ঢাকা, ৪ মে ২০২৫, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৫ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

বুটেক্স-পলিটেকনিক সংঘর্ষ

চোখের দৃষ্টি ফিরলো না উৎসবের

রাতুল সাহা
৪ মে ২০২৫, রবিবার
mzamin

ভারতে চিকিৎসা নিয়েও চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাননি বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) মেধাবী শিক্ষার্থী উৎসব পাল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চোখের আইবল ও নার্ভ সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ায় চোখের পরবর্তী কোনো চিকিৎসা সম্ভব নয়। তার চোখে একটি কসমেটিক আই প্রতিস্থাপন করা হয় যেটি দেখতে স্বাভাবিক চোখের মতো হলেও কোনো দৃষ্টিশক্তি দেয় না।
গত বছরের ২৪শে নভেম্বর বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় তার ডান চোখে মারাত্মক আঘাত লাগে। এরপর দেশ-বিদেশ মিলিয়ে চিকিৎসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হলেও চোখের আলো ফিরলো না। ভারতের হায়দরাবাদের এক বিশেষায়িত হাসপাতালে সর্বশেষ চিকিৎসা নেন উৎসব। চিকিৎসকরা জানান, তার চোখের আইবল ও নার্ভ সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে ফলে বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞানে কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করেও কোনো দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশেই দীর্ঘ সময় চিকিৎসা চলে উৎসবের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই সময়ে অর্থসহায়তা করে। এরপর গত মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইটিইটির আর্থিক সহায়তায় উৎসবকে ভারতে পাঠানো হয়।

উৎসব পাল বুটেক্সের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বিভাগের শীর্ষ মেধাবীদের একজন। সংঘর্ষের আগে নিয়মিত টিউশনের পাশাপাশি কোচিংয়ে পড়িয়ে নিজের খরচ নিজেই চালাতেন। কিন্তু চোখ হারানোর পর সেই আয় বন্ধ হয়ে যায়। পড়াশোনায় এসেছে বড়সড় ব্যাঘাত। তিনি যন্ত্রণাকে পাশ কাটিয়ে শেষ সেমিস্টার পরীক্ষা দিয়েছেন ঠিকই, তবে প্রতিটি পৃষ্ঠায় তার কলম চালানো ছিল এক ধরনের যুদ্ধ।

ভারতে অবস্থানকালীন সময়ে উৎসবের বড় ভাই উজ্জ্বল পাল নিজের চোখ উৎসবকে দান করতে চেয়েছিলেন। যদিও চিকিৎসাবিজ্ঞানের বর্তমান অগ্রগতিতে পুরো চোখ (আইবল) প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। কারণ চোখের নার্ভগুলো মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে এবং সেই নার্ভগুলো পুনরায় সংযোগ করার প্রযুক্তি এখনো নেই। শুধুমাত্র কর্নিয়া প্রতিস্থাপন সম্ভব, যেটি চোখের সামনের স্বচ্ছ অংশ। তবে উজ্জ্বল পাল এসব জানতেন না। ভাইয়ের চোখ দিয়ে উৎসবকে দেখতে সাহায্য করতে চাওয়ার মধ্যে ছিল তার ভালোবাসা আর অসহায়ত্ব। তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম, আমি যেহেতু বেসরকারি চাকরি করি, এক চোখ দিয়েই চলতে পারবো। কিন্তু উৎসব তো একজন মেধাবী শিক্ষার্থী, ভবিষ্যৎ প্রকৌশলী সে তো এক চোখ নিয়ে চলতে পারবে না।
বর্তমানে উৎসব ধীরে ধীরে পড়াশোনায় ফেরার চেষ্টা করছেন, তবে এক চোখ হারানোর কারণে মানসিক ও শারীরিকভাবে তাকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন তিনি। শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে ভবিষ্যতের প্রতিটি ধাপেই তাকে লড়াই করতে হবে এক ভিন্ন বাস্তবতায়।

উল্লেখ্য, বুটেক্স-পলিটেকনিক সংঘর্ষের পরপরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, তবে চার মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত জড়িতদের শাস্তির ব্যাপারে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি, যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status