ঢাকা, ১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

দলিলে নাম পরিবর্তন করে ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে
২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

প্রতারক নকলনবিশ বাবুল আক্তার

ঝিনাইদহ জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের মহাফেজখানা থেকে দলিল বের করে ভাইয়ের নামের জায়গায় কাটাছেঁড়া করে বসানো হয়েছে বোনের নাম। যে কারণে বেহাত হয়েছে বড় ভাই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাদাদ কামালের নামে বাবার দেয়া অর্ধশত কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি। শৈলকুপা উপজেলার হাটফাজিলপুর বাজারে অবস্থিত এই জমির বাজারমূল্য ৫০ কোটির টাকার ঊর্ধ্বে এমন দাবি করছেন প্রতারণার শিকার হওয়া অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাদাদ কামাল। ঝিনাইদহ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবিশ বাবুল আক্তার ও দলিল লেখক মো. আল মামুনের (লাইসেন্স নং-১৭৮) যোগসাজশে বিপুল অঙ্কের টাকার মাধ্যমে ছোট ভাই প্রতারক ওয়াসিফ কামালকে এই জমি আত্মসাতে সহযোগিতা করেছেন। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৩রা জুন ঝিনাইদহ সদর সাব-রেজিস্ট্রার ও মহাফেজখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাক হোসেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সংশ্লিষ্ট ২ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। আর এতেই সামনে এসেছে এই প্রতারণা।  এদিকে এই দুর্নীতি ফাঁস হলে নড়েচড়ে বসেছে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত দুইজনকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে এবং জেলার মহেশপুর সাব-রেজিস্ট্রার মো. আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে অধিকতর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।  

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৭ই নভেম্বর শৈলকুপার হাটফাজিলপুর বাজারের বাসিন্দা এড. আহমেদ মাসুদ কামাল তার দুই ছেলে সাদাদ কামাল ও ওয়াসিফ কামালের নামে বাজারে অবস্থিত ৮৫ শতক জমি লিখে দেন। যার দলিল নং-৫৪৪৫। এই জমির ওপর রয়েছে বিপণিবিতান। ২০২৪ সালের ২৮শে আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন এড. মাসুদ কামাল। বাবার মৃত্যুর পরে বড়ভাই সাদাদ কামালের নামের অংশ আত্মসাৎ করতে ছক কষতে থাকেন ছোট ভাই ওয়াসিফ কামাল। ওয়াসিফ কামাল পেশায় আইনজীবী। তিনি ঝিনাইদহ জেলা জজ কোর্টে আইনজীবী হিসাবে কর্মরত। ওয়াসিফ কামাল ঝিনাইদহ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবিশ বাবুল আক্তার ও দলিল লেখক মো. আল মামুনকে টাকা দিয়ে রেকর্ড রুম থেকে দলিল ও বালাম বই বের করে ভাই সাদাদ কামালের নাম মুছে দিয়ে সেখানে বোন দিশা কামালের নাম লেখেন। ইনডেক্সেও নাম পরিবর্তন করে ফেলেন। বালাম বইয়ে ঘষামাজা অন্য কর্মকর্তার নজরে আসলে ধরা পড়েন নকলনবিশ বাবুল আক্তার। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে টাকার বিনিময়ে তাদের দুর্নীতির তথ্য। প্রবাসী সাদাদ কামাল ঘটনার সঠিক তদন্ত চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে মহাফেজখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সাব-রেজিস্ট্রার মোস্তাক হোসেন নকলনবিশ বাবুল আক্তার ও দলিল লেখক মো. আল মামুনের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না জানতে চেয়ে নোটিশ দিয়েছেন। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে, টেম্পারিং করে নাম পরিবর্তনের পর একটি নকলও নিয়েছেন ওয়াসিফ কামাল গং। যেটা প্রস্তুত করে দিয়েছেন নকলনবিশ বাবুল আক্তার। এ বিষয়ে বোন দিশা কামাল বলেন, তিনি এই সব বিষয়ে কিছুই জানেন না। বড় ভাই অভিযোগ করার পর আমি  বিষয়টি বাবার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে জানতে পেরেছি। দলিল ঘষামাজা হয়েছে কিনা, এটা আমার জানা নেই। এড. ওয়াসিফ কামালকে ফোন করলে তিনি বলেন, তার জমি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। ঘষামাজা করে বোনের নাম বসানোর বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেন।  

এদিকে নকলনবিশ বাবুল আক্তারের একটি ভিডিও রয়েছে মানবজমিনের প্রতিনিধির হাতে যেখানে তার স্বীকারোক্তি রয়েছে। ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি এই কাজ করেছেন। দলিল লেখক আল মামুন তাকে এই কাজ করতে বলেছেন।

সদর মহাফেজখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সাব-রেজিস্ট্রার মোস্তাক হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়ায় এই কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দলিল লেখক মো. আল মামুন ও নকলনবিশ মো. বাবুল আক্তারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য মহেশপুর সাব-রেজিস্ট্রারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী হলে তাদের  দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে। 
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

দেনমোহর কমাতে অভিনব কৌশল/ তালাকের পর আবার বিয়ে, কিছুই জানে না গৃহবধূ

প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি নেতার পরকীয়া/ রাতভর গাছে বেঁধে রাখার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status