অনলাইন
বন্ধুদের দৃষ্টিতে মাহফুজ আলম
মানবজমিন ডিজিটাল
(৪ ঘন্টা আগে) ১৬ মে ২০২৫, শুক্রবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১১:২৭ পূর্বাহ্ন

সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তাকে নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ, নানা পোস্টসহ আলোচনা-সমালোচনা। তবে এরই মাঝে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে । ‘আমার বন্ধু মাহফুজ’ শিরোনামে করা ওই পোস্টটি তুলে ধরা হলো-
~আমার বন্ধু মাহফুজ~
আমার বন্ধু মাহফুজ আলম তামিরুল মিল্লাতে আমার সহপাঠী ছিলো। সে তামিরুল মিল্লাতে শিবির করেনি। যখন আমরা ফোকাসে ভর্তি হই, তখন আইডিয়াল হোমে সাথী ছাড়া কাউকে উঠানো হতো না। এবং সাথী না হওয়ার কারণে স্পেশাল ক্লাসে তাকে ইনক্লুড করা হয় নাই। সে তার পরিবারের খরচে ফোকাসে পড়ে ঢাবিতে বি ইউনিটে সপ্তম ও ডি ইউনিটে তৃতীয় হয়েছিলো।
তখন আকীদাগত জায়গা থেকে সে মওদুদীবাদ ও শিবিরের রাজনৈতিক অবস্থানের বিরোধী ছিলো।
একদিন মিল্লাতের বিখ্যাত বাংলা স্যারের সাথে ক্লাসে দাঁড়িয়ে মওদুদীর আকীদা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বিতর্ক করেছিলো সে।
আমরা ভেবেছিলাম যে সে ভর্তি পরীক্ষায় ফার্স্ট হবে। পুরো বাংলাদেশের ফোকাসের পরীক্ষায় কয়েকবার প্রথম হওয়ায় ঢাবিতে ফার্স্ট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাওয়ায় তাকে উত্তরা শাখার পরামর্শে ফোকাস সেন্ট্রাল শাখার তত্ত্বাবধানে স্পেশাল ব্যাচে নিয়ে আসা হয়। সেখানে মাহফুজসহ আরো চারজনকে নিয়ে আসা হয়। আমিও ছিলাম সে ব্যাচে। পরবর্তীতে মাহফুজ ভালো রেজাল্ট করায় ফোকাস থেকে সে সহ আরো কয়েকজন র্যাংক করা ছাত্রকে ল্যাপটপ দেয়া হয়, অবশ্য এটা ফোকাসসহ যে কোন কোন কোচিং সেন্টারের প্রচারণার কৌশল।
ক্যাম্পাসে আসার পর মাহফুজ হলে উঠে নাই। সে একটা মেসে উঠে যেখানে শিবিরের অনেক নেতা কর্মী থাকতো। সেখানে সে কয়েকমাস থেকে হলে উঠে। মেসে থাকাবস্থায় তাকে শিবিরের নেতারা শিবিরের সাথী হতে চাপ দেয়। পরবর্তীতে সে হলে উঠে আসে। আমি তার কাছে শুনেছি, শিবিরের ইন্টেলেকচুয়াল সার্কেল UT(ইউনিভার্সিটি অব থট) তে অংশগ্রহণ করার জন্য তাকে শিবিরের সাথী হবার জন্য শর্ত দিয়েছিলো। পরবর্তীতে সে শিবিরের কর্মী হয়েছিল বলে হয়েছিলো শুনেছি। আমার জানামতে সে শিবিরের সাথী ছিল না।
তার বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে আগ্রহ ছিল বলে সে চেয়েছিলো ইউটির ক্লাস গুলোতে অংশ নিতে। প্রথম বর্ষের শেষ পর্যন্ত সে কয়েকবার ইউটিতে গিয়েছিলো, কিন্তু সে যেত তার ডিপার্টমেন্টের ভাই ও সহপাঠী সাথী বা সদস্যদের বরাতে। কিন্তু ইউটির যারা সিনিয়র ছিলেন তাদের সাথে তার চিন্তাগত ও রাজনৈতিক মতভিন্নতা থাকায় প্রথম বর্ষের পর আর ইউটি কন্টিনিউ করে নাই।
ওই সময় থেকেই সে ৭১ নিয়ে শিবিরের অবস্থান এবং পাকিস্তান নিয়ে শিবিরের আবেগ তথা বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে যাকে পাকিস্তান অন্টলজি বলা হয়, সে তার বিরোধী। তখন থেকেই মূলত ক্যাম্পাসে তার সাথে শিবিরের বিরোধ শুরু।
শিবির তাকে কোন কাজে অর্থায়ন করে নি, কোন প্রোগ্রামে সহায়তা করে নি। তখন থেকেই সে আমাকে বলতো যে ক্যাম্পাসে শিবির তার বিভিন্ন উদ্যোগে বাঁধা তৈরি করছে। হলেও সমস্যা করছে।
অনেক বাঁধা সত্তেও দ্বিতীয় বর্ষে সে সিনেমার পত্রিকা সিনেযোগ প্রকাশ করে। আর তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে সিনেমার প্রদর্শনী জোনাকি গলির কারখানা চালিয়ে যায়। ও সময়ে সে কাশ্মীর নিয়ে প্রোগ্রাম করে। কাশ্মীর ও ফিলিস্তিনের পক্ষে বেশ কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক তৎপরতায় সক্রিয় ভুমিকা পালন করে। এ সময় বেশ কয়েকটা পত্রিকা সে প্রকাশ করে ও আড্ডা ইনিশিয়েট করে, যেমন কাঁটাতার। এ পত্রিকাটি সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে নাসির ভাইর অবস্থান কর্মসূচির সময় সে সম্পাদনা করতো।
করোনার সময় যখন ক্যাম্পাসে কেউ ছিলো না, তখন আমি ওকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, কিরে বাড়ি যাবি না, ও বলতো ক্যাম্পাসের রাজনীতি গুছাইতে হবে, কোন কাজ হয় নাই। ক্যাম্পাসে সারাদিনের এক্টিভিজম, বিভিন্ন সার্কেলের সাথে উঠাবসা আর রাত জেগে গবেষণা ও লেখালেখির প্রভাব তার শরীরের উপর মারাত্মক ভাবে দেখা দেয়। ওর ডান হাত অবশ হয়ে যায় নার্ভে চাপ পড়ার কারণে। অনিয়ম ও অবহেলায় কয়েকবার সে অসুস্থ হয়ে যায়। একুশ সালে আবরার ফাহাদের হত্যার পর আটস্তম্ভের প্রস্তাবনা সে রচনা করে। আক্তারকে সে তখন সহযোগিতা করেছিলো।
করোনার পর ক্যাম্পাসে যখন সবাই আসা শুরু করে তখন নতুন করে নাহিদ, আসাদ ও জাহেদকে নিয়ে গুরুবার আড্ডা শুরু করে, ছয়চক্র নামে সেমিনার করে এবং পূর্বপক্ষ নামে ইন্টেলেকচুয়াল পত্রিকা প্রকাশ করে।
পুর্বপক্ষ থেকে ২৩ এর শেষে সেপ্টেম্বরে 'দায় ও দরদের সমাজ' নামে একটা সেমিনার আয়োজন করা হয়, সেখানে মাহফুজ আমাদের ভবিষ্যতের রাজনীতি কেমন হবে তা নিয়ে থিসিস হাজির করে। সে সেমিনারে উপস্থিত হয় সরোয়ার তুষার, সহুল আহমেদ মুন্নাসহ কয়েকজন। তুহিন খানও সে সেমিনারে আমন্ত্রিত ছিলো, কিন্তু আসে নাই। এইটা নিয়ে মাহফুজ মন খারাপ করছিলো।
তার কয়েকদিন পরে মাহফুজ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভালো রকম অসুস্থ হওয়ায় গ্রামের বাড়ি চলে যায় এবং বেশ কিছুদিন বাড়িতে থাকে। এর মধ্যে মাহফুজকে দিনক্ষণ না জানিয়ে ছাত্রশক্তি ডাকসুতে আত্মপ্রকাশ করে যেখানে তুহিন খান আমন্ত্রিত হয়। এটা নিয়ে সে অনেক রাগ করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। পরে ঝামেলা মিটে যায়। সেখানে তুহিন খান মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না। তার অভিমান ছিল, কিন্তু টিএসসির আড্ডা ও নানা আন্দোলনে তুহিন খানের সাথে তার সখ্যতা ছিল বলেই দেখেছি।
পরবর্তীতে নাহিদ আক্তারের সাথে মাহফুজের বোঝাপড়া হয় যে মাহফুজ কালচারাল ও বুদ্ধিবৃত্তিক সার্কেল চালাবে আর নাহিদরা পলিটিকাল ফ্রন্ট সামলাবে। তখন মাহফুজ বেশ কিছু পত্রিকা ও ওয়েবসাইট করার উদ্যোগ নেয়, যেমন পূর্বপক্ষ, রসিক, ইংরেজি পত্রিকা কুইল্ট ইত্যাদি। আরো কয়েকটা আড্ডা শুরু করে। কিন্তু অর্থ সংকটে বেশ বিপদে পড়তে হয়। সে সময় সে চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু নানা কারণে চাকরিও ম্যানেজ করতে পারে নাই।
আমরা তাকে বেশ হতাশ হইতে দেখি, দুই বছর মাস্টার্স গ্যাপ দিতে হয়েছিলো ক্যাম্পাসে পড়ে থাকায়। আমি ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ি, ওকে নিজের দিকে খেয়াল দেয়ার কথা বললে ও বলতো হাসিনা থাকা পর্যন্ত আমাদের কোন ভবিষ্যৎ নাই, যে কোন মূল্যে এই ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে হবে আমাদেরকে।
অবশেষে, চব্বিশের শুরুতে অনেক কাঠখড় পোহানোর পরে মাহফুজের তত্ত্বাবধানে তিনটি ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়। মাহফুজ যদি শিবিরের টাকাই নিত তাইলে তার ওয়েবসাইট বের করতে দশ মাস লাগতো না। শিবিরের সাবেক এক ঢাবি সভাপতি মাহফুজকে দশ হাজার টাকা অফার করছিলো সিনেযোগ পত্রিকা প্রকাশ করার জন্য, কিন্তু আত্ম-সম্মান ও রাজনৈতিক ভিন্নতার কারণে সে টাকা নেয় নাই। বহুদিন সে অর্থকষ্টে ছিলো, আমার থেকে কমবেশ ধার করতো, কিন্তু শিবিরের টাকা ধরে নাই।
নির্বাচন পরবর্তী যে রাজনৈতিক শুন্যতা দেখা দিয়েছিলো, সে অবস্থায় পলিটিকাল ফ্রন্টে ছাত্রশক্তি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ফ্রন্টে তার সার্কেল মিলে সমন্বিত উদ্যোগে জোরালো তৎপরতা শুরু হয়।
জুন-জুলাই-আগস্টের ঘটনাক্রমে তথা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মাহফুজের ভূমিকা নিয়ে যারা প্রশ্ন করেন তারা গণ-অভ্যুত্থানের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটু জিজ্ঞাসা করলেই বিষয়টার আগাগোড়া জানতে পারবেন।
মাহফুজ যা বলতো, তা আজ অনেকটাই সত্য। সে যখন তার স্বপ্নের কথা বলত, তখন আমার বিশ্বাসযোগ্য মনে হত না। কিন্তু, আমি তার দিন রাত খাটুনি দেখেছি গত কয়েক বছর। মাহফুজ আসমান থেকে আসেনি, মাহফুজের শ্রমের প্রতিদান সে পেয়েছে, তার স্বপ্ন ও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে একদিন।
পাঠকের মতামত
Thank you for sharing your truthful vision regarding Mahfuj.....
তবে তাই হোক। মাহফুজের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হোক।
আজগুবি কথা বলে সত্য ঢাকা যায় না। একজন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে তার কথাবার্তা অসংলগ্ন, এবং হেতাহিত জ্ঞানহীন, অপ্রয়োজনীয় বাচাল,
সুন্দর দেশ গড়তে হলে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে সম্ভব না। এনসিপির চাঁদাবাজি, তদ্বির বানিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ। এগুলো নিঃসন্দেহে গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী। ইনক্লুসিভ রাজনীতির কথা বলে কোন রাজনৈতিক শক্তিকে নিষিদ্ধ করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় চেতনার দৈন্যতা-ই ফুটে উঠেছে। একাত্তরের প্রশ্নে অস্পষ্টতা জনসমর্থনহীনতার মূল কারণ। এক কথায় কথা কাজে বিস্তর ফারাক থাকায় গণঅভ্যুত্থানের নায়কেরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে দিনে দিনে।