প্রথম পাতা
বিনিয়োগ সম্মেলনে ৩১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৪ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫-এর চারদিনের আয়োজনে দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান এ তথ্য জানান। আরও বিনিয়োগ প্রস্তাব পাইপলাইনে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, সদ্য শেষ হওয়া বিনিয়োগ সামিট থেকে আমাদের উপলব্ধি হচ্ছে যে এরকম সামিট নিয়মিত করা উচিত। সেটি বছরে একবার হতে পারে। তবে আমরা যে আগ্রহ দেখেছি তার জন্য কৃতজ্ঞ। ইতিবাচক ধারণা তৈরি করার মতো এ ধরনের অনুষ্ঠান আমরা ভবিষ্যতে আরও আয়োজনের চেষ্টা করবো। পরবর্তী সরকারের এ রকম উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সামিট সফল হয়েছে কি হয়নি, এটা সময় বলে দেবে।
এ সময় বিডা’র হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান বলেন, সামিটের চারদিনে সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছে। প্যানেলিস্ট, এক্সপার্টসহ অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ১৩০। চারদিনে অফিসিয়াল মিটিং হয়েছে ১৫০টি। অফিসিয়ালি আমাদের সামিটে বিনিয়োগ ঘোষণা হয়েছে দুটি। একটি হান্ডা ইন্ডাস্ট্রি, আরেকটি শপআপ। এই বিনিয়োগের মোট পরিমাণ ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এর বাইরে সমঝোতা সই হয়েছে ৬টি।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ৭ই এপ্রিল থেকে চার দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। তবে সম্মেলনে যারা অংশীদার হিসেবে ছিলেন, তারা ব্যয় করেছেন প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। সবমিলিয়ে চারদিনের সম্মেলনে খরচ হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। আমাদের প্রথম আনুমানিক খরচের চেয়ে ৪২ শতাংশ কম।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ হয়েছে আমাদের এই সামিট করতে। ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার পুরো ক্রেডিট এই সামিটকে দেয়া ঠিক হবে না। এই সামিটের আগে অনেক কাজ করে এই ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা আনা হয়েছে। পৃথিবীর কোনো মানুষ কোনো একটা সামিটে এসে আবেগপ্রবণ হয়ে হঠাৎ করে একটা ১০০ কোটি টাকার চেক লিখে ফেলে না। যারা কতো টাকা বিনিয়োগ হলো তার ওপর নির্ভর করে সামিটের সাফল্য হিসাব করতে চান, তাদের আমার পরামর্শ এটার ওপর নির্ভর করে সাফল্য নিরূপণ করবেন না।
তিনি আরও বলেন, সামিটের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশ নিয়ে মূল যে ধারণা সেটা বদলাতে। বিদেশিরা যখন প্রথম এসে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা ধারণা নিয়ে ফেরত যান, এরপর গুগল ব্যবহার করে একই ধারণা পান না। এখন যারা এসেছেন তারা ফিরে গিয়ে তাদের বন্ধু-বান্ধবদের বলবেন যে গুগল করে যা দেখেছি সেটা সত্য না। কারণ প্রথম দুইদিন আমরা তাদের বাংলাদেশ ঘুরিয়ে দেখিয়েছি। ৯ই এপ্রিল আমরা তাদের আমাদের ভিশন দেয়ার চেষ্টা করেছি। এরপর আমরা বিভিন্ন মিটিং করার সুযোগ দিয়েছি। সেই চারপাশের যে ছবি আমরা দেখানোর চেষ্টা করেছি তার থেকে আমাদের কাছে বিদেশিদের যে ফিডব্যাক হচ্ছে, তারা খুব খুশি হয়েছেন এমন সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ফ্যাক্টরি ভিজিট করিয়েছি। ফ্যাক্টরি করতে হলে কোথায় যেতে হবে, তাদের দেখানো হয়েছে। সম্মেলনে এসে বিনিয়োগকারীরা খুব খুশি হয়েছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য খাবারের ম্যানু থেকে আমরা যেন আগেই বাদ না পড়ে যাই। আমরা একইসঙ্গে সংস্কারের কাজ করবো, আর বিনিয়োগের পাইপলাইন বিল্ডিং এর কাজ করে রাখবো।
তিনি আরও জানান, বিনিয়োগের পাইপলাইন ঠিক রাখতে বিনিয়োগ সম্মেলনে আসা সবাইকে থ্যাংক ইউ মেইল পাঠানো হবে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৭ থেকে ১০ই এপ্রিল রাজধানী ঢাকায় হয়ে গেল বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫। দেশি-বিদেশি কমপক্ষে সাড়ে চারশোর মতো বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছিলেন এই আয়োজনে। চারদিনের এই সম্মেলনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের অমিত সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন আয়োজকরা, তরুণ প্রজন্মকে সামনে রেখে ২০৩৫ সালের রূপরেখা তুলে ধরেন তারা। ফলশ্রুতিতে অধীর আগ্রহ দেখিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে বিডার বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।