দেশ বিদেশ
পদন্নোতির তালিকায় বিতর্কিত প্রকৌশলী জামানুরের নাম, ক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার
(৭ ঘন্টা আগে) ৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ৯:২৪ অপরাহ্ন

ধর্ষণ-দুর্নীতিসহ নানা দায়ে শাস্তি ভোগ করা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জামানুর রহমান পদন্নোতির জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। গত মাসের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক পদন্নতির তালিকার ৩ নম্বরে নাম রয়েছে তার।
সূত্র জানায়, পদোন্নতির পূর্বে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রেডেশন তালিকা প্রস্তুত করার কথা থাকলেও, ওই গ্রেডেশন তালিকা প্রস্তুত না করেই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর (গ্রেড-৪) শূন্য পদে ২৮ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতির প্রস্তাব দিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর আবেদন করেছিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সদ্যসাবেক প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ। ওই তালিকায় আছে প্রকৌশলী জামানুর রহমানের নাম। যার বিরুদ্ধে ছিল তরুণীকে আটকে রেখে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের অভিযোগ, প্রকল্পকাজ শেষ না করে অর্থ আত্মসাৎ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়াসহ নানা অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। মানবন্ধনও হয়েছে। একসব কাণ্ডের পরও পদন্নোতির তালিকায় তার নাম দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলছেন সাবেক প্রধান প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করে পদন্নোতির সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার নাম উঠিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কয়েকজন বলেন, প্রকৌশলী জামানুর রহমান পাবনা সুজানগর পৌরসভায় আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ ও পানি নিষ্কাশনের প্রকল্পের কাজ শেষ না করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। তার ওই অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনেও প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানি সরবরাহ-১ শাখার স্মারক নং ৬৪৪ (তারিখ: ১৭-১০-২০২২) মাধ্যমে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। গত ১৩ই নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদনেও জামানুর রহমানের দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে। দুদকের অভিযোগ পত্রেও দেখা যায় যে, পাবনা জেলার সুজানগর, ভাঙ্গুরা ও চাটমোহর পৌরসভার পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নপূর্বক চাটমোহর পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর থেকে আজ পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে পানি সরবরাহ করা হয়নি এবং প্রকল্পটির আওতামুক্ত নলকূপগুলো তালাবদ্ধ ও অকেজো অবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরে গত ৮ সেপ্টেম্বর দাখিলকৃত তিন পৃষ্ঠার অভিযোগে ২০ নম্বর দফায় এই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমানের নারী লিপ্সুতা উল্লেখ করা হয়।
তারা বলেন, প্রকৌশলী জামানুর রহমানের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে আটকে রেখে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। ওই ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা জামানুরের অধীনে কাজ করতেন। সেই সুবাদে জামানুরের বাসায় আসা যাওয়া ছিল তাদের। ২০১৫ সালে ওই তরুণী ডিপ্লোমা পাস করে ডুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর একদিন হঠাৎ ফোন করে তাকে মোহাম্মদপুর রাজধানী হোটেলে যেতে বলে জামান। এরপর নানা প্রলোভনে জোরপূর্বক তাকে নির্যাতন করে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে, চাকরি দেয়ার কথা বলে তার বাবা-মাকে ম্যানেজ করে ’১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ওই মেয়েকে ধর্ষণ ও মানসিক নির্যাতন করে জামানুর। একপর্যায়ে ওই তরুণী মিথ্যা প্রলোভন বুঝতে পেরে বিষয়টি সকলকে জানাতে চাইলে তাকে ইনজেকশন দিয়ে মোবাইল, আইডি কার্ড, সার্টিফিকেট, পরীক্ষার এডমিট ও ডকুমেন্ট ছিনিয়ে নেয় জামানুর রহমান তার লোকজন। ওই নারীকে শিকল দিয়ে পর্যন্ত বেঁধে রাখা হয়। এররপর ক্ষমতার দাপটে মেয়েটিকে পাগল তকমা দিয়ে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করান। এসব ঘটনার প্রতিবাদে রাজশাহী প্রেসক্লাব ও সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট চত্বরে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। এত অভিযোগ ও অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেও তাকে নির্দেশ দেখিয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে এখন পদোন্নতি দেয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
এসব বিষয়ে জানতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জামানুর রহমানের সঙ্গে একাধিক বার চেষ্টার পরও তার সাক্ষাৎ পাওয়া সম্ভব হয়নি। তার ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।