বাংলারজমিন
অধরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিহ্নিত ২ মাদক সম্র্রাট
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবারএলাকাবাসী, রাজনৈতিক দলের নেতা, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর- সবাই জানেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাদকের গডফাদার কারা। তাদের বিরুদ্ধে মাদকের একাধিক মামলাও আছে। প্রশাসনের কাছে আছে তাদের বাসাবাড়ির ঠিকানাও। কিন্তু তারা আছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ উঠেছে, রাজনীতিবিদরা কারবারিদের শেল্টার দিয়ে মাদক উদ্ধারকারী সংস্থার কাজ কঠিন করে তোলেন। এতদিন যারা আওয়ামী লীগ নেতা-এমপিদের প্রশ্রয় পেয়েছেন এখন তারা বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায়।
স্থানীয়দের প্রশ্ন- মাদক কারবারিরা চিহ্নিত হওয়ার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না? প্রশাসন সবকিছু জানলেও এলাকায় কীভাবে মাদকের বিস্তার ঘটছে? কারা তাদের শেল্টার দিচ্ছে? মাদক উদ্ধারকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা তথ্য বলছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকার মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন মো. নুরুল ইসলাম ও মো. জুয়েল রানা। দু’জনই চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তারা পাশের দেশ ভারত থেকে হেরোইন-ইয়াবা বাংলাদেশে আনেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন তাদের সহায়তাকারীরা। নুরুল-জুয়েল এলাকায় মাদক সম্র্রাট হিসেবে পরিচিত। ভারত-বংলাদেশ দু’দেশেই তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। মাদকের দুই গডফাদার এতদিন প্রকাশ্যে থাকলেও সম্প্রতি আধিপত্যের দ্বন্দ্বে হওয়া দু’টি বিস্ফোরক আইনের মামলায় তারা পলাতক। তাদের খুঁজছে পুলিশ।
আগের মামলার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৩টি মাদক মামলার আসামি নুরুল ইসলাম। জুয়েল রানার বিরুদ্ধেও আছে চার মামলা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ভারতের সীমান্তঘেঁষা পদ্মাপাড়ের ইউনিয়ন চরবাগডাঙ্গার বাসিন্দাদের একটি অংশ মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত। সেখানকার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাদক কারবারের নেপথ্যে জড়িত। জনপ্রতিনিধিরাও মাদক সিন্ডিকেটে জড়িয়ে আছেন। কেউ অর্থ দিয়ে, কেউ হাতবদল করে, কেউ সরাসরি যুক্ত থেকে কোনো না কোনোভাবে এসব চালান পার করতে সহযোগিতা করেন। সরকার পরিবর্তনের পরেও ওই এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এখনো তাদের কব্জাতেই রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম গডফাদার তাঁতীলীগ নেতা নুরুল। তার পুরো পরিবারই মাদকের সঙ্গে জড়িত। মাদকের ব্যবসা করে নুরুল ও তার ভাই-ভাতিজা এবং জুয়েল মেম্বার ও তার পরিবার আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকাসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় নামে-বেনামে রয়েছে তাদের একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট ও বাড়ি। এতদিন নুরুল-জুয়েল আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে মাদক সিন্ডিকেট চালিয়েছেন। দু’জনই আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আব্দুল ওদুদের ছত্রছায়ায় থেকে মাদক কারবার চালিয়েছেন। এখন তারা বিএনপি’র মঞ্চে। এছাড়াও মাদক সম্রাট জুয়েল রানা নিজেকে স্থানীয় একটি সংবাদপত্রের প্রতিনিধিও পরিচয় দেন। ফলে ক্ষমতার পালাবদলেও বীরদর্পে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
সদর উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নে মাদকের বিস্তার অনেক বেশি। মাদক কারবারিদের কারণে এই ইউনিয়নটির বদনাম হয়ে গেছে। জনপ্রতিনিধিরা মাদক কারবারে জড়িত থাকায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। কারা মাদক ব্যবসা করে সেটা আমরা সবাই জানি। এটা পুলিশও জানে। তারপরও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপ্স) এএনএম ওয়াসিম ফিরোজ বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স (শূন্য সহনশীলতা) অবস্থান আমাদের সবসময়ই আছে। মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। পুলিশের সবগুলো ইউনিট মাদক উদ্ধারে সক্রিয়। আশা করি খুব দ্রুতই আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো।