খেলা
জিম্বাবুয়েকে রেকর্ড জয় উপহার শান্তদের
ইশতিয়াক পারভেজ, সিলেট থেকে
২৪ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার
ডাগ আউট থেকে দৌড়ে এসে ওয়েসলি মাধেভেরেকে কোলে তুলে নিলেন সতীর্থরা। জয়ের আনন্দে তখন মাতোয়ারা সফরকারীরা ড্রেসিং রুম ছেড়ে তখন মাঠে উল্লাস করছেন। কেন করবে না! তাদের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এ যে রেকর্ড গড়া এক জয়। ১৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করে যে আগে কখনো জেতেনি জিম্বাবুয়ে। টেস্টে সর্বোচ্চ ১৬২ রান লক্ষ্য তারা জয় পেয়েছিল সেই ১৯৯৮ এ। অন্যদিকে ২০০১ এ তারা বাংলাদেশের দেয়া ১০০ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় তুলে নিয়েছিল। হারারেতে ২৪ বছর আগের সেই দলে ছিলেন অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল। এবারের সফরে তারই ছেলে জোনাথন ক্যাম্পবেল দেখলেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। হয়তো দেশে ফিরে বাবাকে শোনাবেন এই জয়ের গল্প। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৯৫ রানে ভাঙে জিম্বাবুয়ের ওপেনিং জুটি। জয়ের জন্য তখন দুটি সেশন ৭৯ রান তো মামুলি বিষয় হাতে ৯ উইকেট। কিন্ত তখনই বাংলাদেশের স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের তোপে পড়ে খেই হারায় সফরকারীরা। ১৬১ রান তুলতে হারিয়ে ফেরে ৭ উইকেট। তবে দলকে আর বিপদে পড়তে দেননি মাধেভেরে ও রিচার্ড এনগারাভা। ৩ উইকেটের রেকর্ড গড়া জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশকে লজ্জায় ডুবিয়ে। মিরাজ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে ব্যক্তিগত ২’শ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তার দারুণ এই অর্জনের দিন হয়ে থাকলো আক্ষেপ আর হতাশার। চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় জিম্বাবুয়েকে রেকর্ড জয় উপহার দিলেন শান্তরা।
কত লক্ষ্য দিলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতবে বাংলাদেশ! সিলেট টেস্টে তৃতীয় দিন শেষ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় সেই আলোচনা। ১৯৪ রান হাতে ছয় উইকেট নিয়ে শুরু করে টাইগাররা। ক্রিজে ৬০ রান করে অপরাজিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। সঙ্গে জাকের আলী অনিক। ১১২ রানের লিডকে কতদূর নিবেন তারা সেই হিসাব নিকাশ শুরু হতে না হতেই দিনের দ্বিতীয় বলে আউট শান্ত! অবশ্য এখানে জিম্বাবুয়ের বোলারের কৃতিত্ব যতটা তার চেয়ে বেশি টাইগার অধিনায়কের বাজে শট। এরপর জাকেরের লড়াই শুরু কিন্তু উইকেটে তখন আসা যাওয়ার মিছিল। তাকে সঙ্গে দিলেন পেসার হাসান মাহমুদ। দু’জনের ৩৫ রানের জুটিতে লিড যখন ১৬৬ রানে ঠিক তখনই আউট হাসান, এরপর আর বেশি দূর যেতে পারেনি দল। সবশেষ ২০১৮’র নভেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছিল জিম্বাবুয়ে, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই। পরের তিন দেখায় তিনটিতেই জিতেছিল বাংলাদেশ। প্রায় চার বছর পর টেস্টে বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়ে সাড়ে ৬ বছরের জয়খরা কাটাল রোডেশিয়ানরা, সেই সিলেটের মাটিতেই। চার বছর পর টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল দলটি। এরআগে ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জিতেছিল তারা। পরের ১০টি টেস্টে জয় দেখেনি দলটি।
গতকাল সিলেট টেস্টের চতুর্থ দিনে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দিয়ে রানতাড়ায় নেমে সফরকারীদের ভালো শুরু এনে দেন দুই ওপেনার ব্রায়ান বেনেট ও বেন কারেন। উদ্বোধনী জুটিতে ৯৫ রান তোলেন দুজনে। বেন কারেন ৪৪ রানে ফিরে গেলে জুটি ভাঙে। নিক ওয়েলচ ও শন উইলিয়ামস ফিরে যান আলো ছড়ানোর আগেই। দলীয় ১২৮ রানে ব্রায়ান বেনেট ফিরে যান ৫৪ রান করে। পরে আরও তিন ব্যাটারকে হারায় জিম্বাবুয়ে। ক্রেইগ আরভিন ১০ রান এবং মায়াভো ১ রান ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ১২ রান করে ফিরে যান। রিচার্ড এনগারাভাকে নিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছান ওয়েসলি মাধেভেরে। মাধেভেরে ১৯ রানে এবং এনগারাভা ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে মিরাজ ৫ এবং তাইজুল ২ উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫ উইকেট নিলেন মিরাজ, ম্যাচে নিলেন ১০ উইকেট। টেস্টে ৫২তম ম্যাচে এসে ২০০ উইকেটের দেখা পেলেন টাইগার অফস্পিনার। টেস্ট ইনিংসে ১২বার ৫ বা ততোধিক উইকেট ও ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩বার ১০ বা ততোধিক উইকেটের দেখা পেলেন মিরাজ। এর আগে ৪ উইকেটে ১৯৪ রান তুলে তৃতীয় দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টির বাধা পেরিয়ে বুধবার চতুর্থ দিন দুপুর এগারোটায় গড়ায় খেলা। দিনের শুরুতেই ফিরে যান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ৬০ রান করেন। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামও দ্রুত ফেরেন। হাসান মাহমুদকে নিয়ে লিড দেড়শ পার করেন জাকের আলি। ফিফটি তুলে নেন। ৭৮তম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন মাসাকাদজা। হাসান ও খালেদকে ফেরান। পরে জাকের স্কোর বড় করার চেষ্টা করেন। ৭৯.২ ওভারে মুজারাবানির ষষ্ঠ শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। ৫৮ রান করেন জাকের। হাসান মাহমুদ ১২ রান এবং মিরাজ ১১ রান করেন।