ঢাকা, ১২ মে ২০২৫, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

ইউরোপের বাজারে দাপুটে অবস্থানে বাংলাদেশি পোশাক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৯ আগস্ট ২০২২, সোমবার
mzamin

ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক খাতের দাপুটে অবস্থান অব্যাহত রয়েছে। পোশাকের এই বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। বাজারটিতে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির দিক থেকেও বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। সারাবিশ্ব থেকে যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৪ শতাংশ, সেখানে এই বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ, যা প্রায় ৯.৫৮ বিলিয়ন ডলার। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সময়কালের ব্যবধানে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ‘ইউরোস্ট্যাট’-এর এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। 

ইউরোস্ট্যাট’র তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৪.৩৭ শতাংশ। চীন থেকে রপ্তানি বেড়েছে ২০.৬৭ শতাংশ, বাংলাদেশ থেকে ৪৪.৯৫ শতাংশ, তুর্কি থেকে ২০.৭০ শতাংশ ও ভিয়েতনাম থেকে ২২ শতাংশ। 

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নে ৪৪.৯৫ শতাংশ পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। মাসভিত্তিক তথ্যে জানুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি ৪৬ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ২৭ শতাংশ, মার্চে ৫৩ শতাংশ, এপ্রিলে ৩৫ ও মে মাসে ৬২ শতাংশ। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৫৮.২৯ শতাংশ এবং ২০১৯ সালের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ২৭ শতাংশ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উল্লিখিত সময়ে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমদানির পরিমাণ ৪৪.৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯.৫৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে তাদের বৈশ্বিক পোশাক আমদানি ২৪.৩৭ শতাংশ বেড়েছে। চীন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক আমদানি বছরে ২০.৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১০.১৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। 
উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধিসহ অন্যান্য দেশগুলো হলো- কম্বোডিয়া ৩২.৬৮ শতাংশ, পাকিস্তান ২৯.২৮ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ২৫ শতাংশ ৩৬ শতাংশ, ভিয়েতনাম ২২.৩৪ শতাংশ এবং মরক্কো ২০.০৫ শতাংশ।

পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক ও মুখপাত্র মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, এখন পর্যন্ত ইইউ’র আমদানির পরিসংখ্যান ইইউ বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের ভালো অবস্থান নির্দেশ করে। কিন্তু সামপ্রতিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে, খুচরা বিক্রেতারা ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি বিশ্ববাজারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সংগ্রাম করছে। অনেক ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের খুচরা বিক্রয় হ্রাস পেয়েছে, যা তাদের ইনভেন্টরি স্টক বাড়িয়েছে। তবে এই সমস্ত কারণ বিবেচনা করে, আগামী মাসগুলোতে ইইউ বাজারে আমাদের রপ্তানি হ্রাসের প্রবণতা দেখা যেতে পারে।
বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, এই অর্ডারগুলো সব আগের। গত মাসে আমাদের রপ্তানি প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারে উঠে গিয়েছিল। এখন সেটি নিচের দিকে নামছে। এই মাসে রপ্তানি আয় হতে পারে প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন ডলার। ইউরোপের বাজারের যে পরিসংখ্যান দেখা যাচ্ছে সেটি আগের অর্ডার হওয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান ভালো দেখাচ্ছে।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) তথ্য প্রকাশ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৮৮ কোটি ৭৯ লাখ ৮ হাজার ডলার। যা শতাংশের হিসাবে ৬০.৩০ শতাংশ। ডেটা অনুসারে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৫০১ কোটি ৯০ লাখ ৭ হাজার ডলারের। ২০২১ সালের একই সময়ে পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৩১৩ কোটি ১০ লাখ ৯ হাজার ডলারের। সে হিসাবে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের একই সময়ে পোশাক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৮৮ কোটি ৭৯ লাখ ৮ হাজার ডলারের।

এদিকে আগস্টের প্রথম ২২ দিনে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে বার্ষিক ৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, এসময় রপ্তানি হয়েছে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কবলে বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রধান রপ্তানি গন্তব্যের দেশগুলো। এর মধ্যেই এ অগ্রগতি হয়েছে। 
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, প্রথমবারের মতো একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরে। এরমধ্যে ৯ বিলিয়ন ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আগামী মাসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, কারণ এই মাস থেকে প্রায় প্রতিটি ক্রেতাই অর্ডার স্থগিত করছেন। তিনি বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমার কারখানা অর্ডারে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু, বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারানোর ফলে আগস্টের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরের ৩০ শতাংশ অর্ডার স্থগিত হয়ে গেছে।

 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status