বাংলারজমিন
সীমান্ত পেরিয়ে ঘুরতে গিয়ে বিএসএফের হাতে আটক দেবীদ্বারের মান্নান
দেবীদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতা
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবারসীমান্তে বেড়াতে গিয়ে ভারতের বড়বিল্লাহ বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার মান্নানসহ তিন যুবককে আটক করেছে। এরপর তাকে ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডাউকি থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারায় মামলা রুজু করে তাকে জোয়াই কারাগারে পাঠিয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল বিকালে সিলেটের গোয়াইনঘাট সিমান্তে এ ঘটনা ঘটে। আটককৃত মান্নান উপজেলার ধামতী ইউনিয়নের পদুয়া গ্রামের হাজী বাড়ির ছেলে। তার বাবা মো. মজিবুর রহমান মারা গেছেন অনেক আগে। সংসারের বড় ছেলে আব্দুল হান্নান তার ছোট ভাই বিল্লাল(১৬)কে নিয়ে ঢাকা ফতুল্লা এলঅকায় একটি চা দোকানে কাজ করেন। লেখাপড়া করা একমাত্র অবলম্বন ছিল মান্নান। নোয়াখালী চন্দ্রগঞ্জ পূর্ববাজারের বদ্ধবাড়িপুল এলাকার একটি মাদ্রাসায় কিতাব বিভাগে লেখাপড়া করেন।
মান্নানের বড় ভাই হান্নান জানান, তার ভাই গত ১৬ এপ্রিল নোয়াখালী মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। মঙ্গলবার দুপুরে তার ভাই ভারত থেকে ফোনে জানায়, সে তার আরো তিন বন্ধুকে নিয়ে গত ১৬ এপ্রিল বিকালে ভুল করে সিলেট গোয়াইনঘাটের বেউরঝারী সীমান্ত দিয়ে বেড়াতে গিয়ে বিএসএফ’র কাছে আটক হয়ে এখন কারাগারে আছে। তিনি জানান, ফোনে ভারত থেকে একজন আইনজীবী পরিচয়ে অনেক কথা বলেন। তিনি ম্যাসেঞ্জারে লিখে জানান, ‘আমি একজন আইনজীবী, বিদেশে জামিন দেয়ার কাজে আমি বিশেষজ্ঞ, আপনার আত্মীয় আব্দুল মান্নান বর্তমানে জোয়াই জেলা কারাগারে বন্দী। যদি আমরা তার মুক্তির জন্য জামিনের আবেদন না করি, তাহলে তাকে প্রায় ৪-৫ আবেদন না করি, তাহলে তাকে প্রায় ৪-৫ বছর ধরে কট্টর অপরাধিওদের সাথে জেলে কাটাতে হবে। তার মুক্তির জন্য ৯০ হাজার ভারতীয় মুদ্রা চার্জ করতে হবে। আমি ২০ হাজার টাকা অগ্রিম নেব এবং সমস্ত কাজ সম্পন্ন হলে এবং জামিন সফল হলে বাকী টাকা আমি নেব। দয়া করে এটি জরুরী বিবেচনা করুন।’
ওই আইনজীবীর কাছে জানতে চাই, ‘তাকে কোন অভিযোগে আটক করা হয়েছে? তার মামলার নথি দেন। বিষয়টি পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্তের প্রয়োজন আছে, টাকা পাঠাবার প্রক্রিয়া কি তাও জানাবেন।’ তার জবাবে ওই আইনজীবী জানান, ‘অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের জন্য তাকে ১৯৪৬ সালের বিদেশী আইনের ১৪ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। সদি টাকা প্রস্তুত থাকে, তাহলে আপনাকে তা বাংলাদেশে আমার এক বন্ধুর কাছে পাঠাতে হবে এবং তিনি তা ভারতে পাঠাতে সাহায্য করবেন।’ এ ব্যপারে বিজিবি ৫০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল তানজীম আহম্মেদ তাকে জানিয়েছেন, মান্নান সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করায় বিএসএফ তাকে আটক করেছে। এরপর অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় পুলিশ তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।
ওই সাংবাদিক বিষয়টি নিশ্চিত হতে ভারতীয় হাই কমিশনারের নাম প্রকাশে এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেন। ওই কর্মকর্তা জানান, খারতে অনেক প্রতারক আছে। আসামী জামিন কিংবা ছাড়িয়ে আনার ক্ষেত্রে কারোর সাথে টাকা লেনদেন করবেন না। বিষয়টি ভারত- বাংলাদেশ হাই কমিশনারের মাধ্যমে চিটি চালাচলির মাধ্যমে করতে হবে। মঙ্গলবার দুপুরে এ খবর শোনার পর থেকেই মান্নানের মা আয়েশা বেগমের ঘরে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। বুকফাটা আর্তনাদে তিনি বলেন, আমার মান্নান কোনো অপরাধী না। সে তো ঘুরতে গিয়েছিল। ওর কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন, আমি তাকে ছাড়া বাঁচবো না। দেশের সরকার এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কাছে আয়েশার একটাই অনুরোধ ‘মান্নানকে ফিরিয়ে আনুন। আমি শুধু আমার ছেলেটাকে চাই, জীবিত চাই!