ঢাকা, ৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

অনলাইন

রাখাইনের ঘাঁটিগুলোতে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করছে জান্তা সরকার

মানবজমিন ডিজিটাল

(৭ ঘন্টা আগে) ৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ৪:১১ অপরাহ্ন

mzamin

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কিয়াউকফিউ শহরে জান্তা বাহিনী ও জাতিগত আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের কারণে খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। প্রতি ৫০ কেজি বস্তা চালের দাম প্রায় ৫,০০,০০০ কিয়াটে (প্রায় ১১০ মার্কিন ডলার) পৌঁছেছে। ২০২৪ সালের গোড়ার দিকে শাসকগোষ্ঠী শহরটি অবরোধ করে। শুধুমাত্র সামরিক-অনুমোদিত পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে বাইরে থেকে চাল, খাদ্য এবং জ্বালানি আনার অনুমতি দেয়। তাই বাসিন্দারা তাদের মৌলিক চাহিদার জন্য সম্পূর্ণরূপে এই চালানের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু যুদ্ধ যতই ঘনিয়ে আসছে, পণ্যবাহী জাহাজ আসা বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা প্রায় এক মাস ধরে চালের ঘাটতি এবং দাম বৃদ্ধির সম্মুখীন হচ্ছে। ইয়াঙ্গুন থেকে পাঠানো প্রিমিয়াম চালের দাম প্রতি বস্তা প্রায় ২০০,০০০ কিয়াট থেকে বেড়ে ৪৮০,০০০ -৫০০,০০০ কিয়াটে পৌঁছেছে, যেখানে নিম্নমানের চালের দাম এখন প্রতি বস্তা প্রায় ৩৫০,০০০ কিয়াট। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। এক লিটার রান্নার তেলের দাম প্রায় ২০,০০০ কিয়াট, একটি ডিমের দাম ১,৮০০ কিয়াট এবং একটি ভিস বা ১.৬ কেজি পেঁয়াজের দাম ১০,০০০ কিয়াটেরও বেশি।

কিয়াকফিউ শহরের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘চালের খুব অভাব। দামের কারণে আপনি এটি কিনতেও পারবেন না। তাদের কাছে যা আছে তা মানুষ খুব হিসাব করে খাচ্ছে। দৈনিক মজুরিতে যাদের দিন গুজরান হয় তারা হাফিয়ে উঠেছেন। কারণ সব কিছুর দাম আকাশছোঁয়া। গ্রামাঞ্চল থেকে কোনও চাল আসছে না, এবং সামরিক পণ্যবাহী জাহাজও অনেক দিন ধরে আসেনি।’

কিছু নিম্ন আয়ের এবং দৈনিক মজুরি উপার্জনকারী মানুষ কনজি খেয়ে বেঁচে আছেন, যা সাধারণত নিম্নমানের বা ভাঙা চাল দিয়ে তৈরি। একজন স্থানীয় নারী বলেন, ‘এমন কিছু লোক আছে যারা এখনও চাল কিনে খেতে পারে, কিন্তু অনেকেই ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। কেউ দিনে এক বেলাই খাচ্ছে, আবার কেউ কেউ প্রতিবেশীর কাছ থেকে চাল চেয়ে নিয়ে কোনোভাবে ক্ষুধা মেটাচ্ছে।’

সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, সরকার কয়েক মাস ধরে দানিয়াবাদিসহ নিজস্ব কিছু ঘাঁটির জন্য প্রচুর পরিমাণে চাল এবং খাদ্য সরবরাহ মজুদ করে আসছে। আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘সামরিক বাহিনী তাদের জাহাজ থেকে সরবরাহ মজুদ করছে কিন্তু বেসামরিক নাগরিকদের জন্য সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে। তারা কয়েক সপ্তাহে মাত্র একটি জাহাজ নিয়ে আসে। এই কারণেই জিনিসপত্রের অভাব রয়েছে এবং দাম ঊর্ধ্বমুখী।’

সিত্তে, যেখানে অবরোধ চলছে, সেখানে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। চালের দাম প্রতি বস্তা ২০০,০০০ থেকে ২৫০,০০০ কিয়াটে বেড়েছে। অন্যদিকে জ্বালানি কাঠ, কয়লা, মাংস এবং মাছের দামও আকাশছোঁয়া। এক বস্তা কাঠকয়লার দাম আগে প্রায় ১০,০০০ কিয়াট ছিল, কিন্তু এখন তা প্রায় ৫০,০০০ কিয়াট।

শহরে আটকে পড়া বাসিন্দাদের মতে, মাংসের দাম প্রায় ৭০,০০০ কিয়াট এবং মাছের দাম যাচ্ছে ১,০০,০০০ কিয়াট। অন্যদিকে, আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত শহর ও গ্রামে কৃষকরা এখনও ফসল চাষ করতে পারছেন।  

স্থানীয় সূত্র অনুসারে, চাল স্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাখাইন রাজ্যের সাথে দেশের অন্যান্য অংশের সংযোগকারী সমস্ত বাণিজ্য পথ বন্ধ করে দিয়েছে শাসকগোষ্ঠী। এরপর যখন রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকা দখলে নেয়, তখন কিছু সীমান্ত বাণিজ্য পথ আবার খুলে যায় ভারতের সঙ্গে এবং বাংলাদেশের সঙ্গেও। এর ফলে স্থানীয়দের ওপর আর্থিক চাপ কিছুটা হলেও কমেছে। জান্তা সরকার সকল প্রবেশ ও বহির্গমন পথ এবং বন্দরে চেকপয়েন্ট স্থাপন করেছে এবং মাঝখানে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রেখেছে যার ফলে কয়েক ডজন মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে।

সূত্রের খবর, সিত্তে ও কিয়াউকফিউয়ে কর্মরত সরকারি কর্মচারীরাও ইয়াঙ্গুনে যেতে পারছেন না—তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সেখানেই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। জান্তা বাহিনী সিত্তের আশেপাশের গ্রামাঞ্চলের মানুষদের জোর করে শহরে স্থানান্তর করেছে, যা রাখাইন সম্প্রদায় ও মানবাধিকার কর্মীরা কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন।

তাদের মতে, এটি সাধারণ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করার কৌশল। বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার মানুষ শহরে আটকে আছেন, যারা প্রায়ই আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বা মঠে আশ্রয় নিচ্ছেন।

২০২৪ সালে যে বাইয়ান ফিউ গ্রামে সামরিক বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল, সেখান থেকে জোরপূর্বক স্থানান্তরিত এক নারী বলেন, ‘আমরা গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে যেতে চাই, যেখানে আমরা অন্তত কিছু কাজ খুঁজে পেতে পারি। কিন্তু এখন আমরা শহরে আটকা পড়ে আছি, আমাদের কোন কাজ নেই, কোন আয় নেই এবং ক্রমবর্ধমানভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলেছে।’

মানবাধিকার কর্মীরা জান্তার এই জোরপূর্বক স্থানান্তরকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে নিন্দা করেছেন। আরাকান মানবাধিকার রক্ষাকারী ও প্রচারক সমিতির পরিচালক উ মিয়াত তুন বলেন, ‘কে মারা গেল তাতে শাসকগোষ্ঠীর কিছু যায় আসে না। সিত্তে ও কিয়াকফিউতে আটকে পড়া মানুষরা সেখান থেকে বের হতে পারছে না। তাদের মানব ঢালের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’

ইতিমধ্যে, সরকার কিয়াকফিউতে প্রতিদিন অভিযান এবং গ্রেপ্তার চালাচ্ছে, গত মাসেই কমপক্ষে চারজন বেসামরিক নাগরিককে আটক করা হয়েছে। এখন আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের ১৪টি টাউনশিপ নিয়ন্ত্রণ করছে এবং বাকি তিনটি—সিত্তে, কিয়াউকফিউ ও ম্রাউকউ—এর দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।

সূত্র : দ্য ইরাবতী

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

নবীজীর সাহাবীদের নিয়ে কটূক্তি/ মৌলভীবাজারে নারী আইনজীবী আটক

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status