বাংলারজমিন
অন্ধত্ব রুখতে পারেনি আরশাদ আলীকে
আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে
২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
আরশাদ আলীর দুই চোখই অন্ধ। ছোটবেলায় গুটি বসন্তে চোখের আলো হারান তিনি। সেই ৬ বছর বয়স থেকে আজও তাকে থামাতে পারেনি তার জীবন যুদ্ধ। অন্ধত্ব রুখতে পারেনি আরশাদ আলীকে। জীবনযাপনে সাময়িক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও দৃষ্টিহীনতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। আর ১০ জন মানুষের মতোই নিত্যদিন স্বাভাবিক কাজকর্ম করেন অদম্য আরশাদ আলী। গবাদি পশুর জন্য ঘাস কাটা, পরিবারের জন্য বাজার সদাই কেনাকাটা, সংসারের খুঁটিনাটি কাজকর্ম ও ব্যক্তিগত কাজ স্বাভাবিকভাবেই করে যাচ্ছেন তিনি। দুই চোখে দেখতে না পারলেও অন্তরের আলো দিয়েই তিনি পথ চলেন প্রতিনিয়ত।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানি ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আরশাদ আলী। বৈবাহিক জীবনে আরশাদ আলী এক ছেলে ও এক মেয়ের পিতা। আরশাদ আলী জানান, ১৯৭২ সালে তার বয়স যখন ছয় বছর তখন পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে গুটি বসন্ত। মহামারি রোগে গ্রামের অন্তত ১৮-২০ জন মারা যান। ওই বছরই গুটি বসন্তে আক্রান্ত হন তিনিও। সঠিক চিকিৎসার অভাবে গুটি বসন্তের প্রভাবে তার দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকেই অন্ধত্ব নিয়ে চলছে তার জীবনের পথ চলা।
মা আইজান নেছা জানান, ছোটবেলায় চোখ হারানোর পরে আরশাদ আলী অনেক কষ্টে বড় হয়েছে। পথ চলতে প্রতিনিয়ত চোট পেতেন, বহুবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন তিনি। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এক বিস্ময়কর মানুষ হিসেবে গড়ে উঠে সে। এখন নিজের ও সংসারের সকল কাজ নিজ হাতে করেন আরশাদ আলী। হলিধানী ইউনিয়নের মেম্বার সাদ আহম্মেদ জানান, প্রতিদিন সকালে গবাদি পশুর ঘাস নিজ হাতে কাটেন আরশাদ। ঘাস সংগ্রহ করতে তিনি চলে যান বাড়ি থেকে অনেক দূরের মাঠে। আবার কাজ শেষে একাই ফিরে আসেন। কাজ করতে গিয়ে তিনি কারও সহযোগিতা নেন না। সম্পূর্ণ অনুমানের উপরে নির্ভর করে তিনি পথ চলেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি আরশাদ আলী বলেন, চোখের আলো নেই তাতে কি? আল্লাহ পাক তো আমার হাত, পা, মুখ সবই দিয়েছেন। তিনি ইচ্ছা শক্তি দিয়ে সব কিছুই স্বাভাবিক ভাবে করতে পারেন বলে জানান। তার দৃষ্টিহীন জীবন নিয়ে কোনো আফসোস আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আরশাদ বলেন, জীবন নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। আমি মনে করি, ইচ্ছা শক্তি কাজে লাগিয়ে জীবন এগিয়ে নেয়া সম্ভব। শারীরিক অক্ষমতা একটা পরীক্ষা মাত্র। চাইলেই সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায়।