দেশ বিদেশ
গাজীপুরে বনের ভেতর নয় মাসে পাঁচ হাজার অবৈধ ঘরবাড়ি
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে
১৫ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে গাজীপুরে বনবিভাগের জায়গা জমি ও বনাঞ্চল অবৈধভাবে দখল করে পাঁচ হাজারের বেশি বাড়িঘর, দোকানপাটসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা গড়ে উঠেছে। স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে টিনসেড, আধাপাকা ও বহুতল ভবন। এতে ভাওয়াল বন খ্যাত শালবনের আয়তন ছোট হয়ে আসছে। হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য, বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বন্যপ্রাণী।
অনুসন্ধান বলছে, গত নয় মাসে ভাওয়াল রেঞ্জের শুধুমাত্র ভবানীপুর বিটে কমপক্ষে ৭০০ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। যদিও বনবিভাগের তালিকায় ওই বিটে ৪৫১টি বাড়ি নির্মাণের তথ্য রয়েছে। ভাওয়াল রেঞ্জের পার্শ্ববর্তী জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বাউপাড়া বিটে নয় মাসে শতাধিক ঘরবাড়ি নির্মিত হলেও সরকারি তালিকায় ৬৯টি। গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি ওই বিটে ২ নম্বর খতিয়ানভুক্ত বনে ৪৬টি বাড়ি উচ্ছেদ করতে অভিযান পরিচালনার সব প্রস্তুতি নিয়েও ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে জবরদখলকারীরা নিজ উদ্যোগে বনে নির্মিত ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ৪৬টি বাড়ির মধ্যে মাত্র ১৩টি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কালিয়াকৈর রেঞ্জের চন্দ্রা বিটে ৫ই আগস্ট পরবর্তী কমপক্ষে ২৫০০ ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মিত হলেও বনবিভাগের তালিকায় মাত্র ১৩২৬টি। দুই দফায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি এবং বনবিভাগের নিজস্ব উচ্ছেদ অভিযানের পরেও চন্দ্রা বিটে এখনো ১ হাজারের বেশি স্থাপনা রয়েছে। এ ছাড়া কালিয়াকৈর রেঞ্জের মৌচাক ও বারুইপাড়া বিটে গত নয় মাসে বনে দুই শতাধিক ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। কাচিঘাটা রেঞ্জের কাচিঘাটা সদর, যাথিলা ও খলিশাজানি বিটে গত ৫ই আগস্ট পরবর্তী বনে কমপক্ষে ৭০০ ঘরবাড়ি নির্মিত হলেও জবরদখলের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি ওই রেঞ্জে। শ্রীপুর রেঞ্জের শ্রীপুর সদর, সাতখামাইর, সিমলাপাড়া, রাথুরা, গোসিংগা, সিংড়াতলী ও কাওরাইদ বটে বনে গত ৫ই আগস্ট পরবর্তী এক হাজারের অধিক ঘরবাড়ি নির্মিত হলেও বনবিভাগের তালিকায় রয়েছে মাত্র ১২০টি। অথচ ৫ই আগস্ট পূর্ববর্তী শ্রীপুর রেঞ্জে ব্যক্তিপর্যায় জবরদখলকারীর সংখ্যা ৪ হাজার ৮১ জন। রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের মনিপুর ও রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিটে ৫ই আগস্ট পরবর্তী বনে কমপক্ষে ২৫০টি বাড়ি নির্মিত হয়েছে।
অনুসন্ধান আরও বলছে, গাজীপুর ভাওয়াল ও জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের অধীন সংরক্ষিত বনে কমপক্ষে ৬০টি, শ্রীপুর রেঞ্জে ৫০টি, কালিয়াকৈর রেঞ্জে ৬০টি ও রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জে ১২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং রিসোর্টসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে জবর দখলে।
এ ব্যাপারে জবরদখল তালিকা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক এএসএম জহির উদ্দিন আকন গণমাধ্যমকে জানান, জবরদখল তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। কেউ বাদ পড়েছে কিনা সেটি দেখা হবে। শুধুমাত্র বনের আরএস রেকর্ড ধরে জবরদখল তালিকা প্রস্তুত হয়েছে কিনা সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। জবরদখল তালিকা একটি চলমান প্রক্রিয়া বলেও তিনি জানান।
পাঠকের মতামত
ব্যক্তি ভালো না হলে দেশ ভালো হবে না