ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

চালবাজি, দাম বাড়ছে হু হু করে

মো. আল আমিন
১৪ আগস্ট ২০২২, রবিবার
mzamin

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর নওগাঁ বা দিনাজপুর থেকে ৫০ কেজির ৩০০ বস্তা চাল  ঢাকায় পরিবহনের বর্তমান খরচ ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে এক কেজি চালের পরিবহন ব্যয় হবে ১.৪৭ থেকে ১.৫৪ টাকা। সর্বশেষ জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির আগে এটি ছিল ১.৩৫ থেকে ১.৪৫ টাকা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চালের দাম কেজিতে ৫০ পয়সাও বাড়ার কথা নয়। তবে বাজারের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। রাজধানীর বাজারে চালের দাম কেজিতে ১২ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধুমাত্র পরিবহন ব্যয় বাড়ায় চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ না। কারণ হিসেবে উৎপাদন ঘাটতির কথা বলছেন তারা। তবে তেলের দাম বাড়ার পরই কেন একসঙ্গে এই দাম বৃদ্ধি হলো এর কোনো উত্তর মিলছে না। অনেকে বলছেন, চাল ব্যবসায়ীরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন।

বিজ্ঞাপন
সুযোগ পেলেই তারা চালবাজি শুরু করেন। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে বড় আড়তদার ও মিল মালিকরা ক্রেতার পকেট কাটা শুরু করেছেন। আড়তদাররা বলছেন- এই মুহূর্তে চালের কোনো সংকট নেই। তাহলে দাম বাড়ছে কেন- এমন প্রশ্নে নানা যুক্তি সামনে আনছেন তারা।  নওগাঁ জেলা ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোধ বরণ সাহা মানবজমিনকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহন খরচ সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ পয়সা বেড়েছে। সেক্ষেত্রে তেলের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম এতটা বাড়ার কথা না। চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো- উৎপাদন ঘাটতি। কিন্তু সরকার এটা শিকার করে না। তিনি বলেন, আশ্বিন-কার্তিক মাসে বোঝা যাবে দেশে চালের বাজারের কী পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য চাল আমদানির বিকল্প নেই। অবাধ আমদানির বিষয়ে সরকারকে আমি বার বার বলেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। চাল আমদানির বিষয়ে আমরা শুল্ক ছাড় চেয়েছিলাম। সরকার সেটাও করেনি। চাল আমদানি করতে হলে ২৭ টাকা শুল্ক দিতে হয়। এজন্য চাল আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা আগ্রহ দেখায় না।    

 বাংলাদেশ হাসকিন মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, ধানের দাম কিছুটা বেড়েছে। এ জন্য চালের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা। দিনে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। কাঁচা ধান জেনারেটর দিয়ে শুকাতে হচ্ছে। এতেও কিছুটা খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তবে চালের কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেন, টাকা থাকলেই সবাই চাল কিনতে পারবে। চালের কোনো সংকট নেই।  এদিকে চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। শ্যামলী এলাকায় থাকেন শাহেদ। সীমিত আয়ের মানুষটি শনিবার শ্যামলীর একটি দোকানে ১০ কেজি চাল কিনতে এসে বড় ধাক্কা খান। বলেন, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি চাল কিনেছিলাম ৪৮ টাকা দিয়ে এবং ১০ কেজি চালের জন্য ৪৮০ টাকা দিয়েছিলাম। এখন দোকানি ১০ কেজির জন্য ৫২০ টাকা দাবি করে। এই খরচ বহন করা আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। শুধুমাত্র চালের জন্যই যদি ৪০ টাকা বেশি খরচ করতে হয়, তাহলে অন্যান্য জিনিস কীভাবে কিনবো? অন্যান্য জিনিসের দামও তো অনেক বেড়েছে। 

শাহেদের মতোই নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা বাজার করতে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন। কারণ, নিম্নমানের মোটা চালও এখন রাজধানীর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজির ওপরে। আর মাঝারি মানের মোটা পাইজাম কিংবা স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগের দিনও এই চাল বিক্রি হয়েছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা ও ৫২ টাকা কেজিতে। বিআর ২৮ ও ২৯ জাতীয় চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজিতে। মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৪ এবং নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও বিআর-২৮ জাতীয় চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছিল ৬৮ থেকে ৭২ এবং নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এসব চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া সব ধরনের পোলাও চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। বিএনপি বাজারের সাত্তার জেনারেল স্টোরের মালিক মানিক বলেন, প্রতি কেজি চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। 

চিনিগুঁড়া চালের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।  কাওরান বাজারের নোয়াখালী রাইস ট্রেডার্সের মালিক মো. শাওন জানান, এক সপ্তাহ আগে তারা প্রতি বস্তা চাল (৫০ কেজি) ২ হাজার ৩২০ টাকায় বিক্রি করতে পেরেছিলেন। এখন আমরা একই মানের চাল কিনছি প্রতি বস্তা ২ হাজার ৬০০ টাকায়। আমরা গত সপ্তাহে প্রতি বস্তা মিনিকেট চাল ৩ হাজার ২৮০ টাকায় বিক্রি করলেও এখন ৩ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, পরিবহন খরচ বাড়ানোর পাশাপাশি মিল মালিকরা গত এক সপ্তাহে চালের দাম বাড়ায়। তিনি আরও জানান, আগে কুষ্টিয়া, নওগাঁ ও চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে ট্রাক আনতে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ পড়তো। এখন তেলের দাম বাড়ায় ২২ থেকে হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। ফলে এই বাড়তি টাকা চালের দামে প্রভাব পড়েছে। তবে শুধুমাত্র পরিবহন খরচের কারণে চালের দাম এতটা বাড়েনি। মিলাররা চালের দাম বাড়িয়েছে।  

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status