কলকাতা কথকতা
অতনু-অভিষেক হত্যার নেপথ্যে...
বিশেষ সংবাদদাতা, কলকাতা
(২ বছর আগে) ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার, ১২:১২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন

সঞ্জীব-তীর্থঙ্করকে মনে আছে? মনে না থাকারই কথা। বারাকপুরের এই দুই কিশোরের ক্ষতবিক্ষত, মুণ্ডুহীন দেহ পড়েছিল পাণ্ডুয়া রেলস্টেশনের রেল ট্র্যাকের ওপর। তদানীন্তন বাম সরকারের পুলিশ ১৯৮৩ সালের ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রবল প্রতিরোধে প্রমাণ হয়, তীর্থঙ্কর আর সঞ্জীবকে খুন করা হয়েছিল। সে এক অন্য কাহিনী। এবার গত ২২শে আগস্ট সঞ্জীব-তীর্থঙ্করের মতোই দুই কিশোরের লাশ পাওয়া গেল তাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে বাসন্তী হাইওয়েতে। এবার আর আত্মহত্যার চেষ্টা বলে পুলিশ ঘটনাটিকে এড়িয়ে যেতে পারেনি। কারণ বাগুইহাটি থানায় যখন মিসিং ডায়েরি করতে যায় অতনু-অভিষেকের পরিবার তখন ডায়েরি তো নেয়াই হয়নি, বলা হয় দেখুন গিয়ে ছেলেরা দিঘায় বেড়াতে গেছে কিনা। তারপর তাদের লাশ মেলে বাসন্তী হাইওয়েতে। অতনু কৃষ্ণপুর হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। গেম খেলতে উস্তাদ। পাবজি থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন দুরূহ গেমের সলিউশন তার পকেটে থাকে। এই সলিউশন বিক্রি করে সে মোটা টাকা হাতায়। তার দূর-সম্পর্কের আত্মীয় অভিষেক সাঁতরা চিত্তরঞ্জন হিন্দু বিদ্যাপীঠের ছাত্র। থাকে অর্জুনপুরে। দুজনে হরিহর আত্মা। এরই মাঝখানে আসে খলনায়ক সত্যেন্দ্র চৌধুরী। ৯ বছর আগে বিহার থেকে এসে মোটরবাইকের কারবার ফেঁদে বসে সে। সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক বিক্রি করে সত্যেন্দ্র। টাকা জমিয়ে বাইক কেনার চেষ্টায় ছিল অতনু। পঞ্চাশ হাজার টাকার মতো সে দেয়ও সত্যেন্দ্রকে। কিন্তু,বাইক আর পায়নি সে। চারজন ভাড়াটে খুনিকে জোগাড় করে সত্যেন্দ্র। অভিষেক বসু, শামীম আলি, সাহিল মোল্লা এবং দিব্যেন্দু দাস নামের এই চার ভাড়াটে খুনি বাসন্তী হাইওয়েতে একটি গাড়িতে নিয়ে যায় এই দুজনকে। সেখানে গাড়ির মধ্যে সত্যেন্দ্র হত্যা করে দুজনকে। লাশ ফেলে দেয়া হয় বাসন্তী হাইওয়েতে। কেউ কেউ বলছেন সত্যেন্দ্রর স্ত্রী পূজার সঙ্গে নাকি অবৈধ সম্পর্ক ছিল অতনুর। তাই বাইক কেনার টাকা মেরে প্রতিহিংসায় অতনু-অভিষেককে খুন করেছে সত্যেন্দ্র। সে এখন ফেরার। তার খোঁজে মানহান্ট শুরু হয়েছে ভারতজুড়ে। পূজা অজ্ঞাত স্থানে চলে গিয়েছে। জনতার প্রবল চাপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা ঘটনার তদন্ত সিআইডির হাতে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বাগুইহাটি থানার আইসি এবং সেকেন্ড অফিসারকে ক্লোজ করা হয়েছে। ছেড়ে দিয়ে রাজ্য সরকার তেড়ে ধরেছে ঘটনাটিকে। সঞ্জীব-তীর্থঙ্করের বেলাতেও তাই হয়েছিল। সেবার অপরাধীরা সাজা পেয়েছিল সংবাদ মাধ্যম তৎপর হওয়ায়। এবারও কী তাই হবে! সময় এই প্রশ্নের জবাব দেবে!