ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

স্বাগত ১৪৩২

ভিন্ন আঙ্গিকে হচ্ছে নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা

স্টাফ রিপোর্টার
১৪ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
mzamin

আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। বরাবরের মতো নানা আয়োজনে উদ্‌যাপিত হতে যাচ্ছে বাংলা নতুন বছর। রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ, দিনটিকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত সর্বস্তরের মানুষ। বসন্তের রঙিলা পালকিতে চড়ে আসা বাংলা নববর্ষ ১৪৩২কে স্বাগত জানাতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে মগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। এবার ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ইউনেস্কো স্বীকৃত মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ রাখা হয়েছে। আজ সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের হবে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং একাত্মতা উদ্‌যাপিত হবে, যা এখন দেশব্যাপী একটি পরিচিত সাংস্কৃতিক আয়োজনে পরিণত হয়েছে। 

এবারের শোভাযাত্রায় অংশ নিচ্ছে ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং দেশি-বিদেশি অতিথিরা। থাকছে ৭টি বড়, ৭টি মাঝারি ও ৭টি ছোট মোটিফ। বড় মোটিফগুলোর মধ্যে রয়েছে কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, টাইপোগ্রাফিতে ৩৬ জুলাই, শান্তির পায়রা, পালকি, জুলাই আন্দোলনে নিহত মুগ্ধের পানির বোতল ইত্যাদি। বিশেষভাবে এবারের শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে তরমুজের মোটিফ যুক্ত করা হয়েছে, যা সামপ্রতিক সময়ের এক রাজনৈতিক বার্তাবাহী উপাদান। এ ছাড়া থাকবে সুলতানি ও মুঘল আমলের ১০টি মুখোশ, ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, ২০টি রঙিন চরকি, ২০০টি বাঘের মাথা, তালপাতার ৮টি সেপাই, ১০টি পলো, ৫টি তুহিন পাখি, ৬টি মাছ ধরার চাই, ৪টি পাখা, ২০টি মাথাল, ২০টি ঘোড়া, ৫টি লাঙল, ৫টি মাছের ডোলা এবং ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের লোকজ চিত্রাবলীর ক্যানভাস। গতকাল ঢাবি’র চারুকলা অনুষদে সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখকে রাঙিয়ে তুলতে ছাত্র-শিক্ষকদের তুমুল ব্যস্ততা ছায়াঘেরা চারুকলায়। শিল্পী, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা মগ্ন হয়ে কাজ করছেন শেষ মুহূর্তে শোভাযাত্রার বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করতে। মগ্ন হয়ে ছবি আঁকছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আঁকায় উঠে আসছে বাংলার রূপ-ঐতিহ্য। কেউ বা কাগজ কেটেছেঁটে তৈরি করছেন বাংলার বাঘ, সমৃদ্ধির প্রতীক লক্ষ্মীপ্যাঁচাসহ হরেক প্রাণীর মুখোশ ও কাঠামো। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, শান্তির পায়রা, ও পালকির মোটিফ। 

ভবনের সামনের দেয়ালে আঁকা হয়েছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী শখের হাঁড়ির মোটিফ, জয়নুল শিশু নিকেতনের দেয়ালে সাঁওতালদের ঐতিহ্যবাহী মাটির দেয়াল চিত্র। মাকে সঙ্গে নিয়ে চিত্রকর্ম দেখছিলেন ঢাবি শিক্ষার্থী নিকিতা জামান। তিনি বলেন, প্রতি বছরের তুলনায় এবার ভিন্ন আঙ্গিকে পহেলা বৈশাখ পালন হচ্ছে দেখে খুব ভালো লাগছে, অনেক উপভোগ করছি আমরা। বিশেষ করে এবারের পহেলা বৈশাখে জুলাই আন্দোলন ও স্বৈরাচারের প্রতিকৃতি ফুটে ওঠবে। এদিকে শনিবার ভোরে চারুকলায় শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’তে আগুন লাগিয়ে দেয় এক মুখোশধারী যুবক। তবে বাধা পেরিয়ে শিল্পীরা আবারো কাজ শুরু করেন। ককশিট দিয়ে নতুন করে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি নির্মাণে কাজ করেন তারা। ফ্যাসিস্ট প্রতিকৃতি তৈরির শিল্পী নাছির খান বলেন, আমরা ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি পুনরায় তৈরি করতে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ নিতে আহ্বান জানাচ্ছি। পটচিত্র তৈরির শিল্পী টাইগার নাজির বলেন, আমরা আকবর, বেহুলা, বনবিবি ও পটচিত্র তৈরি করতে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি। আমার ছেলেও এ কাজে অংশগ্রহণ করেছে। 

চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর আজহারুল ইসলাম বলেন, এবারে ভিন্ন আঙ্গিকে আমরা পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন করতে যাচ্ছি। শোভাযাত্রায় জুলাই আন্দোলনে নিহত মুগ্ধের পানির বোতল প্রতিকৃতি ও ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে তরমুজের মোটিফ যুক্ত করেছি আমরা। ইতিমধ্যেই ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি পুনরায় তৈরি করা হচ্ছে। সকল প্রস্তুতির মধ্যদিয়ে এবারের পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা আরও রঙিন, বর্ণিল এবং তাৎপর্যমণ্ডিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য থাকছে বর্ণিল পোশাক, নানা ধরনের শিল্পকলা এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে শোভাযাত্রা চলাকালীন বর্ণাঢ্য সংগীত, নৃত্য এবং লোকজ সংস্কৃতি পরিবেশন করা হবে। পহেলা বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণ এ আনন্দ শোভাযাত্রা ইতিমধ্যেই ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। শোভাযাত্রা শুধু সাংস্কৃতিক উৎসব নয়, এটি সামাজিক সচেতনতা তৈরিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বিশেষত, দেশের একতার প্রতীক হিসেবে আনন্দ শোভাযাত্রা বাঙালির ঐতিহ্যকে যুগে যুগে ধরে রাখবে। 

মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলের ব্যাখ্যা চান চারুকলার শিক্ষার্থীদের একাংশ: এদিকে বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রার নাম ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’-এর পরিবর্তে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আয়োজক কমিটিকে নাম পরিবর্তনের যথার্থ কারণ ব্যাখ্যা করার আহ্বান জানিয়েছেন চারুকলার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের একাংশ। একইসঙ্গে  শোভাযাত্রা আয়োজনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং এবার অন্যান্য বছরের মতো শিক্ষার্থীদের হাতে দায়িত্ব না দিয়ে আয়োজন করার নতুন নিয়মের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন তারা। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি রাখেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে চারুকলার প্রিন্ট মেকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহরা নাজিফা বলেন, এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে, তা এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে উদ্‌যাপিত হবে। আমরা এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করছি না। চারুকলার শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত ছাড়াই এই ধরনের সিদ্ধান্তে নিয়ে প্রশ্ন রাখছি। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটির ‘মঙ্গল’ অংশটি সম্পর্কিত করে হাস্যকর কিছু কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালে এ নাম পরিবর্তন করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জন্য ব্যবহার শুরু হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়ই আসে ১৯৯৬-এর বৈশাখের তথা এপ্রিলের আরও তিন মাস পরে জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে। তিনি বলেন, যে সিনেট সভায় নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সে সভায় শিক্ষার্থীদের রাখা হয়নি। এ আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সমাধান দাবি করে জাহরা নাজিফা আরও বলেন, আমরা নববর্ষের আয়োজনের সাফল্য কামনা করি। সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই। পাশাপাশি আমাদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের সমাধান চাই। আগামীতে প্রতিটি সিদ্ধান্তে প্রধান অংশীজন হিসেবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এর জন্য বাহাসের প্রয়োজন হলেও আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে বসতে প্রস্তুত আছি।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status