দেশ বিদেশ
অনেক উপদেষ্টার ফিটনেস নেই- নুরুল হক নুর
স্টাফ রিপোর্টার
২ জুলাই ২০২৫, বুধবারগণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থান কোনো পুরনো রাজনৈতিক বন্দোবস্তের নেতৃবৃন্দের দ্বারা হয়নি, হয়েছে তরুণদের হাত ধরে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘কোটা সংস্কার থেকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নুরুল হক নুর বলেন, ২০২১ সালে গণঅধিকার পরিষদ আত্মপ্রকাশ করার সময় বলেছিলাম, হামলা, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছি। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবিতে শুরু হলেও পরে তা সাধারণ মানুষের দাবি হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলেছিলাম বাংলাদেশকে পরিবর্তন করতে চাই। তিনি অভিযোগ করেন, যে-ই ক্ষমতায় গেছে, সে-ই ‘রাবণের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়করণের মাধ্যমে ব্যবহার করেছে। নুর বলেন, ঐকমত্য কমিশনে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম একটি স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ দিতে এনসিসি গঠন করতে। এ ছাড়া একই ব্যক্তি যেন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর পদে না থাকতে পারেন তা নিশ্চিত করতে। কিন্তু একটি দলের আপত্তির কারণে এগুলো বাস্তবায়ন হবে কিনা জানি না। তিনি আরও অভিযোগ করেন, চাঁদাবাজি ও ঘুষ বন্ধে আমরা সুস্পষ্ট প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু যারা ক্ষমতায় যেতে চায় বা যাবে বলে মনে করে, তারা এসব প্রস্তাব মানতে চায় না। আবু সাঈদের মৃত্যু প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ১৬ই জুলাই আবু সাঈদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে ছাত্রদের সঙ্গে থাকার আশ্বাস পেয়েছিলাম। আমরা তাদেরকে বলেছিলাম ’১৮ সালে সুযোগ হারিয়েছেন ’২৪-এ যেন পুনরায় ব্যর্থ না হন। রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল। তিনি জুলাই আন্দোলনকে ঐক্যের প্রতীক বলে উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি রাতারাতি বদলানো সম্ভব নয়। অভ্যুত্থানের পর দুই বছরের জন্য জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ শোনেনি। পরে শুনেছি, একটি বড় রাজনৈতিক দল জাতীয় সরকার চায়নি, কারণ তারা তো নিশ্চিত ছিল ক্ষমতায় যাচ্ছে।
নুর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়নি, কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়েছে। জাতীয় পার্টি এখনো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের প্রোটেকশন দেয়া হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। জুলাই আন্দোলনের শহীদদের তালিকায় এমন ব্যক্তির নাম এসেছে যারা আদতে আন্দোলনে ছিলই না, বরং ছিনতাই করতে গিয়ে নিহত হয়েছে। এটা শহীদদের অবমাননা। যেসব দলের রাজনীতির মাঠে সাংগঠনিক অস্তিত্ব নেই তাদের ঐকমত্য কমিশনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সংস্কারে সাংবাদিক, শিক্ষক, পেশাজীবীদের মতামত নেয়া উচিত। গণভোটের মাধ্যমে সংস্কারের ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের ওল্ড জেনারেশনের পলিটিক্স ব্যর্থ হয়েছে বিধায় তরুণদের উত্থান হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে। আমরা এমন অনেক উপদেষ্টাকে দেখেছি, যাদের কোনো ফিটনেস নেই। যারা ছাত্রদের ওপর হামলার পরও মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। প্রতিষ্ঠান বা পদ থাকলেই সব হয় না; সাহসিকতা থাকতে হয়।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সমপাদক রাশেদ খান বলেন, আমরা নেতা হওয়ার জন্য নয়, বরং মেধাবীদের যথাযথ সুযোগ নিশ্চিত করতে আন্দোলনে নেমেছিলাম। ১লা জুলাই ২০১৮ সালে তাকে গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল থেকে আমাকে ও ভিপি নুরকে চোখ, হাত, পা বেঁধে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু তারপরেও আমরা আন্দোলন থেকে পিছপা হইনি। এদেশটা কারও বাপের নয়-এই বক্তব্য দেয়ার কারণেই আমাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোরশেদ মামুন, ঢাকা মহানগরীর সাংগঠনিক সমপাদক তোফাজ্জল হোসেন ও উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ প্রমুখ।