শরীর ও মন
পাইলস যদি হয়েই যায়
ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
১৫ আগস্ট ২০২২, সোমবারপাইলস কি?
পাইলস বা হেমোরয়েড প্রচলিত বাংলায় অর্শ্ব বা গেজ রোগও বলা হয়ে থাকে। রোগটির নামকরণ নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা রয়েছে। তবে নাম যাই হোক না কেন, পাইলস হচ্ছে মলদ্বারের ভেতরের আবরণি, তার রক্তনালি ও অন্যান্য মাংসপেশির সমন্বয়ে গঠিত একটি কুশন বা গদির ন্যায় নরম অংশ। এটি মলদ্বারের ভেতরেই থাকে। কিন্তু যখন রোগ হিসেবে প্রকাশ পায় তখন ঝুলে বাইরে বের হয়ে আসে বা আসতে পারে। পাইলস কেন হয়? বিভিন্ন কারণে পাইলস হয় বা এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। যেমন: দীর্ঘ সময় টয়লেটে বসে থাকা এবং চাপ প্রয়োগ করে টয়লেট করা, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য ব্যক্তিদের এ রোগ বেশি হয়। যারা প্যান-এ টয়লেট করেন, বংশানুক্রমিক কারণ, ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে বা হওয়া, রক্তনালির মধ্যে কপাটিকা (ভাল্ব) না থাকা, গর্ভকালীন অবস্থা সহ আরও কিছু কারণ। লক্ষণ বা উপসর্গসমূহ: যাদের টয়লেট করার সময় তাজা রক্ত যায়, মলত্যাগের সময় নরম আবরণি ঝুলে বাইরে চলে আসা, ব্যথা- সাধারণত বাইরে এসে আটকে গেলে অথবা ভেতরে রক্তক্ষরণ হলে, চুলকানি হওয়া বা দেখা দেয়া, আম (মিউকাস) জাতীয় নিঃসরণ। প্রাথমিকভাবে করণীয়: এসব রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
চিকিৎসা:
পাইলস-এর পর্যায়ের ওপর এর চিকিৎসা নির্ভর করে। ১ম পর্যায়ে সাধারণত ওষুধ অথবা খাদ্যাভাস পরিবর্তনের মাধ্যমেই ভালো থাকা যায়, ২য় পর্যায়ে চিকিৎসকরা রিং লাইগেশন, ইনজেকশন, সার্জারি করে থাকেন। এই রোগটির ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়ে মূলত সার্জারি হয়ে থাকে।
কখন অপারেশন করতে হয়:
পাইলস (অর্শ্ব) হলেই অস্ত্রোপচার করতে হবে এমনটি মনে করে অনেকে চিকিৎসকের কাছে যেতে ভয় পান। অনেক রোগী বলে থাকেন, অপারেশন ছাড়া ঠিক করা যাবে কিনা বা সার্জারির পরে সেটি আবার হবে কিনা। সাধারণত প্রথম স্টেজে পাইলস যখন থাকে, তখন সাধারণত সার্জারির জন্য পরামর্শ দেয়া হয় না। তখন ওষুধ দিয়ে রোগীকে সুস্থ করে তোলা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এসব রোগীর চিকিৎসার দু’টি ধাপ রয়েছে।
প্রথমত:
রোগীর জীবনযাপন পরিবর্তন করা ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা। এ জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা, শাক-সবজি খাওয়া ও প্রয়োজনে ইসবগুলের ভুসি বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। এরপর যখন সেকেন্ড স্টেজে আসে, তখন সে ক্ষেত্রেও আমরা ওষুধপত্র ও কিছু করণীয় দেয়া হয়। এসবে রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে তখন কাটাছেঁড়া ছাড়াও এই রোগের চিকিৎসা করা যায়। পাইলস-এর চিকিৎসায় আমরা একটা প্রসিডিউর করি, যেটাকে বলা হয় ব্যান্ডিং। একটি রাবার ব্যান্ডের মতো জিনিস, যেটা রক্তনালির টিউমারের মুখে পরিয়ে দেয়া হয়। তখন পাইলস অটোমেটিক্যালি শুকিয়ে ঝরে যায়। আগের চেয়েও যদি বেড়ে যায়, থার্ড বা ফোর ডিগ্রির দিকে চলে আসে, তখন সার্জারি করা হয়। তবে এখন মলদ্বারের কাছে খুব বেশি কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন হয় না। আগে কাটাছেঁড়া করা হতো, তখন খুব ব্যথা হতো, রস ঝরতো, বিভিন্ন ধরনের অসুবিধা হতো; এখন মেশিনের সাহায্যে অপারেশনের ফলে এই অসুবিধাগুলো হয় না। আজকাল কোনো ধরনের দৃশ্যমান কাটাছেঁড়া ছাড়াই মেশিনের মাধ্যমে পাইলস সার্জারি সম্ভব। একে ‘লংগো’ অপারেশন বলা হয়। এর রেজাল্টও ভালো। আগে পাইলস সার্জারির পর দেড় থেকে দুই মাস লাগতো ঘা শুকাতে, এখন এসবের কোনো ঝামেলাই নাই। অপারেশনের পর রোগী দ্রুত সেরে ওঠে, অস্ত্রোপচারের এক থেকে দু’দিনের মধ্যে রোগীরা বাসায় যেতে পারেন। কাজে যোগ দিতে পারেন।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ) কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বার: ১৯ গ্রীন রোড, একে কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা। ফোন-০১৭১২-৯৬৫০০৯