বিশ্বজমিন
ল্যানচেটের গবেষণা: ইউএসএইডের বাজেট কর্তন
৫ বছরের মধ্যে আরও ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে
মানবজমিন ডেস্ক
(১২ ঘন্টা আগে) ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৬:১৯ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএইডের বাজেট ব্যাপকভাবে কমানো হয়েছে। একই সঙ্গে এজেন্সিটি ভেঙে ফেলার সম্ভাব্য উদ্যোগের কারণে ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ মারা যেতে পারেন। এর মধ্যে প্রায় ৪৫ লাখ শিশুর বয়স পাঁচ বছরের নিচে। মঙ্গলবার প্রকাশিত বৃটিশ প্রভাবশালী দ্য ল্যানসেট জার্নালের এক গবেষণায় এমন ভয়াবহ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি ও রয়টার্স। গবেষণার সহলেখক এবং বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের গবেষক দাভিদে রাসেলা বলেন, এই ধরনের ধাক্কা অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য একটি বৈশ্বিক মহামারী কিংবা বড় আকারের যুদ্ধের মতোই বিধ্বংসী হবে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বৈদেশিক সহায়তার বাজেট হ্রাস করার উদ্যোগ নিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের মতে, এটি ‘অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর’ অংশ। কিন্তু মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও দাতব্য সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, এই কাটছাঁট বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে আফ্রিকান দেশসহ নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে, যেগুলো ইউএসএইড-এর ওপর নির্ভরশীল।
গবেষণার প্রাপ্ত তথ্যে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে ইউএসএইডের মাধ্যমে পরিচালিত স্বাস্থ্য কার্যক্রম প্রায় ৯ কোটি ১০ লাখ মৃত্যু রোধ করেছে। এর মধ্যে ৩ কোটির বেশি শিশু। কিন্তু ২০২৫ সালের শুরুর দিকের বাজেট কাটছাঁট ও কর্মসূচি বাতিল অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এর মধ্যে ৪৫ লক্ষ শিশু পাঁচ বছর বয়সের নিচে।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সহায়তা দাতা দেশ। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের মোট সহায়তার ৩৮ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে থাকে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বৈদেশিক সহায়তায় ৬১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এর অর্ধেকের বেশি ইউএসএইড এর মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মার্চে ঘোষণা দেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন ইউএসএইড-এর ৮০ শতাংশের বেশি কার্যক্রম বাতিল করেছে। তিনি জানান, বাকি থাকা প্রায় ১,০০০টি প্রোগ্রাম এখন কংগ্রেসের সাথে পরামর্শ করে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অধীনে চালানো হবে।
গবেষণার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, আমাদের হিসাব বলছে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ঘোষিত ও কার্যকর হওয়া হঠাৎ বাজেট ছাঁটাই পাল্টানো না হলে, ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বিপুল সংখ্যক ‘এড়ানো সম্ভব’ এমন মৃত্যু ঘটবে। এই গবেষণার প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে উদ্বেগজনক হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত বা দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাগুলো- যেমন গাজা, ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান কিংবা হাইতির মতো অঞ্চল। এ দেশগুলো ইউএসএইড-এর অনুদান জীবন রক্ষাকারী খাদ্য, পানি, চিকিৎসা ও টিকাদান কর্মসূচির মূল চালিকাশক্তি। এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে, যুক্তরাষ্ট্র তার ঐতিহাসিক দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছে কিনা? আর সেই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্তে কতটা অনড় থাকে তার ওপর।