শিক্ষাঙ্গন
পছন্দের প্রার্থীকে পদ দিতে কুবির ছাত্রলীগ সেক্রেটারির হস্তক্ষেপ
কুবি প্রতিনিধি
(২ বছর আগে) ১৩ আগস্ট ২০২২, শনিবার, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে পছন্দের ব্যক্তি বসাতে বিভিন্ন সময়ে হস্তক্ষেপ করেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ। শুক্রবার (১২ আগস্ট) চট্টগ্রাম ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতিকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে কমিটি বিলুপ্ত করার ঘটনার সবার জানাজানি হলে মাজেদের বিষয়টি সবার সামনে চলে আসে। জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়ায় আত্মহত্যার হুমকিও দেন চট্টগ্রাম স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. তারেকুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী কয়েকটি আঞ্চলিক সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতারা জানান, সারা বছর আমরা আমাদের জেলার শিক্ষার্থীদের বহুমুখী সেবা দিয়ে থাকি। সক্রিয়ভাবে আমাদের আঞ্চলিক কমিটিগুলো পরিচালনা করি। অথচ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ ছাত্রলীগের ক্ষমতা নিয়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোতে নোংরা হস্তক্ষেপ করেন। মারধর ও হুমকির ভয়ে কেউ কিছু বলে না। সারাবছর সংগঠনের জন্য কাজ করে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিরা পদ-পদবি পায় মাজেদের কারণে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, অসৎ কোন উদ্দেশ্য না থাকলে মাজেদ এত বড় পদধারী নেতা হয়ে আঞ্চলিক সংগঠনে হস্তক্ষেপ করত না। এখানে নিশ্চিত অর্থের লেনদেন আছে।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) খায়রুল বাশার সাকিবকে সংগঠনটির সভাপতির পদ দিতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার সাধারণ সম্পাদক রিফাত আহমেদ, ছাত্রলীগ নেতা রাশেদুল হক, শরীফ ইসলাম, ছাত্রলীগ কর্মী শাহিনুল ইসলাম গালিবসহ কয়েকজন নেতাকর্মী নবীনবরণ অনুষ্ঠান স্থলে গিয়ে ব্যানার ছিঁড়ে হট্টগোল সৃষ্টি করে। যাদের অনেকেই চট্টগ্রাম এসোসিয়েশনের কেউ না। এসময় অনুষ্ঠান আয়োজকদের মারধরের হুমকি দিতে থাকলে তারা তাদের দেয়া সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। পরে বিষয়টি মানতে না পেরে মো. তারেকুল ইসলাম অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আত্মহত্যা করবেন বলে জানান। পরে তাকে তার পরিবার চট্টগ্রামের অলংকারে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করেন।
আত্মহত্যার কথা জানতে পারলে তিনি তারেকুলের পোস্টে বলেন, তারেক কমিটি করতে দেইনি আমি, কাগজ আমার কাছে নিয়ে আসছি, তুই এমন করিস না...।
এর আগেও খাইরুল বাশার সাকিব কে সভাপতি করতে চাপ করেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি আব্দুল জব্বারকে। তিনি বলেন, এ কমিটি দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের কারণে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। সাকিবকে সভাপতি দিতে পরোক্ষভাবে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতাকর্মী আমাকে দেখা নেওয়ার হুমকিও দেয়। কিন্তু আমি যারা কাজ করে তাদেরকেই দায়িত্ব দিই।
বিষয়গুলোকে অস্বীকার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) খায়রুল বাশার সাকিব বলেন, অনুষ্ঠান নিয়ে এসোসিয়েশনের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছু ঝামেলা হয়েছিল। আমি চট্টগ্রামের ছেলে হিসেবে সমাধান করতে গিয়েছি। সেখানে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের কমিটি গঠনে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে তিনি বলেন, আঞ্চলিক সংগঠনতো ছাত্রলীগের দেখার বিষয় না। তবু কমিটি দিতে গিয়ে একাধিক প্রার্থী থাকায় ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে তারা আমাদের কাছে আসে, আমরা সমাধানের চেষ্টা করি।
কুবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, এটি খুবই নিন্দনীয় একটি কাজ। ছাত্রলীগের যারা আজকের ঘটনায় জড়িত তাদের বিষয়ে জেনে আমি পরবর্তী পদক্ষেপ নিব। আঞ্চলিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তার নিজস্ব নিয়মে চলবে। এখানে ছাত্রলীগের রুল প্লে করার কোন সুয়োগ নেই।
রেজাউল ইসলাম মাজেদের হস্তক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, মাজেদ এই কাজ করে কিনা আমার জানা নেই। হয়তো কেউ আসলে আবেগের জায়গা থেকে হয়তো সমাধান করে থাকে। রাজনৈতিক সংগঠনের বাইরে ছাত্রলীগের সেখানে হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকার নেই। ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের মাথা ঘামানো কোন ভাবেই উচিত না। আর এই বিষয়ে আমার জানা ছিলো না। এইধরনের কাজ যেন না করে আমি তাকে বলব।
আঞ্চলিক কমিটিতে হস্তক্ষেপের পর শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার হুমকির ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, 'ঘটনার সত্যতা পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।'