শরীর ও মন
নখের রোগসমূহ ও করণীয়
ডা. দিদারুল আহসান
১৩ এপ্রিল ২০২৫, রবিবারনখে হঠাৎ কোনো পরিবর্তন আসলে সেটি কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। তাই কোন ধরনের পরিবর্তন কী নির্দেশ করতে পারে তা জানা প্রয়োজন। এতে করে কিছু জটিল রোগ প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা সম্ভব হবে। জটিল রোগ না হয়ে থাকলে সেটিও নিশ্চিত হয়ে নেয়া যাবে।
নখের কিছু কমন সমস্যা ও কারণসমূহ:
নখকুনি: যদি কখনো নখের কোণা বাইরের দিকে বড় না হয়ে ত্বকের ভেতরের দিকে বাড়তে থাকে, তখন তাকে নখকুনি বলে। সাধারণত পায়ের বুড়ো আঙুল এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়। -আঁটসাঁট জুতা কিংবা মোজা পরা হয়;
-পা বেশি ঘামে;
-ভুল নিয়মে নখ কাটলে;
-নখে কোনো আঘাত পেলে।
নখের এই বাড়তি অংশ ত্বক ভেদ করে ভেতরে গেলে, আশপাশের ত্বকসহ নখে প্রচুর ব্যথা হয়;
-লাল হয়ে যায়;
পুঁজ অথবা তরল পদার্থ জমে ফুলে যায়, জ্বর আসে অথবা শরীরে কাঁপুনি হয়;
-রক্তপাত হয়;
-সাদা অথবা হলুদ রঙের পুঁজ বের হয়ে আসে;
-নখের চারপাশের মাংস ফুলে যায়;
-নিজে নখ খোঁচাখুঁচি বা কাটার চেষ্টা করা যাবে না।
এরপরেও যদি ব্যথা না কমে অথবা পুঁজ বের হয়ে আসে তাহলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে কিংবা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলে ঘরে বসে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
ফ্যাকাশে নখ: সাধারণত নখের রঙ হালকা গোলাপি থাকে। কিন্তু নখ ফ্যাকাশে সাদা হয়ে গেলে তা রক্তশূন্যতাজনিত কারণে হয়ে থাকে। অপুষ্টি ও লিভারের রোগের জন্য এমন হতে পারে।
তাই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি। সঠিক কারণ খুঁজে তার চিকিৎসা করলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো: ছোট শিশুরা সাধারণত দাঁত দিয়ে নখ চাবায়। বড় হলে এই অভ্যাস চলে যায়। কিন্তু বড় হওয়ার পরেও এই অভ্যাস থাকলে তা সমস্যার কারণ।
মানসিক চাপে থাকলে কিংবা কোনো মানসিক রোগে ভুগলে (যেমন: অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার বা ওসিডি রোগে) এমন অভ্যাস থাকতে পারে।
নখে ছোট ছোট গর্ত: সোরিয়াসিস রোগের কারণে নখে ছোট ছোট গর্ত হয়ে যায়। গর্তগুলো দেখলে মনে হবে যেন শক্ত কোনো কিছু দিয়ে নখ খোঁচানো হয়েছে। একজিমা নামক এক ধরনের চর্মরোগ অথবা এলোপেসিয়া নামক চুল পড়ে যাওয়ার রোগ থেকেও এমন পরিবর্তন আসতে পারে।
নখ হলুদ হয়ে যাওয়া: সাধারণত নখে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা ছত্রাকের আক্রমণে নখের রঙ হলুদ হয়ে যায়। প্রথমে নখের কোণা হলুদ হওয়া শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে পুরো নখ হলুদ হতে থাকে। একসময় নখ দুর্বল হয়ে কোণা থেকে ভেঙে যাওয়া শুরু হয়। সঠিক চিকিৎসা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ফাঙ্গাল ইনফেকশনের পাশাপাশি ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস ও সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগেও নখের রঙ হলুদ হয়ে যেতে পারে।
নখের আশপাশের মাংস লাল হয়ে ফুলে যাওয়া: নখের আশপাশের চামড়ায় ইনফেকশন হলে এমনটা হতে পারে। যারা ঘন ঘন সাবান-পানির কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়।
এ ছাড়া কানেক্টিভ টিস্যুর রোগ হলেও এ ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
নখের মাথা সামনে থেকে ভেঙে যাওয়া।
আঘাত পেলে নখ ভেঙে যেতে পারে। তবে থাইরয়েডের রোগ অথবা রক্তশূন্যতার কারণে কোনো প্রকার আঘাত ছাড়াই নখ ভেঙে যায়। আবার নখ ভাঙার সঙ্গে যদি নখ হলুদ হয়ে যায় তাহলে সেটি ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের আক্রমণ থেকে হতে পারে। তাই ডাক্তারের কাছে যেয়ে সঠিক কারণ নির্ণয় করা জরুরি।
নখ সবুজ হয়ে যাওয়া: নখে একধরনের ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ইনফেকশন হলে এমন হয়। সঠিক চিকিৎসা ছাড়া এই সমস্যা আপনা-আপনি ভালো হয় না। তাই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
নখ মাঝখানে দেবে যাওয়া;
কিছু রোগে নখ মাঝখানে দেবে যায়। যেমন: আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা। তখন নখ দেখতে অনেকটা চা-চামচের মতো লাগে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রনের অভাব পূরণ করলেই এই সমস্যা সাধারণত ঠিক হয়ে যায়।
নখে লম্বা গাঢ় দাগ থাকলে: নখে কোনো আঘাত লাগলে এমন দাগ হতে পারে। আঘাতের কারণে নখে গাঢ় কোনো দাগ হলে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আঘাত ভালো হয়ে গেলে এবং নখ বড় হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাগ আপনা-আপনি চলে যায়।
তবে এক ধরনের চামড়ার ক্যান্সার বা স্কিন ক্যান্সারেও এমন দাগ দেখা যায়। কোনো আঘাত ছাড়াই নখে এমন কোনো দাগ বেশ কিছুদিন ধরে থাকলে, অথবা আগের এমন দাগ আরও ছড়িয়ে গেলে কিংবা রং বদলালে তা জটিল রোগ থেকে হতে পারে। এমন কিছু হলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
নখ নীল হয়ে গেলে: কখনো কখনো রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ অনেক কমে গেলে নখ হঠাৎ করে নীল হয়ে যায়। পাশাপাশি বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট থাকতে পারে। এগুলো মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতার লক্ষণ। তাই এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
লেখক: চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট
গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
৩২, গ্রীন রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা। রুম নাম্বার ৪৩২, সাক্ষাতের সময় বিকাল ৪-৬টা পিএম।
সেল-০১৭১৫৬১৬২০০, ০১৭৩৩৭১৭৮৯৪