শিক্ষাঙ্গন
এসএসসি পরীক্ষা
অনুপস্থিত ৮১ জনের ৬৩ জনই বাল্যবিয়ের শিকার
ফেনী প্রতিনিধি
(২ বছর আগে) ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, শনিবার, ৫:২০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন
ফেনীর সোনাগাজীতে করোনাকালসহ বিভিন্ন সময়ে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থী ৬৩ জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। বাল্যবিয়ের শিকার হওয়া ছাত্রীদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী ৪১ জন ছাত্রী ও দাখিল পরীক্ষার্থী ২২ জন। এসব ছাত্রীদের সকলে পরিবারের চাপে বাল্যবিয়ের পিড়িতে বসেছে বলে সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিন বলেন, চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার ২৪টি বিদ্যালয় থেকে ৩ হাজার ২০৫ জন এবং ১৯টি মাদ্রাসা থেকে ৮৯৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছিলো। কিন্তু ৮১জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এর মধ্যে ৬৩ জন ছাত্রী এবং ১৮ জন ছাত্র রয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিয়ে দেখেছে, করোনাকালের মত এবারও নানা অজুহাতে বিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীদের বাল্যবিবাহ দেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। বাল্যবিয়ের পিড়িতে বসা অধিকাংশ ছাত্রীর বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছর। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পরিবারের দাবি দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা, স্কুল-মাদ্রাসা যেতে অনিহার কারনে তারা কিশোরী মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাল্যবিয়ের শিকার একাধিক ছাত্রীর অভিভাবকরা বলেন, পরিবারের আয় কমে যাওয়াসহ দারিদ্রতা ও বিভিন্ন কারনে এবং হঠাৎ করে ভালো পাত্র পাওয়ায় মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। তবে বিয়ের পর তারা পড়ানোর চেষ্টা করলেও স্বামীর পরিবার রাজি না হওয়ায় এসব মেয়েদের শিক্ষাজীবন এখানেই শেষ হয়ে গেছে।
সোনাগাজী বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল মান্নান বলেন, গত বছর তার স্কুলের প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছিল। এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ৮৩ জন। তারা পরীক্ষায়ও অংশ নেয়নি। তবে এবার তাদের কঠোর তদারকির কারণে অনেক মেয়ের গোপনে বিয়ে হয়ে গেলেও ১৮৩ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন কার্যক্রম চলার সময় থেকেই পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়েছে, মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে, তারা আর পড়বে না। এখনো নতুন নতুন বাল্যবিবাহের ঘটনা জানতে পারছি। আসলে এসব বিয়ে খুব গোপনে হয়েছে। বেশিরভাগ বিয়ে অন্য এলাকায় নিয়ে দেয়া হয়েছে। বাল্যবিবাহ হওয়া মেয়েদের কেউ কেউ এখনো পড়াশোনার মধ্যে আছে। ওই ধরনের শিক্ষার্থীদের স্কুলে আনার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছি।
উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত ১৮ ছাত্রের মধ্যে অনেকেই বিদেশসহ পরিবারের প্রয়োজনে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়ে কাজ করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মনজুরুল হক বলেন, আমি উপজেলায় যোগদানের পর থেকে উপজেলায় বেশ কয়েকটি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করেছি। অভিনব পন্থায় বাল্যবিবাহ হচ্ছে, এটা ঠিক। তবে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থী ছাড়া অন্য শ্রেণির ছাত্রীরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।