শেষের পাতা
সিলেটে হেফাজতে ইসলামে বিরোধ পাল্টাপাল্টি কমিটি
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৫ জুন ২০২৫, বুধবার
গেল কয়েকদিন ধরে সিলেটে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কমিটি চলছে। হচ্ছে বৈঠকের পর বৈঠকও। সিলেট জেলা ও নগর কমিটি গঠনকে ঘিরে দলের ভেতরে বিরোধের কারণে ঘটছে নানা ঘটনা। তবে বিরোধের নিষ্পত্তি শেষ হয়েও হলো না। বরং দিন দিন সংকট আরও তীব্র হয়েছে। গত সোমবার কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে একাংশের কমিটি ঘোষণার পর মঙ্গলবার সিলেটের নেতারা আরেকটি কমিটি গঠন করেছেন। এখন সিলেটে হেফাজতের দুই কমিটি। দু’পক্ষই নিজেদের বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সিলেট হচ্ছে আলেম-ওলামাদের অঞ্চল। পূর্ব সিলেটে জমিয়তে ইসলামের শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে। এর বাইরে খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ ইসলামী রাজনৈতিক দলের শক্তিশালী ভোট ব্যাংকও অবস্থান রয়েছে। হেফাজত নেতারা জানিয়েছেন- সিলেটে হেফাজতের আমীর ছিলেন প্রখ্যাত আলেম মরহুম মহিব্বুল হক গাছবাড়ি হুজুর। তার মৃত্যুর পর আলেম সমাজে মুরুব্বি সংকট চলছে। সব নেতাদের একসঙ্গে করেই চলতেন গাছবাড়ির হুজুর। তার ডাকে সবাই এক কাতারে এসে ঐক্যবদ্ধ হতেন। ফলে সিলেটের নানা সংকটে গাছবাড়ি হুজুর মুখ্য ভূমিকা পালন করতেন। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনের সময় সিলেটে গাছবাড়ি হুজুরের ডাকে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালন হয়েছে। তখন বিরোধ ছিল না। কিন্তু তার মৃত্যুর পর যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে সেটি এখন ধুঁকে ধুঁকে খাচ্ছে হেফাজত নেতাদের। হেফাজতে ইসলামে রয়েছেন ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলের নেতারা। ক’দিন আগে যখন সিলেটে কমিটি গঠনের জন্য তোড়জোড় শুরু করা হয় তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা কমিটিতে আধিপত্য বজায় রাখতে মুখোমুখি অবস্থান নেন।
নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকা হেফাজত নেতাদের মতে; ৫ই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে সিলেট জেলা ও নগর হেফাজতের নতুন কমিটি গঠনের জন্য কথাবার্তা শুরু হয়। সিলেটের বেশির ভাগ নেতারা সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কেন্দ্রের কাছে জোরালো দাবি জানান। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে কেন্দ্র সাড়া দেয়ার কারণে প্রথমে সিলেটের নেতারা একাধিক বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে নেতারা এক কাতারে আসার পরিবর্তে আরও বেশি বিরোধে জড়ান। শেষ মুহূর্তে এতে হস্তক্ষেপ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কমিটি গঠন করতে সোমবার সিলেটে আসেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান ইসলামাবাদী, অর্থসম্পাদক মুফতি মুনির হোসাইন কাসেমী। সিলেটে আসার পর বিরোধ আরও চাঙ্গা হলে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সিলেটে নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। নগরীর শামীমাবাদ মাদ্রাসায় গত সোমবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওই বৈঠক হয়। তবে শেষ পর্যন্ত বৈঠকে সর্বসম্মতি ক্রমে হেফাজতে ইসলাম সিলেট জেলা ও মহানগরের কমিটি গঠন করা হয়। নেতারা জানিয়েছেন- হেফাজতে ইসলাম সিলেট মহানগরের সভাপতি হিসেবে সিলেট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুস্তাক আহমেদ খান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দরগাহে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আসজাদ আহমেদকে নির্বাচিত করা হয়। একইসঙ্গে জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে খেলাফত মজলিস নেতা মাওলানা রেজাউল করিম জালালী ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জমিয়ত নেতা মাওলানা, আযাদ দ্বীনী এদারার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা ইউসুফ আহমেদ খাদিমানিকে নির্বাচিত করা হয়। কমিটি গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন হেফাজতে ইসলামের সিলেট মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মালেক চৌধুরী। পূর্ণাঙ্গ কমিটি পরে করা হবে। এদিকে কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেট পৌঁছেন।
মহানগর সমন্বয় কমিটি সোবহানীঘাটস্থ এদারা ভবনে সভার আহ্বান করে। সেখানে উপস্থিত হন অনেকে। কিন্তু হেফাজত নেতা মাওলানা রেজাউল করিম জালালী দরগাহ মাদ্রাসায় বসার জন্য সমন্বয় কমিটির কয়েকজনকে দাওয়াত করেন। এতে দেখা দেয় বিরোধ। এ অবস্থায় জমিয়ত নেতা মাওলানা সৈয়দ শামীম আহমদ তার মাদ্রাসায় (শামীমাবাদ) বসার অনুরোধ করেন। নিরপেক্ষ স্থান হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতারা উভয়পক্ষকে নিয়ে শামীমাবাদের মাদ্রাসায় বৈঠকে বসেন। বৈঠকে হেফাজতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস (উভয়পক্ষ), নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামি ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন মাদ্রাসার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সিলেটে হেফাজতের কমিটি গঠন রাতে যখন প্রচার হয় তখন তোলপাড় শুরু হয়। একাংশের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মঙ্গলবার তারা নগরের আম্বরখানায় একটি হোটেলে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তারা হেফাজতে ইসলামের পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন। বেলা আড়াইটার দিকে মাওলানা তোফায়েল আহমদ ওসমানী তার ফেসবুক আইডি’র একটি স্ট্যাটাসে একটি কমিটি ঘোষণা করেন। এতে তারা বৈঠকের ছবিও পোস্ট করেন। ওই পোস্টে তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সিলেট মহানগরীর নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি হিসেবে আলহাজ মাওলানা শায়খ নাসির উদ্দিন, সিনিয়র সভাপতি হাফিজ মাওলানা খলিলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদীকে অভিনন্দন জানান। বিকালে কমিটির সভাপতি শায়খ নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন- তারা জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনের জন্য বসেছিলেন। সেখানে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আরেকটি কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। সেটি খুব দ্রুতই করা হবে বলে জানান তিনি।