ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

জ্বালানি নিয়ে দুশ্চিন্তা লোডশেডিংয়ের শঙ্কা

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
১৪ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
mzamin

গরম বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। তবে এখনো তা তীব্র হয়নি। শহরাঞ্চলে শোডশেডিং কম হলেও গ্রামাঞ্চলে বেশি। শহরে লোডশেডিং হলেও তা থাকছে সহনীয় মাত্রায়। বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য মিলছে। তবে এবছর অভয় দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে যাতে লোডশেডিং কম হয়, সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সরকার। যদি হয় তাহলে প্রথমে ঢাকা শহরেই হবে, এরপর দেশের অন্য কোথাও হবে।
এদিকে এবার রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেয়েছেন গ্রাহকরা। বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা মেটাতে আগে থেকেই পরিকল্পনা মতো জ্বালানি আমদানিতে গুরুত্ব দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। তবে সামনে গরমে লোডশেডিংয়ের শঙ্কা প্রকাশ করছেন কর্মকর্তারা। ভোগাতে পারে জ্বালানি ঘাটতি।

গত মার্চ থেকে সেচ মৌসুম শুরু হয়েছে। গরম মৌসুমে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট। জ্বালানি সংকটের কারণে বর্তমানে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত সরকারের যে প্রস্তুতি, তাতে গরমে দৈনিক গড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হতে পারে। অর্থাৎ প্রায় ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা লোডশেডিং আরও বাড়াবে। পিডিবি ওয়েবসাইট সূত্র মতে, ১২ই এপ্রিল সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। আর  সরবরাহ ছিল ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। 

দেশে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত তীব্র গরম অনুভূত হয়। জানা গেছে, এ সময়ে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রগুলোয় জ্বালানি সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখার জন্য দরকার হবে ৭০ হাজার কোটি টাকা, যার পুরোটাই ডলারে পরিশোধ করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাবদ প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। আর গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পেট্রোবাংলা ২৪ হাজার কোটি টাকার এলএনজি আমদানির অর্থ চেয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা লাগবে বকেয়া পরিশোধে। এই অর্থ পরিশোধ করতে পারলে গ্রীষ্মে বিদ্যুতের সংকট গভীর হবে না। আর বৈদেশিক মুদ্রা জোগাড় করতে না পারলে জ্বালানি ঘাটতি বাড়বে, বাড়বে সংকটও।

এদিকে, কারিগরি ত্রুটির কারণে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় নির্মিত আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় শুক্রবার রাতে। এর ১৭ ঘণ্টা পর শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় একটি ইউনিট থেকে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে। পিডিবি’র কর্মকর্তারা বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল। ৮ই এপ্রিল প্রথম ইউনিট বন্ধের পরও ৭৫০ মেগাওয়াটের বেশি সরবরাহ করা হয়েছে। শনিবার সারা দিন কোনো বিদ্যুৎ আসেনি। এতে দিনের বেলায় বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করতে হয়েছে। পিজিসিবি ও পিডিবি সূত্র বলছে, আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের কারণে বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে পেট্রোবাংলাকে অনুরোধ করা হয়েছে। দিনে সর্বোচ্চ চাহিদা উঠেছে বেলা তিনটায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। এ সময় ৪২৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। এর আগের দুই ঘণ্টাতেও ৩০০ মেগাওয়াটের বেশি হারে লোডশেডিং করতে হয়েছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিতর্ক আছে। আদানির সঙ্গে পিডিবি’র চুক্তি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়েও বিরোধ আছে। এটি নিয়ে আদানি ও পিডিবি’র মধ্যে আলোচনা চলছে। বকেয়া শোধ নিয়েও বিভিন্ন সময় তাগাদা দিয়েছে আদানি। এর মধ্যে গত বছর একবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছিল আদানি। এরপর নিয়মিত চলতি বিল পরিশোধ করায় তারা একটি ইউনিটের উৎপাদন চালু করে। গত ফেব্রুয়ারিতে পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুরোধ করে পিডিবি। মার্চের শুরু থেকেই দুটি ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তারা। পিডিবি সূত্র বলছে, আদানির বকেয়া কমে এসেছে। এখন তাদের পাওনা ৫০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। এতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে পিডিবি।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার নানা পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেদিকে তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন। কয়লা, ফার্নেস অয়েল, তরল তৈল এবং গ্যাস আমদানির প্রতি তারা নজর দিচ্ছেন। গ্রীষ্মে সাড়ে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা মাথায় রেখে এগুচ্ছেন তারা।  কোনো মেশিন নষ্ট না হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।

এদিকে, গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ-জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিতে জুন পর্যন্ত ৬৩ হাজার কোটি টাকা (৫১৭ কোটি মার্কিন ডলার) চেয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। জুন পর্যন্ত এলএনজি, বিদ্যুৎ ও তেল আমদানি এবং বকেয়া বিল শোধ করতে এই অর্থ প্রয়োজন বলে অর্থ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এপ্রিল ও মে মাসে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। একই সঙ্গে চলছে সেচ মৌসুম। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবার গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, এবারের গরমে লোডশেডিং হতে পারে দেড় হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু অর্থ ও ডলার সংকটে জ্বালানি আমদানি বাধাগ্রস্ত হলে লোডশেডিং ৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার ১১৫ মেগাওয়াট। জ্বালানি সংকট, কেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ ও অদক্ষতার কারণে চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। গরমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দিনে প্রয়োজন দেড় লাখ টন ফার্নেস অয়েল ও ১৫ থেকে ১৬ হাজার টন ডিজেল। দৈনিক কয়লার চাহিদা ৪০ হাজার টন। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে দিনে ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পাচ্ছে গড়ে ১০৫ কোটি ঘনফুট। এপ্রিলে গড়ে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দেয়ার কথা। গত বছর বিদ্যুৎ খাতে গড়ে ১১০ থেকে ১১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিয়েছিল পেট্রোবাংলা।

পাঠকের মতামত

সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস এই দুই সেক্টরেই চুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না।বিদ্যুৎ ও গ্যাস অফিসের লোকজনই গ্রাহকদের চুরি করা শিখিয়ে দিচ্ছে।

অর্বাচীন
১৪ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৮:৪৮ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status