বাংলারজমিন
মাদকাসক্ত ছেলেকে হত্যার পর লাশ ড্রেনে ফেলে দেন বাবা-মা
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে
২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার
একের পর এক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মাদকাসক্ত একমাত্র ছেলেকে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে ড্রেনে ফেলে দিয়েছেন বাবা। হত্যার সময় স্বামীকে সহযোগিতা করেন স্ত্রী। মজার বিষয় হলো- এ ঘটনার পর ছেলেকে হত্যার অভিযোগ এনে বাবাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলাও করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করে এবং নিহত জনি সরকারের বাবা ও মা’কে আটক করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা ছেলেকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি হন। পরে বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশ তাদের আদালতে পাঠায়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিনুজ্জামান জানান, ফতুল্লার লাল খাঁ শিহাচর এলাকার দুলাল পুলিশের বাড়িতে ভাড়া বাসায় স্ত্রী অসিতা রানী সরকার, একমাত্র ছেলে জনি সরকার ও দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছিলেন করুণা সরকার। খান সাহেব ওসমান আলী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নৈশপ্রহরীর চাকরি করেন তিনি। ছেলে জনি সরকার স্থানীয় মাদকাসক্ত ও বখাটে যুবকদের সঙ্গে চলাফেরা করে নিজেও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকের টাকার জন্য প্রায় সময় জনি তার বাবা-মা’কে মারধরসহ নানাভাবে নির্যাতন করতো। মাদকাসক্ত ছেলের অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন বাবা করুণা সরকার ও মা অসিতা রানী সরকার। তিনি বলেন, গত ১৬ই জুন রাতেও জনি মাদকের টাকার জন্য তার বাবা ও মা’কে মারধর করে। এরপর রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে জনি সরকার। ঘুমন্ত অবস্থায় রুটি বানানোর বেলন দিয়ে জনির মাথায় ও মুখমণ্ডলে আঘাত করেন তার বাবা করুণা সরকার। একপর্যায়ে ঘুমন্ত জনির দেহ নিথর হয়ে পড়লে স্ত্রীর সহযোগিতায় হাত-পা বেঁধে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে রাতেই সড়কের পাশে ড্রেনে ফেলে দিয়ে বাসায় চলে আসেন বাবা করুণা সরকার। পরদিন ১৭ই জুন সকালে ওই ড্রেন থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় জনির লাশ উদ্ধার করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত জনির বাবা করুণা সরকার নিজেই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ফতুল্লা মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। তবে মামলার তদন্তে ও সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের এই চাঞ্চল্যকর রহস্য। পরে এই মামলায় নিহত জনির বাবা ও মা’কে বুধবার রাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা দু’জন ছেলেকে হত্যার কথা স্বীকার করে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। বিকালে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।