ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

ঝিনাইদহে অনলাইন জুয়ার বেপরোয়া ফাঁদ, কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
mzamin

অনলাইন জুয়ার ফাঁদে ঝুঁকে পড়েছে ঝিনাইদহের তরুণ-যুবক ও কিছু দিনমজুর শ্রেণির লোক। অবৈধ ও বিটিআরসি অননুমোদিত অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে চলছে জুয়ার বাণিজ্য। সকাল- দুপুর কিংবা মধ্যরাতে মোবাইল ফোনে চলছে জুয়ার আসর। দেখে বোঝার উপায় নেই হাতে থাকা মোবাইল ফোনেই অপরাধ জগতের এক ভয়াল জগতে নিমজ্জিত তরুণ-যুবক ও রিকশা, অটোভ্যান, ইজিবাইকচালকরা। তাদের হাতে থাকা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন দিয়ে অখ্যাত অ্যাপের মাধ্যমে চলছে অবৈধ পথে অবৈধ অর্থ লেনদেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, অবৈধ এসব জুয়ার অ্যাপে জেলা থেকে প্রতিমাসে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। চাঞ্চল্যকর অনলাইন জুয়ার আসর শহর ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও। দিনমজুররা তাদের সারা দিনের আয় করা টাকা জুয়া খেলে হেরে পরিবারে চলছে চরম অশান্তির ঝড়। তবুও অজানা কোন কারণে টনক নড়েনি প্রশাসনের। এ নিয়ে সচেতন মহল ও অভিভাবকদের মধ্যে বেড়েছে শঙ্কা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের জন্য অনুমোদিত অ্যাপ্লিকেশন পেতে গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপল স্টোর একমাত্র উৎস। কিন্তু অবৈধ ও বিটিআরসি’র অননুমোদিত অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে রমরমা অনলাইন জুয়ার-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এসব ক্ষতিকর অ্যাপ ব্যবহার করতে মোবাইল ফোনে বেড়েছে ভিপিএন সফ্‌টওয়্যারের ব্যবহার। এর আগে বিভিন্ন সময়ে প্রতারক চক্রটির কয়েকজন সদস্য গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে তারা আবারও পুরনো অপরাধ জগতে ফিরেছে। দাপটের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে ভার্চ্যুয়াল প্রতারণা। বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, এসব জুয়ার  পেছনে তদারকির জন্য রয়েছে স্থানীয় একাধিক এজেন্ট। যারা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে জুয়ার গ্রাহকদের কথিত আইডি তৈরি করে দেয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। একজন গ্রাহক নিজের আইডি চালু করার পর অন্য কাউকে আইডি চালু করাতে পারলে পাচ্ছেন বাড়তি বোনাস। এসব কথিত বোনাস ও রাতারাতি বড়লোক হওয়ার ভুয়া স্বপ্নে প্রতারকদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন উঠতি তরুণ, যুবকসহ নানা বয়সের মানুষ। পেশাজীবী, শ্রমজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অনেকেই এসব জুয়ায় মেতেছেন। সূত্রটি বলছে, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে জুয়ার মাধ্যমে কথিত উপার্জিত টাকা দেশের অনুমোদিত কোনো ব্যাংকেই লেনদেন সম্ভব নয়। যে কারণে স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমেই এসব কথিত জুয়ার টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। ভিপিএন সফ্‌টওয়্যার ব্যবহার করে রাতভর মোবাইলে মোবাইলে চলছে রমরমা জুয়ার আসর। যে কারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কোনো কূল-কিনারা করতে পারছেন না। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, অনলাইন জুয়ায় যে টাকা কথিত উপার্জন হিসেবে দেখানো হয়, প্রকৃতপক্ষে তা কোনো ব্যাংকিং বা অনুমোদিত আর্থিক চ্যানেলে উত্তোলন কিংবা জমা দেয়া অসম্ভব। প্রতারক জুয়াড়ি চক্র এজেন্ট ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে থাকে। চক্রটি কৌশলে টাকার হাত বদল ঘটায় মাত্র। তবে এসব জুয়ায় অর্জিত টাকার কোনো অস্তিত্ব অনুমোদিত আর্থিক চ্যানেলে পাওয়া যাবে না। অনলাইন জুয়ায় আসক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ জানান, তিনি তিন মাস ধরে একটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া খেলছেন। জুয়ার মাধ্যমে অর্জিত টাকা কোনো ব্যাংক বা সরকার অনুমোদিত আর্থিক মাধ্যম থেকে উত্তোলন করতে পারেননি। কথিত উপার্জিত সব টাকা তিনি নির্ধারিত এজেন্টের মাধ্যমেই উত্তোলন করেছেন। অনেক সময় এজেন্টরা গ্রাহকদের সঙ্গে এ নিয়ে প্রতারণাও করে থাকেন। জুয়ায় আসক্ত মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জেনে বুঝেই সাময়িক লাভের নেশায় অনেকেই মোবাইল ফোনের এসব জুয়ার ফাঁদে পড়ছে। অনেক সময় অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের এজেন্টরা রাতারাতি মোটা টাকা হাতিয়ে উধাও হয়ে যান। এ রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, অনলাইন জুয়ার বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি ও চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ না পাওয়ায় কাউকে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি, নানামুখী অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে। এ ধরনের প্রতারণা ও প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তকরণে আমাদের বিভিন্ন টিম সক্রিয় রয়েছে।
জেলা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের ইনচার্জ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের স্বাধীনতা রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনলাইনে নানান রকম প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। অনলাইন জুয়া তেমনি একটি অপরাধ। এটা রোধে সচেনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অনলাইন জুয়ায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তারা নির্ভয়ে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলে অভিযোগ করতে পারেন। আমরা সর্বোচ্চ আইনগত সুবিধা দেবো। সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল এ বিষয়টি নিয়ে তৎপর রয়েছে।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status