দেশ বিদেশ
ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা রাশেদ খানের
‘মুখে গামছা ঢুকিয়ে দেয় যাতে চিৎকার করতে না পারি’
স্টাফ রিপোর্টার
১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইশতিয়াক আহমেদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে অভিযোগ জমা দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। ২০১৮ সালের ১লা জুলাই রাশেদ খানকে গ্রেপ্তার করে ইশতিয়াক আহমেদ ডিএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কক্ষে হাত ও মুখ বেঁধে অমানবিক নির্যাতন চালান বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ অভিযোগ জমা দেন রাশেদ খান।
অভিযোগ দাখিলের পর নিজের ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে রাশেদ খান বলেন, গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ড্রোন দিয়ে নজরদারি, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার সিটিটিসি’র সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইশতিয়াক আহমদ পুলিশ নামধারী একজন সন্ত্রাসী। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনাকে কটূক্তির, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেপ্তারের পর তার দ্বারা আমি নির্মম ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ২০১৮ সালের ১লা জুলাই আমাকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের সময় আমি আক্রান্ত হই। এ সময় ডিএমপিতে নিয়ে যাওয়ার পর পা দিয়ে রক্ত ঝরার কারণে আমাকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ডিএমপি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটে নিয়ে যাওয়ার পরপরই এডিসি ইশতিয়াক আহমদ আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। মা-বাপকে তুলে গালিগালাজ করে আর বলতে থাকে, আমার চোরের মতো চেহারা, আমি শেখ হাসিনাকে গালি দিয়েছি।
রাশেদ খান আরও বলেন, এরপর চেয়ার থেকে উঠে এসে বুঁট দিয়ে আমার অণ্ডকোষে লাথি মারে, আমি চিৎকার করে উঠলে, সে আমাকে চড়-থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি মারতে থাকে। আমি দিশাহারা হয়ে বারবার তার পা জড়িয়ে ধরতে যাই। এরপর সে আমার হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে দিতে বলে, মুখে গামছা ঢুকিয়ে মুখ বাঁধার নির্দেশনা দেয় একজন পুলিশকে। যাতে চিৎকার করতে না পারি। এরপর আমার হাত ও মুখ বেঁধে ফ্লোরে ফেলে পুলিশের মোটা লাঠি দিয়ে একটানা নির্যাতন করে। এ সময় আমার আঙ্গুল ফেটে ফ্লোরে রক্ত পড়ে এবং পুরো শরীর থেতলে যায়। আমি কয়েকবার সেন্সলেস হয়ে পড়ি। আমি তখন আর কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমার স্বাভাবিক সেন্স ছিল না। মনে হচ্ছিলো, আমি মারা যাচ্ছি। দুনিয়ার কোনো চিন্তা আমার মধ্যে ছিল না। মনে হচ্ছিল আমি জাহান্নামে আছি। একটা পর্যায়ে এই কুখ্যাত সন্ত্রাসী ক্লান্ত হওয়ার পরে আমাকে মারা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আমি আর দাঁড়াতে পারছি না। যতবার দাঁড়াতে যাচ্ছি, আমি ততবার পড়ে যাচ্ছি। আর পড়ে গেলেই চেয়ার থেকে বারবার উঠে এসে এই ইশতিয়াক আমাকে লাথি-ঘুষি মারতে থাকে। পুরোদমে ক্লান্ত হওয়ার আগে সে কোনোভাবেই অত্যাচার বন্ধ করে না। আমার সামনেই, ফ্লোরে পড়ে থাকা রক্ত তারা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলে। এত অত্যাচারের পরেও আমাকে কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমি চিকিৎসার অনেক আকুতি করেও কোনো চিকিৎসা পাইনি। আমাকে মাত্র কয়েকটি ব্যথার ট্যাবলেট দেয় তারা। সে সময়কার অত্যাচারের কারণে রিমান্ডে ও কারাগারে থাকাকালীন ঘুমাতে পারিনি। আমার পুরো মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। জেল থেকে বের হওয়ার পর চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পেয়েছি। তবে আমি আজও সুস্থ হতে পারিনি। ওই নির্যাতনের পর থেকে, প্রায়ই আমার পেশার লো হয়ে যায়, শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এখনো পা-হাত ও শরীরের ব্যথায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না, ঘুমের মধ্যে আঁৎকে উঠি। জেল থেকে বের হওয়ার পর দীর্ঘদিন আমি ঘুমের মধ্যেই চিৎকার করে উঠতাম। এই এডিসি ইশতিয়াক আহমেদ আমার মতো অসংখ্য মানুষকে নির্যাতন করেছে। যেহেতু ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই পুনরায় ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থান। সে ২০১৮ সাল থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত। আমি একজন ভুক্তভোগী হিসেবে মানুষরূপী এই হায়েনার উপযুক্ত শাস্তির দাবি করছি।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া গণমাধ্যমের তথ্যমতে, এই অপরাধী পুলিশ কর্মকর্তা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ড্রোন ব্যবহার করে নজরদারি ও ভিডিও ধারণ করে। সুতরাং তার সর্বোচ্চ শাস্তি না হলে শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে। আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
ইশতিয়াক আহমেদকে গ্রেপ্তারে দেরি করা হয়েছে উল্লেখ করে রাশেদ খান বলেন, বিচার যত ধীরে শুরু হবে, অপরাধীরা তত দেশ ছেড়ে পালাবে। প্রশাসনের গাফিলতির সুযোগে অনেক অপরাধী দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। অন্য অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। ইশতিয়াক আহমেদের নির্যাতনের শিকার অন্য ভুক্তভোগীদেরও মামলা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি, ইশতিয়াক আহমেদ জামিন পেয়ে যেতে পারেন। তাকে ছাড়া হলে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে অন্যায় করা হবে।’
এর আগে গত রোববার পুলিশ সিটিটিসি’র সাবেক এ অতিরিক্ত উপ-কমিশনারকে রাঙ্গামাটি থেকে গ্রেপ্তার করে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। গত মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
পাঠকের মতামত
পুলিশ কোনোদিন কোনো কালেই ভালো হবে না, এদের সাথে নামাজ পড়লেও নামাজ হবে না। পুলিশ মানেই বদমাইশ
আমাদের দেশের পুলিশএকবার আওয়ামী লীগ আরেক বার বিএনপি হয়। এর আগে আমরা জজ মিয়ার নাটক দেখিয়েছ। সুতরাং পুলিশের কাজ থেকে গরীব মানুষের ভাল কিছু আশা করা সম্পূর্ণ ভুল। এদের চরিত্র বদলাবে না। শুনছি স্বাধীন কমিশন হচ্ছে। কিন্তু কি লাভ হবে। কমিশনের প্রধান হবে বিএনপি অথবা জামাতের লোক অথবা অন্য কোন দলের লোক। পুলিশ হয়ে যাবে সেই কমিশনের লোক।
পুলিশ নামধারী এইসব কুলাঙ্গারদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক এবং সেটা যাতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে যাতে আর কোন পুলিশ সরকারের চাটোকারিতা করতেন না পারে।
We want Justice