শরীর ও মন
পাইলস হলে লংগো অপারেশনের সুবিধা
ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবারপাইলস হলে শুরুতে চিকিৎসা না নেয়া ও সচতেনতার কারণে এ রোগটির জটিলতা বেড়েই চলেছে। অনেকেই পাইলস হলে অপারেশন করতে হবে মনে করে ভয়ে আর চিকিৎসকের কাছে আসেন না। “বীনা অপারেশনে পাইলসের চিকিৎসা “ এ রকম হাতুড়ে ডাক্তারদের বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে নিজের ক্ষতি করে ফেলেন এবং শুরুতে সহজে পরিত্রাণ পাওয়া পাইলসটিকে আরও জটিল করে ফেলেন। নারী-পুরুষ কমবেশি প্রায় সব বয়সের মানুষই পাইলস সমস্যায় ভোগান্তির সম্মুখীন হন। পাইলসের রোগীরা পায়ুপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ, পায়ুপথ ফুলে যাওয়া, ব্যথা অনুভব করা, পায়ুপথ দিয়ে পাইলস বেরিয়ে আসা, মলদ্বারের চারপাশে চুলকানোসহ বিভিন্ন উপসর্গে পীড়িত হন। উপসর্গগুলো দীর্ঘস্থায়ী হলে অথবা অনেক সময়ে উপসর্গগুলো ত্বরিতভাবে মারাত্মক আকার ধারণ করলে এ জটিলতা রোগীর জীবনে হুমকির সৃষ্টি করতে পারে। তাই পাইলস উপসর্গ সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। পাইলস পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে কিনা তার ওপর নির্ভর করে পাইলসকে ৪ ধাপে ভাগ করা হয়ে থাকে এবং পাইলস চিকিৎসা পদ্ধতি বহুলাংশে এই মাত্রা বিভেদের ওপর নির্ভরশীল।
পায়ুপথে রক্তক্ষরণ প্রথম ডিগ্রি/মাত্রা পাইলসের বৈশিষ্ট্য, এই মাত্রার পাইলস কখনোই পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে না। দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাত্রা পাইলস পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে মল ত্যাগ করার সময়ে। কিন্তু মল ত্যাগ সম্পন্নের পর দ্বিতীয় মাত্রার ক্ষেত্রে নিজ থেকেই মলদ্বারের ভেতরে চলে যায় এবং তৃতীয় মাত্রা পাইলসের ক্ষেত্রে রোগীকে অঙ্গুলি দ্বারা চাপ দিয়ে পুনরায় মলদ্বারের ভেতরে প্রতিস্থাপন করতে হয়।
লংগো অপারেশন
১৯৯৩ সালে ইতালির প্যালেরমো বিশ্ববিদ্যালয়ের শল্য বিভাগের অধ্যাপক ডা. অ্যান্টোনিও লংগো নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে মলদ্বারে ক্ষত না করে, স্কিন অথবা মাংস না কেটে পাইলসের অত্যাধুনিক অপারেশন আবিষ্কার করেন। এটিকেই পাইলসের জনপ্রিয় লংগো অপারেশন বলা হয়। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও এ চিকিৎসা বেশ জনপ্রিয়। আমার এখানে রোগীরা এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে অনেক ভালো আছে। এই অত্যাধুনিক পদ্ধতি ল্ডস্ট্যাপলেডহেমোর হাইডেক্টটমিল্ফ অথবা স্ট্যাপ লেডহেমোর হাইডোপেঙিল্ফ নামকরণে ভূষিত। এটি একটি অস্ত্রোপচার-পদ্ধতি যা অস্বাভাবিকভাবে বর্ধিত হিমোরোডিয়াল (পাইলস) টিস্যু অপসারণ করে, তারপর অবশিষ্ট হেমোরোডিয়াল (পাইলস) টিস্যুকে তার স্বাভাবিক শারীরিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনে। এতে করে পাইলসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরে আসে এবং রোগী উপসর্গমুক্ত হয়। অধ্যাপক ডা. অ্যান্টোনিও লংগো বিশ্বাস করেন যে পায়ুপথ থেকে বেরিয়ে আসা পাইলসকে ঝুলেপড়া মাংসপিণ্ডের সঙ্গে তুলনা চলে। কোষ্ঠকাঠিন্য, গর্ভাবস্থা এবং অন্যান্য কারণে উপর্যুপরি আঘাতে পাইলসের পরিপোষক বন্ধনীগুলো দুর্বল হতে শুরু করে সঙ্গে সঙ্গে পাইলসগুলোও ঝুলে পড়তে থাকে। তখন সামান্য ঘর্ষণে পাইলসের মধ্যকার শিরা থেকে রক্ত ঝরা শুরু হয়, যে রক্তের পরিমাণ অল্প থেকে প্রচুর হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
অধ্যাপক লংগো যে পদ্ধতি ব্যবহারে সাফল্য অর্জন করেছেন সে পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ঝুলেপড়া পাইলসকে আগের স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়া এবং পাইলসের রক্ত সঞ্চালনকে বাধাগ্রস্ত করে ফুলে যাওয়া রক্তনালিগুলোকে শুকিয়ে দেয়া হয়। পাইলসের স্বাভাবিক কার্যকলাপ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং রোগী উপসর্গমুক্ত হয়। যে অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে অপারেশন করা হয় সে যন্ত্র মলদ্বারের বাইরে কোনো কাটাছেঁড়া করে না। কিন্তু মলদ্বারের ভেতরে পায়ুপথ থেকে প্রায় দেড় ইঞ্চি ওপরে একটা অংশ চক্রাকারে কেটে নিয়ে আসে এবং একইসঙ্গে কাটা জায়গার প্রান্ত টাইটেনিয়াম দ্বারা তৈরি সূক্ষ্ম স্টেপেল দিয়ে জোড়া দেয়া হয়। যে স্থানে কাটা ও জোড়া দেয়া হয় সেখানে ব্যথার স্নায়ু/পেইন ফাইবার থাকে না, যার ফলে অপারেশনের পর রোগী ব্যথাহীন থাকে অথবা যৎসামান্য ব্যথা অনুভূত হয়, ঘা শুকানোর প্রশ্ন আসে না এবং রোগী দ্রুত কাজে ফিরে যেতে পারে। অপারেশনের পর রোগী একইদিনে বাড়ি চলে যেতে পারে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ, কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বার: একে কমপ্লেক্স, অগ্রণী ব্যাংক ভবন, গ্রিন রোড, ঢাকা। যোগাযোগ-০১৭১২৯৬৫০০৯।