ঢাকা, ১৭ মে ২০২৫, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

সিন্ধুর পানি চুক্তি: দ্বন্দ্ব, বর্তমান সংকট ও ভবিষ্যৎ আশঙ্কা

মানবজমিন ডেস্ক

(৭ ঘন্টা আগে) ১৬ মে ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৩৫ অপরাহ্ন

mzamin

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সিন্ধু পানি চুক্তি দীর্ঘদিন ধরে দুই প্রতিবেশী পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে পানি ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের মধ্যেও একটি স্থিতিশীল মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু সন্ত্রাসী হামলায় সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর পর ভারত এ চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। এতে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এ খবর দিয়ে অনলাইন জিও নিউজ বলছে, ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তি  সিন্ধু নদের অববাহিকায় পানি ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। এটি ছয়টি নদীর পানি বণ্টন নির্ধারণ করে দেয়।

ভারতের জন্য নির্ধারিত তিনটি পূর্বাঞ্চলের নদী- সুতলজ, বিয়াস এবং রাভি এবং পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত তিনটি পশ্চিমাঞ্চলের নদী- সিন্ধু, ঝেলম ও চেনাব। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানি ব্যবহার করতে পারে এবং পাকিস্তান পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোর প্রধান অধিকারভুক্ত ব্যবহারকারী। চুক্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য নির্দিষ্ট ধাপ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে তদন্ত এবং আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের হস্তক্ষেপ।

সম্প্রতি ভারতের দিক থেকে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে এবং সিন্ধু অববাহিকায় পাকিস্তানে প্রবাহিত পানি স্থগিত রাখা হবে, যতক্ষণ না পাকিস্তান ‘বিশ্বাসযোগ্য ও অপরিবর্তনীয়ভাবে সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদ থেকে সরে আসে।’ ভারতের এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়, চুক্তি আপাতত স্থগিত থাকবে এবং পাকিস্তানের প্রতি কোনও পূর্ব নির্ধারিত পানি প্রবাহ বা তথ্য প্রদান করা হবে না। এর আওতায় ভারতের পক্ষে সেচ প্রকল্প বা বাঁধের তথ্যও পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। পাকিস্তান একে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

লাহোরে অবস্থিত জাতীয় কৃষক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খালিদ হোসেন বাত্ বলেন, এটি প্রকৃত অর্থে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের পানি সংকট আগে থেকেই রয়েছে। ভারতের এই সিদ্ধান্ত আমাদের কৃষির ভিত্তিকে ধ্বংস করতে পারে। পাকিস্তান কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ঘাশারিব শাওকত বলেন, সিন্ধু পানি চুক্তি আমাদের কৃষির মেরুদণ্ড। যদি পানির প্রবাহে অনিয়ম হয়, তাহলে গম, ধান, আখের মতো সেচ-নির্ভর ফসলের উৎপাদনে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। খাদ্যের দাম বাড়বে, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সিন্ধু অববাহিকায় ভারতের তৈরি কিশানগঙ্গা ও রাটল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে পাকিস্তান বহু বছর ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছে। পাকিস্তান অভিযোগ করে যে ভারত এগুলোর মাধ্যমে পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোর পানি নিজের দিকে সরিয়ে নিচ্ছে। যদিও ভারত এ অভিযোগ অস্বীকার করে এবং দাবি করে এসব প্রকল্প চুক্তির আওতায় বৈধ। ভারত বলছে, পাকিস্তান বারবার বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করছে এবং এই কারণেই চুক্তির কাঠামোতে পরিবর্তন আনার দরকার রয়েছে। ভারতের সীমিত জলাধার ক্ষমতার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে পানির প্রবাহ বন্ধ না হলেও, ইতিমধ্যে পাকিস্তানের একটি প্রধান জলপ্রবাহ স্থানে পানির প্রবাহ মে মাসের শুরুতে হঠাৎ ৯০ ভাগ কমে গিয়েছিল।  সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে পাকিস্তানের কৃষিতে। কৃষিজ উৎপাদন কমে যাওয়া, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র কৃষকদের দারিদ্র্যের মুখে ঠেলে দেওয়া- এসবই বাস্তব আশঙ্কা।

 

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status