প্রথম পাতা
ইলিশের ক্রেতা কম, দাম চড়া
স্টাফ রিপোর্টার
১৪ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার রীতিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে সম্প্রতি। পান্তা-ইলিশ বাংলা নববর্ষের কোনো অনুষঙ্গ নয় এমন প্রচার- প্রচারণা চলছে কয়েক বছর ধরে। এ ছাড়া এই সময়ে ইলিশের উচ্চ দামের কারণেও অনেকে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন জাতীয় মাছের স্বাদ নিতে পারেন না। দামের কারণে ইলিশের বাজারে ক্রেতা কম। মাঝারি আকারের এক পিস ইলিশ কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১৫০০ টাকার উপরে। ক্রেতা কম হলেও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বৈশাখ উপলক্ষে স্বাভাবিকভাবেই চাহিদা বেড়েছে ইলিশের। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। কারণ হিসেবে মৌসুম না থাকায় সাগরে খুব বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে না। আবার নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে সব নদীতে জেলেরা জাল ফেলতে পারছেন না। ফলে পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
শনির আখড়ার কাঁচাবাজারে মাছ কিনতে আসা শিউলি বেগম বলেন, ২টা মাঝারি সাইজের ইলিশ কিনতে গিয়ে ৩ হাজার ২০০ টাকা দিতে হলো, যা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তিনি বলেন, বৈশাখে খাবারের অংশ হিসেবে পান্তা-ইলিশ নববর্ষের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তবে এই আমেজকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাছটি বেশ চড়া দামে বিক্রি করছেন। এমন হলে তো সাধারণ মানুষ এই উৎসব থেকেই বঞ্চিত হবে। এই সময়ে নিয়মিত বাজার তদারকি করার উপর জোর দেন শিউলি।
রাজধানীতে বাজারভেদে প্রতিটি ১ কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত। আর ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকার বেশি গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
যাত্রাবাড়ী পাইকারি মাছের আড়তে ইয়ামিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বাবুল মোল্লা মানবজমিনকে বলেন, প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রতি বছর নদীতে ইলিশ ধরা নির্ধারিত সময় নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময় ইলিশ পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়- বিক্রি কার্যক্রমও নিষিদ্ধ থাকে। মূলত উপরের অংশে, অর্থাৎ চাঁদপুর, বরিশাল, মেঘনা এসব এলাকার নদীতে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষেধ।
আবার নিচের অংশে অর্থাৎ সাগরের অংশে এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে ১৫ই এপ্রিলের পর থেকে। আগে এই নিষেধাজ্ঞা ৬৫ দিনের হলেও, এবার ৫৮ দিনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর থেকে বাজারে ইলিশের দাম কমবে।
খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন খোলা বাজারের ইলিশ বিক্রেতা সাইমুম মানবজমিনকে বলেন, পহেলা বৈশাখের আগে ইলিশের দাম প্রতিবছরই বাড়ে সেই ধারাবাহিকতায় এবারও বেড়েছে। এবার বিক্রেতাদের হাঁকডাক শুনে ক্রেতারা মাছ দেখছেন, কেনার আগ্রহ থাকলেও দাম একটু বেশি হওয়ায় ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও তেমন ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এবার বাজারে টাটকা মাছ কম, যেসব ইলিশ বিক্রি হচ্ছে বেশির ভাগই কোল্ড স্টোরেজে মজুতকৃত মাছ। তবে বাজারে চট্টগ্রাম থেকে আসা কিছু তাজা ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।
রাজধানীর কাওরান বাজারের মাছ বিক্রেতা রনি বলেন, ছেলে-মেয়েরা বলছে বৈশাখে ইলিশ খাবে। কিন্তু বাজেটে তো আর ইলিশ কিনতে পারছি না। আগে ১৫০০-১৮০০ টাকায় ২টা মাঝারি ইলিশ পেতাম, এখন একটা কিনতেই ১৫০০ টাকা লাগছে। তিনি বলেন, বাজারে ১০ জন বিক্রেতা থাকলে সবাই একই দাম হাঁকিয়ে বসে থাকে। তারা নিজেরাই সিন্ডিকেট করে কারসাজি চালায়। এ ছাড়াও বাজারে কোনো অভিযান নেই। কে কতো দামে কিনে বিক্রি করছেন সেটা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই আমরাও বেশি দামে কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছি।
যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা আবুল বাশার মানবজমিনকে বলেন, বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাবে-পরিবারের এমন আবদারে ইলিশ কিনতে এসে বিপদে পড়েছি। যে বাজেট নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছি, তাতে ইলিশ মাছ কিনতে পারছি না।
অন্যদিকে এ বছর পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। গত ৭ই এপ্রিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ১৪ই এপ্রিল পান্তার সঙ্গে ইলিশ খাওয়া হয়, সেটা যেন না খাওয়া হয়, সেই অনুরোধ করবো। কারণ এ সময় ইলিশ নয়, জাটকা খাওয়া হয়। সেই হিসেবে জাটকা সংরক্ষণ করে ইলিশে রূপান্তর করার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে এ বছর পান্তা-ইলিশ না খাওয়ারও আহ্বান জানাই।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, কোল্ড স্টোরেজ থেকে মজুত করা ইলিশ বাজারে আসার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চাই না সেটা বাজারে আসুক। পহেলা বৈশাখে পান্তার সঙ্গে ইলিশ না খেয়ে ভর্তা, পোড়া মরিচ খেতে পারেন। জেলেরা তাদের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে রেখে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে পারেন। তাহলে আমরা কেন একদিন ইলিশ খাওয়া বন্ধ করতে পারবো না?