বাংলারজমিন
বাজারে মিলছে না দেশি প্রজাতির মাছ
জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা
২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলাটি হাওরে বেষ্টিত। অসংখ্য নদ-নদী, খালবিল, ডোবা থাকার কারণে সবসময় মাছে ভরপুর থাকে। তবে বর্তমানে এই মাছের রাজ্যে দেখা দিয়েছে দেশীয় প্রজাতি মাছের সংকট। জামালগঞ্জ উপজেলাটি হাওর অঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। প্রতিটি ইউনিয়নে ছোট-বড় অনেক বাজার রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী জামালগঞ্জ-সাচনাবাজারসহ গ্রামীণ হাট-বাজারও এখন হাইব্রিড মাছের দখলে।
বেশ কিছু বাজারে দেখা গেছে, পুকুরের চাষ করা পাঙ্গাশ, কই, তেলাপিয়া ছাড়া প্রাকৃতিক পানির মাছ নেই বললেই চলে। বাজার এখন চাষের মাছের দখলে। আর যে দু-একটা জাতের মাছ পাওয়া যায়, তার দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। বাজারে পুকুরে চাষকৃত মাছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বিভিন্ন এলাকার মাছ বাজারে দেখা গেছে দাম-দরের অস্থিরতা। দুই-তিন বছর আগেও যেখানে তেলাপিয়া ছিল মধ্যবিত্তের সাধ্যের ভেতরে, সেখানে তেলাপিয়ার দাম এখন দ্রুত গতিতে বাড়ছে। একই অবস্থা পাঙ্গাশেরও। বাজারে আকারভেদে তেলাপিয়ার কেজি দুইশ’ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বছরের এমন দিনে তেলাপিয়ার কেজি ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে।
গরিবের মাছ হিসেবে খ্যাত পাঙ্গাশ গত বছর ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন তা ১৮০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সিলভার কার্প আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। এ জাতীয় মাছেই আমিষের চাহিদা মিটতো নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের। কিন্তু দাম বাড়ায় সেটিও এখন অনেকের কপালে জুটছে না।
দিনমজুর, শ্রমিকদের জন্য এই দরে মাছ ক্রয় করা কষ্টসাধ্য। একজন ক্রেতা বলেন, আগে তো হাওরে গেলে দেশীয় কিছু মাছ ধরে জীবন ধারণ করা যেতো, এখন এই পথও বন্ধ। কারণ হিসেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাওরের যত বিল ডোবা আছে সবগুলো সরকারি ইজারার অন্তর্ভুক্ত হওয়াতে ধনী ব্যক্তিরা এগুলো সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয়। একটি বিল ও থাকে না জনগণের জন্য। তাহলে আমরা মাছ ধরবো কোথায়? ইজারাদাররা তো তাদের বিলের সীমানা পর্যন্ত পাহারাদার দিয়ে রাখেন।
মৎস্যজীবী দেবল পাল বলেন, ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে জলমহালের ইজারাদাররা বিল শুকিয়ে মাছ ধরে এলাকার বাইরের পাইকারদের কাছে বেশি দামে বিক্রির কারণে মাছের সংকট দেখা দেয়।
জামালগঞ্জ হাওর এলাকায় এক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ মিঠা পানির দেশি সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেতো। প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া ওই মাছ স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ভৈরবে রপ্তানি করা হতো। যা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির খাতে ভূমিকা রাখতো। কিন্তু এখন আর এইসব মাছ সচরাচর চোখে পড়ে না। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে অবাধে জলমহাল সেচে মৎস্য নিধন করার মূল কারণেই দেশি মাছ কমে যাচ্ছে।
নির্বিচারে পোনা মাছ ধরা, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, কৃষি জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার, বর্ষায় মাছের প্রজনন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে হাওরের প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ।
পাঠকের মতামত
দেশী প্রজাতির মাছ রক্ষায় সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দেশী প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিলুপ্ত হওয়ার আগেই পরিকল্পনা করা ও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।