিলে অনেক ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ রোগের উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলোর মধ্যে হলো হঠাৎ বজ্রপাতের মতো তীব্র মাথাব্যথা হয়, বমি বমি ভাব বা খিঁচুনি হতে পারে, জ্ঞানের মাত্রা কমে যেতে পারে বা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, ঘাড়ে ব্যথা বা ঘাড় শক্ত হয়ে যেতে পারে।
কারণসমূহ:
এই রোগের সঠিক কারণ এখনো নির্ণয় হয়নি। তবে যে উপাদানগুলো ঝুঁকির মধ্যে তাহলো- ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, জন্ম থেকে দুর্বল ধমনীর দেয়ালের উপস্থিতি, মস্তিষ্কে আঘাত, ধমনীর দেয়াল সংক্রমণ।
কীভাবে রোগ নির্ণয় করবেন
সিটি স্ক্যান: ব্রেইন এর সিটি স্ক্যান করলে দ্রুত রক্তক্ষরণ শনাক্ত করা যায়।
এনজিওগ্রাম: সিটি এনজিওগ্রাম, এম আর এনজিওগ্রাম, ডিএস এনজিওগ্রাম করলে রক্তক্ষরণের কারণ (অ্যানিউরিজম শনাক্ত) জানা যায় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়।
প্রাথমিক চিকিৎসা:
দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এজন্য উল্লেখিত লক্ষণসমূহ দেখা দিলে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নিকটস্থ হাসপাতালে জরুরি যোগাযোগ করতে হবে।
নির্দিষ্ট চিকিৎসা:
দুইটি অত্যাধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে অ্যানিউরিজম বন্ধ করে দেয়া হয় যেনো ভবিষ্যতে আর রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) না হতে পারে। ১) মাথার খুলি কেটে অ্যানিরিউজম ক্লিপিং সার্জারি। ২) উরুতে কুচকির রক্তনালির মাধ্যমে ব্রেইন এ পৌঁছে অ্যানিউরিজম কয়েলিং যেখানে খুলি কাটার প্রয়োজন হয় না।
সচেতনতা
নিয়মিত চেক-আপ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও ধূমপান ত্যাগ রক্তক্ষরণের ঝুঁকি হ্রাস করে। ওয়ার্নিং হেডেক হলে দেরি না করে নিউরোসার্জনের শরণাপন্ন হোন। এতে রক্তক্ষরণ হতে রক্ষা পাবেন। রক্তক্ষরণ হলে ক্লিপিং বা কয়েলিং করে অ্যানিউরিজম ব্লক করতে পারলে পরবর্তী রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব।
লেখক: ব্রেইন, স্পাইন ও স্ট্রোক সার্জন, সহকারী অধ্যাপক. নিউরোসার্জারি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। অ্যাপয়েন্টমেন্ট: ০১৭৮৯৯৫৫৫৫৫।