ঢাকা, ১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

নিলাম মূল্য কম, সঙ্কটে চা শিল্প

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

(৬ ঘন্টা আগে) ১২ মে ২০২৫, সোমবার, ৫:৩৪ অপরাহ্ন

mzamin

এক কেজি চা পাতা উৎপাদনে বাগান কর্তৃপক্ষের ব্যয় হচ্ছে ২৫০ টাকা। কিন্তু সেটি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকায়। ভালো মানের পাতা হলে একটু বেশি মূল্য পাওয়া যায়। এতে করে বাগান মালিকরা লোকসানের মুখে পড়ছে। এই অবস্থায় চা বাগান টিকিয়ে রাখা দায় হচ্ছে। কোনো কোনো বাগান নিয়মিতভাবে শ্রমিকদের বেতনই পরিশোধ করতে পারছে না। এতে করে শ্রমিক বিক্ষোভ বাড়ছে। গত সপ্তাহে সিলেটে শ্রমিকদের বড় একটি বিক্ষোভে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়।

বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লোকসানের মুখে পড়ায় তারা সরকারের সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত নিলামে সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা কেজি করার প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। কিন্তু সেটি কার্যকর না হওয়ার কারণে অধিকাংশ বাগানের মালিকই অর্থ সঙ্কটে পড়েছেন। এতে করে উত্তেজনার পরিবেশও সৃষ্টি হচ্ছে।

তারা জানান, নিলাম ব্যবস্থার ফাঁদ, সিন্ডিকেটের দখলদারিত্ব ভারতীয় সস্তা চায়ের আগ্রাসন, ঋণের অভাব ও সরকারের নীরবতায় সিলেটে একের পর এক চা বাগান বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে। চা নিলাম ব্যবস্থাটি এখনো বৃটিশ আমলের উৎপাদন হয় এক জায়গায় আর নিলাম হয় আরেক জায়গায়। এই ব্যবস্থায় চা শিল্পের জন্য এক ধরনের ফাঁদ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে সিন্ডিকেটের দখলদারিত্ব দিন দিন বাড়ছে। এতে করে প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থাকে ব্যাহত করছে। ভারতীয় সস্তা চায়ের আগ্রাসন দেশীয় শিল্পকে চরমভাবে চাপে ফেলেছে।

সম্প্রতি সিলেটের ১৩টি বাগানের মালিক কর্তৃপক্ষ প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে তারা সিলেটের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

সিলেটের তারাপুর চা-বাগানের ম্যানেজার রিঙ্কু চক্রবর্তী মানবজমিনকে জানিয়েছেন, যেভাবে লোকসানের মুখে পড়েছে বাগান, এতে করে অনেক বাগানই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন ভাতা প্রদান করা দায় হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে সরকারের তরফ থেকে এখনই উদ্যোগ না নিলে আরো সঙ্কট হবে।

এদিকে বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে সিলেটের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস প্রদান করেছেন। বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবগত করবেন বলেও জানান।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে ১৩ বাগান মালিকের দেয়া আবেদনের উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালে চা শিল্প, শ্রমিক আন্দোলনের মুখে যে অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল তা থেকে এখনো বাগান মালিক কর্তৃপক্ষ বের হতে পারেননি। ছোট বড় প্রায় সব বাগানই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ‘ক্রপ লোন’ নিয়ে থাকেন। চায়ের নিলাম মূল্য সরাসরি কৃষি ব্যাংকে জমা হয়ে তা পরিশোধ করা হয়। এই ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৯ ভাগ থেকে বর্তমানে ১৪ দশমিক ৫০ ভাগ করা হয়েছে। বর্তমান অবস্থায় তা পরিশোধ করা বাগানগুলোর পক্ষে অসম্ভব। বাগান মালিকরা ঋণ পরিশোধের সুদের হার ৫ ভাগ রাখার জন্য এবং ঋণ পরিশোধের সময়সীমার ব্যাপারে শিথিলনীতি গ্রহণ করার জন্য ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে থেকে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। একইসঙ্গে দেশের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত চা রপ্তানি করার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার আহ্বান জানান তারা।

এদিকে সিলেটের বুরজান ও ফুলতলা চা বাগানের অচলাবস্থা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টা ও বৃটিশ হাই কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এ দুটি চা বাগানের পরিচালক যুক্তরাজ্য প্রবাসী রেবেকা রফিক টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, তার বাবা চেয়ারম্যান মুহম্মদ রফিক ও ভাই এমডি জামিল রফিক ক্যানসার রোগে আক্রান্ত। বাবা ও ভাইকে দেখাশোনার জন্য তিনি এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সফর করতে পারছেন না। এমনকি টি বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে পারছেন না। এ কারণে সংকট আরো বেড়ে চলেছে। পরিচালক রেবেকা রফিক টি বোর্ডের কাছে আবেদন করেছেন। ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতা পেলেই তারা শ্রমিকদের মজুরি মিটিয়ে দেবেন-এই জন্যে পরিচালনা বোর্ডকে পর্যাপ্ত সময় দেয়ার জন্যেও তিনি আবেদন করেছেন।

ফুলতলা ও বুরজান চা বাগান দুটির মালিক মোহাম্মদ রফিক লন্ডন প্রবাসী। ৪০ বছর আগে তিনি বিদেশি মুদ্রা দিয়ে জেমস ফিনলের নিকট থেকে বুরজান,জাফলং ও ফুলতলা বাগান তিনটি ক্রয় করেছিলেন। গত ৪০ বছর ধরে তার নিজস্ব অর্থায়নে ফুলতলা ও বুরজানের উন্নয়ন করে যাচ্ছেন। মুহম্মদ রফিকের ছেলে পরিচালক জামিল রফিক ও মেয়ে পরিচালক রেবেকা রফিক ও বাগানের পরিচালনা বোর্ডে রয়েছেন। গত ৪ঠা মে সিলেটের বুরজান, ছড়াগাঙ ও কালাগুলের চা শ্রমিকরা তাদের বকেয়া মজুরির দাবিতে সিলেট এয়ারপোর্ট রোড অবরোধ করে। জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকরা ফিরে গেলে টি বোর্ড ও জেলা প্রশাসন অচলাবস্থা নিরসনের জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। টি বোর্ড ও জেলা প্রশাসন ফুলতলা চা বাগানের অচলাবস্থা নিরসনের জন্যে তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ করেছেন।

চা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দাবি হচ্ছে, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্যে অবিলম্বে প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটির মাধ্যমে চা বাগানের সৃষ্ট সমস্যাসমূহ পূর্ণাঙ্গভাবে সমাধান করতে হবে। বিশেষ করে চা বাগানগুলোকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় আনতে হবে। কৃষিঋণ প্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতাও কমাতে হবে। চা নিলামে বর্তমানে যে সিন্ডিকেট রয়েছে তা ভাঙতে হবে। চা বাগানগুলো যাতে উপযুক্ত মূল্য পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে চা বাগানের সমস্যা সমাধানে টি বোর্ড, মালিকপক্ষ ও প্রশাসনকে একযোগে কাজ করতে হবে।

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

‘দ্য উইক’ ম্যাগাজিনে তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার স্টোরি/ ‘নিয়তির সন্তান’

বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় পুলিশ/ ডিএমপির দুঃখ প্রকাশ, এসআই ক্লোজড

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status