শরীর ও মন
বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস ও সুস্থতায়-এর প্রয়োজনীয়তা
ডা. মো. বখতিয়ার
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, শনিবার
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সূচনা
গত ৮ই সেপ্টেম্বর সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা ও সচেতনতার মাধ্যমে বাংলাদেশেও বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস পালিত হয়। চিকিৎসা সেবার সহযোগী পদ্ধতি হিসেবে ফিজিও থেরাপির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফিজিওথেরাপি একটি আদি চিকিৎসা পদ্ধতি। ম্যাসেজ ও ম্যানুয়াল থেরাপির মাধ্যমে প্রাচীন গ্রিসে হিপোক্রেটাস ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সূচনা করেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০ সালে চিকিৎসক হেক্টর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার একটি চেম্বার করেন, যাকে বর্তমানে হাইড্রোথেরাপি বলা হয়। ১৮৯৪ সালে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার বর্তমান ধারা অর্থাৎ ম্যানুয়াল থেরাপি, ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি, এক্সারসাইজ থেরাপি, হাইড্রোথেরাপি, ইলেক্ট্রোথেরাপি ইত্যাদি চিকিৎসার প্রবর্তন করা হয়। তবে নিউজিল্যান্ডে ১৯১৩ এবং আমেরিকাতে ১৯১৪ সালে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু হয়।
বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি শুরু
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য ১৯৭২ সালে আন্তর্জাতিক ফিজিওথেরাপিস্টদের দ্বারা বাংলাদেশে প্রথম ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সূচনা হয়। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৭৩ সালে আরআইএইচডি (বর্তমানে নিটোর) ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীনে স্নাতক ডিগ্রি চালু করে (এমবিবিএস ও বিডিএস একই অনুষদের অধিভুক্ত)। বর্তমানে নিটোর, সিআরপি, পিপলস্? ইউনিভার্সিটি, গণবিশ্ববিদ্যালয়, স্টেট কলেজ অব হেলথ সায়েন্সসহ বেশকিছু ইনস্টিটিউটে ফিজিওথেরাপি গ্র্যাজুয়েশন কোর্স চালু রয়েছে।
ফিজিওথেরাপির প্রয়োজনীয়তা
দেখা যায় শরীরের বিভিন্ন রোগের কারণে, শুধু ওষুধ সব রোগের পরিপূর্ণ সুস্থতা দিতে পারে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়, তেমনি কিছু রোগে ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে যেসব রোগের উৎস বিভিন্ন মেকানিক্যাল সমস্যা বা বয়সজনিত সমস্যা, সেসব ক্ষেত্রে ওষুধের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়। বিশেষ করে, বাত-ব্যথা, স্পোর্টস ইনজুরি, হাড়ের ক্ষয়জনিত ব্যথা, সারভাইক্যাল ও লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস, ডিস্ক প্রলেপস, অস্টিও-আরথ্রাইটিস, ফ্রোজেন সোল্ডার বা জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, প্লাস্টার বা অস্ত্রোপচার পরবর্তী জয়েন্ট স্টিফনেস, স্ট্রোকজনিত প্যারালাইসিস, ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস বা বেলস পালসি, সেরেব্রাল পালসি বা সিপি বাচ্চা ইত্যাদি। এসব রোগ হতে পরিপূর্ণ সুস্থতা লাভের জন্য ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রয়োজন।
সাধারণত যেসব রোগে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রয়োজন
- বাতের ব্যথা - কোমর ব্যথা - ঘাড় ব্যথা - হাঁটু ও গোড়ালির ব্যথা - আঘাতজনিত ব্যথা - ডিস্ক প্রলেপসজনিত ব্যথা - সায়াটিকা - হাড় ক্ষয়জনিত ব্যথা যেমন- সারভাইক্যাল ও লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস, অস্টিও-আরথ্রাইটিস। - জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া বা ফ্রোজেন সোল্ডার - প্লাস্টার বা অপারেশন পরবর্তী জয়েন্ট স্টিফনেসস - স্ট্রোকজনিত প্যারালাইসিস - স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি বা অন্য কারণে প্যারালাইসিসজনিত সমস্যা - মুখ বেঁকে যাওয়া বা ফেসিয়াল পালসি - বিভিন্ন ধরনের অপারেশন পরবর্তী সমস্যায়
আইসিইউতে ভর্তি রোগীর জন্য
- জন্মগত বাঁকা পা বা ক্লাবফিট - গাইনোকলজিক্যাল সমস্যায় সেরিব্রাল পলসি (প্রতিবন্ধী শিশু) - অ্যানকাইলজিং স্পন্ডাইলাইটিস - পারকিন্সন ডিজিজ - বার্ধক্যজনিত সমস্যা ইত্যাদি চিকিৎসার ক্ষেত্রে ও পুনর্বাসন সেবায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা অপরিসীম।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি
প্রথমে ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর রোগের ইতিহাস শোনেন তারপর প্রয়োজনে ফিজিক্যাল টেস্ট, ফিজিওথেরাপিউটিক স্পেশাল টেস্ট, বিভিন্ন রেডিওলজিক্যাল টেস্ট এবং প্যাথলজিক্যাল টেস্টের ডায়াগনোসিস করে থাকেন এবং সেই অনুযায়ী নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে ফিজিওথেরাপি সেবা করে থাকেন। যেমন- - ম্যানুয়াল থেরাপি - ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি - মোবিলাইজেশন - মুভমেন্ট উইথ মোবিলাইজেশন - থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ - ইনফিলট্রেশন বা জয়েন্ট ইনজেকশন - পশ্চারাল এডুকেশন - আরগোনমিক্যাল কন্সালটেন্সি - হাইড্রোথেরাপি - ইলেকট্রোথেরাপি বা অত্যাধুনিক মেশিনের সাহায্যে চিকিৎসা (যেমন: UST, SWD, IFT, MWD, TENS, IRR, Auto-Traction ইত্যাদি) আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধও ব্যবহার করতে হয়।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা বদরুদজোদা মডার্ণ হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।