দেশ বিদেশ
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ৫ নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১২ মে ২০২৫, সোমবার
সরকারের অংশীদারিত্বে থাকা বহুজাতিক কোম্পানি ও বড় বড় কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি শেয়ারবাজার পরিস্থিতি উন্নয়নে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে রোববার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিং হয়েছে। বিএসইসি’র চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ পুরো মিটিংয়ে ব্রিফিং করেন- মার্কেটের কী অবস্থা। গত ৯ মাসে কী ধরনের রিফর্ম করা হয়েছে, কোথায় কোথায় এখনো রিফর্ম চলমান; সেগুলো নিয়ে উনি বিস্তারিত একটা পিকচার দেন এবং তার আলোকে খুবই প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা পাঁচটি প্রধান নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রথম নির্দেশনা হলো- বাংলাদেশে যেসব বিদেশি কোম্পানিতে সরকারের স্টেক (অংশীদারিত্ব) আছে, যেমন ইউনিলিভার, তাদের দ্রুত শেয়ারবাজারে আইপিওতে আনা।
দ্বিতীয় হলো- বাংলাদেশে অনেক প্রাইভেট কোম্পানি আছে যাদের টার্নওভার বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ এখন আর ২০-৩০ বছর আগের বাংলাদেশ নেই। অনেক বড় বড় কোম্পানি হয়েছে তাদের স্টক মার্কেটে আনার জন্য বলা হয়েছে। সেটার জন্য কী ধরনের প্রণোদনা দরকার, সেটা রাশেদ মাকসুদকে বলে দেয়া হয়েছে। যেমন সিটি, মেঘনা আরও অনেক কোম্পানি আছে, তাদের কীভাবে আনা যায়।
তৃতীয় বিষয় হলো- স্টক মার্কেটে ভেস্টেড ইন্টারেস্টেড লোক অনেক। অনেক ধরনের ভেস্টেড ইন্টারেস্টেড আছে। ফলে দেখা যায় আমরা রিফর্ম নিলেও, অনেকসময় রিফর্মগুলো ঠিকমতো কাজ করতে চায় না বা এরা রিফর্মগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। এজন্য স্টক মার্কেটে ডিপ রিফর্ম যাতে ক্যারি আউট করা যায়, এমন ব্যক্তি যাদের এখানে ইন্টারেস্ট নেই, এমন একটি রিফর্মের কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি বলেন, চতুর্থ হলো- স্টক মার্কেট রেগুলেটর বা যেসব এজেন্সি বা অফিস আছে এখানে অনেক ধরনের দুর্নীতির কথা শোনা যায়। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আছে দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। যাতে পুরো স্টক মার্কেটে এক ধরনের বার্তা পৌঁছায় কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না। পঞ্চম হলো- বাংলাদেশে যেসব বড় বড় কোম্পানি আছে তারা ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেয়। অনেক সময় সিন্ডিকেট ঋণ দেয়, অনেকগুলো ব্যাংক থেকে ১ হাজার, ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন বড় ফান্ড সেটআপের জন্য। এটার জন্য বলা হয়েছে- এই ঋণটা কীভাবে নিরুৎসাহিত করে, কীভাবে তারা বন্ড ইস্যু করে বা স্টক মার্কেটের মাধ্যমে তাদের ফান্ড সংগ্রহ করতে পারেন- বলেন শফিকুল আলম। তিনি বলেন, আমি আবারো বলবো খুবই প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা পুরোটা শুনেছেন, শোনার পর উনি নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা আশা করছি, দ্রুত স্টক মার্কেটে ক্লিয়ার ও মিনিংফুল রিফর্ম দেখতে পারবো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অফিসিয়াল মিটিং। আপনারা দেখবেন আমাদের কাজগুলো হলে যারা স্টেকহোল্ডার সবাই বেনিফিটেড হবেন। সবাই একটা ভাইব্রেন্ট স্টক মার্কেট দেখতে পারবেন। লুটপাটের মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে বেসামাল করে দেয়ার পেছনে গত কয়েক দশক ধরে যারা জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় না আনতে পারলে মানুষের আস্থা ফিরবে না জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শেয়ারবাজারকে যে অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা অকল্পনীয়। আমাদেরকে অবশ্যই এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হবে। শেয়ারবাজারের প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে এমন অবস্থায় ফেরাতে হবে যেন মানুষ আস্থা ফিরে পায়, এটা যেন লুটেরাদের আড্ডাখানায় পরিণত না হয়’-বলেন প্রধান উপদেষ্টা।