দেশ বিদেশ
সরকারি বাঙলা কলেজে শিক্ষক ছাড়াই চলছে ২ বিভাগ
বাঙলা কলেজ সংবাদদাতা
৩ মে ২০২৫, শনিবাররাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সরকারি বাঙলা কলেজে শিক্ষক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং মার্কেটিং বিভাগে দীর্ঘ ১০ বছর কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। অথচ এই দুই বিভাগেই শিক্ষার্থী রয়েছেন হাজারের ওপরে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক ছাড়াই অন্য বিভাগের শিক্ষকের প্রক্সিতে চলছে এ দুই বিভাগ। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক না থাকায় নিয়মিত ক্লাস, ল্যাব কার্যক্রমসহ পরীক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব বিভাগে শিক্ষক না থাকলেও নিয়মিত চলছে শিক্ষার্থী ভর্তি।
শিক্ষার্থীরা বলেছেন, দীর্ঘদিন বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কলেজ সূত্রে জানা গেছে, শুধু ফিন্যান্স ও মার্কেটিং নয়; দর্শন, ভূগোল ও পরিবেশ, আইসিটিসহ মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। যেখানে প্রতিটি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫০-৫৫০ জন। শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে শিক্ষার মানও ক্রমে নিম্নমুখী হচ্ছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকেই সেলফ-স্টাডি বা ব্যক্তিগত কোচিংয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে শুধু শিক্ষার গুণগত মানই ব্যাহত হচ্ছে না, বরং শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপও বাড়ছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে আমরা ঠিকমতো ক্লাস ও গাইডলাইন পাচ্ছি না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের পাঠ অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে, যা পরীক্ষার প্রস্তুতিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাওন আহমেদ সৈকত বলেন, আমরা সারা বছর সেলফ-স্টাডির ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছি। বিশেষ করে ফিন্যান্স ও মার্কেটিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষক ছাড়া শেখা অসম্ভব হয়ে উঠছে। আমাদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদুল ইসলাম ফাহাদ বলেন, শুধু ক্লাসের অভাবই নয়, শিক্ষক না থাকায় আমরা কোনো একাডেমিক দিকনির্দেশনাও পাচ্ছি না। ফলে পড়াশোনায় সঠিক পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের নিজেদের মতো করে বই পড়ে বুঝতে হয়, যা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যায়। ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী বলেন, মার্কেটিং এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগে শিক্ষক না থাকায় ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের অতিরিক্ত সময় দিয়ে ক্লাস, পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এর ফলে অন্য বিভাগের শিক্ষকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত- দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া, যাতে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।
মার্কেটিং বিভাগে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষার সার্বিক মান উন্নয়ন সংক্রান্ত নানা দাবি নিয়ে চলতি বছরের ১৬ই জানুয়ারি সচিবালয়ে যান কলেজের মার্কেটিং বিভাগের একটি শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি স্মারকলিপি দেয়। তারও এক মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে সরকারি বাঙলা কলেজ অধ্যক্ষ কামরুল হাসান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ সম্পর্কে অবগত এবং এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছি।
নতুন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরই এ সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করছি। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, তারা যেন ধৈর্য ধরে একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যায়। আমরা দ্রুত সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।