ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

নবজাতকের বিপদ চিহ্ন

ডা. সৈয়দা নাফিজা ইসলাম
১৮ আগস্ট ২০২২, বৃহস্পতিবার
mzamin

শিশু জন্ম নেয়ার পর কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যাকে চিকিৎসকরা নবজাতকের রোগের উপসর্গ বা বিপদ চিহ্ন হিসেবে দেখে থাকেন। নবজাতকের এসব উপসর্গগুলো পরিবারের পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। নবজাতকের যেসব বিপদ চিহ্ন প্রতীয়মান বা দৃশ্যমান হয়: (১) জন্মের ১ মিনিটের মধ্যে চিৎকার করে কান্না না করা সদ্য জন্ম নেয়া শিশুটি জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই চিৎকার করে কেঁদে ওঠা স্বাভাবিক কিন্তু যদি শিশুটি কাঁদতে দেরি করে তাহলে বুঝতে হবে নবজাতকের কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে। এখানে দেরি বলতে ১ মিনিট অর্থাৎ নবজাতক ১ মিনিট পরে কান্না করেছে। তাই প্রথমেই ধরে নিতে হবে নবজাতকের ১ (এক) মিনিট পরে কান্না করা একটা স্বাভাবিক বিপদ চিহ্ন। মনে রাখতে হবে কোনো নবজাতক যদি জন্মের ১ মিনিট পরে কাঁদে তাহলে ধরে নিতে হবে যে শিশুটি জন্মগ্রহণের সময় অথবা বড় বেলায় কোনো না কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। (২) নবজাতকের শরীর নীল হয়ে যাওয়া: কোনো নবজাতকের ঠোঁট, নাকের ডগা এবং কানের লতি যদি নীল হয়ে যায় বা থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে নবজাতকটির মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন। 

দেখা যায় যে, সদ্য জন্ম নেয়া শিশুটিকে,পরিস্কার করা, ধোয়া বা মোছার ফলে তার শরীরটি স্বাভাবিকভাবে নীল হয়ে যায়, কিন্তু পরক্ষণে যদি নবজাতকের শরীর নীলচে থেকে গোলাপী না হয় তখন ধরে নিতে হবে নবজাতকটি কোনো কোনো অসুখের সম্মুখীন। এমতাবস্থায় নবজাতকটিকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে এবং নিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে নবজাতককে তোয়ালে দিয়ে ভালোভাবে জড়িয়ে নিতে হবে, যাতে সে বাতাসের কারণে তার শরীর আরও নীলচে না হয়। খেয়াল রাখতে হবে নবজাতকের শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিকমতো চলছে কিনা।

বিজ্ঞাপন
যদি সদ্যজাত শিশুটি ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে না পারে তাহলে হাতের তালু, পায়ের তালু এবং পিঠের শিরদাড়ায় আস্তে আস্তে ডলতে হবে। (৩) নবজতকের শ্বাস কষ্ট: নবজাতকের শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন-নিশ্বাস নেয়ার সময় নবজাতকের শরীর নীল হয়ে যাওয়া। নিশ্বাস নিতে গেলে বুক ও পেটের মাঝের অংশ ভিতরের দিকে দেবে যাওয়া, নিঃশ্বাস নেয়া সময় কণ্ঠনালি ভিতরের দিকে দেবে যাওয়া। সাধারণত এসব চিহ্ন যদি নবজাতকের শরীরে প্রকাশ পায় তাহলে বুঝতে হবে শিশুটি অসুস্থ এবং যেকোনো সময় নবজাতকের বড় বিপদ হতে পারে। এমতাবস্থায় নবজাতককে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। 

(৪) নবজাতকের খিঁচুনিঃ আমরা সাধারণত খিঁচুন বলতে বুঝি যে জোরে জোরে হাত পা ঝাঁকানো। নবজাতকের জোরে জোরে হাত পা ঝাঁকানো দিয়ে খিঁচুনি হতে পারে। আবার হাত পা জোরে জোরে ঝাঁকানোর সঙ্গে সঙ্গে চোখ উল্টিয়েও খিঁচুনি হতে পারে। অর্থাৎ চোখের কালো মণি ভিতরে ঢুকে গিয়ে চোখের সাদা অংশ বাহিরের দিকে চলে আসা। একটা নবজাতকের হাত-পা নড়াচড়া করা এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু নবজাতক যদি একদিকে বাঁকা হয়ে দীর্ঘ সময় শুয়ে আছে এমনকি চোখের উপর হাত নিয়ে গেলেও চোখের পলক নড়ছে না বা খুলছে না তখন বুঝতে হবে নবজাতকের মারাত্মক খিঁচুনি হয়েছে। (৫) নবজাতকের হাত-পা নড়াচড়া কমে যাওয়া: নবজাতক হাত পা নড়াচড়া কম করলে বড় বিপদ মনে করতে হবে। সাধারণত রক্তের মধ্যে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ার কারণে এমনটি হয়। যদি নবজাতক সুন্দরভাবে হাত-পা নড়াচড়া করতে পারছে না এবং হাসতে, কাঁদতে অসুবিধা হচ্ছে ,এমনকি আদর করলেও সাড়া দিচ্ছে না, বুকের দুধ টেনে খেতে কষ্ট হচ্ছে বা খেতে পারছে না বা হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। গরম কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখলেও তার হাত-পা ও তার শরীর গরম হচ্ছে না তাহলে এটিকে সম্ভাব্য বিপদ মনে করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। (৬) নবজাতকের বমি করা: জন্মের পর নবজাতক যদি বমি করে, তা কেমন বা কি ধরনের খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক। নবজাতক একবার বা দু’বার সাদা বা পানির মতো বমি করবে তা স্বাভাবিক। 

কিন্ত যদি দেখা যায় যে খেতে দিলেই বমি করছে বা কাশি উঠছে, কিন্ত এটি যদি থুথুর মতো বা কাশির মতো মিশ্রিত বমি হয় তাহলে বিপদ চিহ্ন। এছাড়া যদি বমির সঙ্গে রক্ত যায় তাহলে এটিও মারাত্মক বিপদ চিহ্ন। (৭) সময়ের আগে নবজাতকের আগমন: অনেক সময় গর্ভাবস্থায় মায়ের সমস্যার কারণে শিশুটির গর্ভে সমস্যা হতে পারে বা হয়েছে সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে সময়ের আগে ডেলিভারি করিয়ে নিতে হবে। এসব শিশুরা সাধারণত কম ওজনের হয়ে থাকে। সাধারণত কম ওজনের শিশুরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। এসব শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। কোনো সময় দেখা যায় এদের ইনফেকশন হয়, কোনো সময় এরা দ্রুত ঠাণ্ডা বা নিস্তেজ হয়ে যায়। এসব কারণে এসব শিশুদের দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজনে ভালো স্থান বা চিকিৎসা কেন্দ্র প্রয়োজন। (৮) শিশুর জন্মগত ত্রুটি: সাধারণত শিশুর যেসব জন্মগত ত্রুটিগুলো দেখা যায়। এসব চিহ্ন সহজেই লক্ষণীয় ও খুব গুরুত্বের সহিত কেয়ার করতে হবে। হাত-পায়ের ত্রুটি, হৃৎপিণ্ডে ত্রুটি, রক্তনালির সমস্যা, কাটা ঠোঁট, ফাটা তালু বা টাকরা, কানের সামনে ছিদ্র, বড় মাথা, খাদ্যনালি-শ্বাসনালির ত্রুটি, অন্ত্রের অসম্পূর্ণতা, নাভির সমস্যা, মূত্রতন্ত্রের সমস্যা, মূত্রথলির ত্রুটি, বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশজনিত ত্রুটি। 

 

লেখক: কনসালটেন্ট (শিশু বিভাগ) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চেম্বার: ডা. নাফিজা’স চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, আফরোজা ভিলা, শাহ মখদুম, বনলতা।  

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status