বিশ্বজমিন
ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে দেশে দেশে বিক্ষোভ
মানবজমিন ডেস্ক
(১০ ঘন্টা আগে) ৭ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৯:৪০ অপরাহ্ন

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ক্ষোভে উত্তাল সারা বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে গতকাল রাস্তায় নামে লাখ লাখ মানুষ। তারা একই সুরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে এই বর্বরতায় ক্ষোভ, ঘৃণা প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা জানিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। বাংলাদেশের বিক্ষোভকারীরা সহ বিভিন্ন দেশ ইসরাইলি পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন। বিক্ষোভ হয়েছে অনেক মুসলিম দেশে। আল জাজিরা ও বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে প্রতিবাদের খবর। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শহরেও প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। বিক্ষোভে তিন শতাধিক অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ অংশ নিয়ে তাদের সমর্থন জানিয়েছে। এ সপ্তাহের শুরু থেকেই দেশটিতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। উপস্থিত বিক্ষোভকারীরা ৩ নম্বর স্ট্রিট এনডব্লিউ ও পেনসিলভেনিয়া এভিনিউ এনডব্লিউয়ের চৌরাস্তায় সমবেত হয়। পরে তারা ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) সদর দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মিছিল করে। এ সময় ফিলিস্তিনি কর্মী মাহমুদ খলিল ও তুর্কি শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্কসহ আটক ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের মুক্তির আহ্বান জানায়। মরক্কোতেও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। হাজারো বিক্ষোভকারী মরক্কোর রাস্তায় নেমে আসেন। গাজায় ইসরাইলি যুদ্ধের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কয়েক মাসের মধ্যে মরক্কোয় সবচেয়ে বড় বিক্ষোভগুলোর একটি ছিল এটি। দেশটির রাজধানী রাবাত-এর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ঢল নামে। ইসরাইলি পতাকা পদদলিত করেন তারা। গাজা পুনর্গঠনের জন্য উপত্যকাটি থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। যার তীব্র বিরোধিতা করেছে আরব দেশগুলো। তারা এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। আরব বিশ্ব ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই পরিকল্পনাকে জাতিগত নির্মূল হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
গাজায় চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার ফিলিস্তিন জুড়ে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘট আহ্বানকারীদের আশা- আন্তর্জাতিক সমর্থক এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার প্ল্যাটফরমগুলোও সোমবার এই কর্মসূচি পালন করবে। ফিলিস্তিনের জাতীয় ও ইসলামী শক্তিগুলো রোববার এক বিবৃতিতে বৈশ্বিক এই ধর্মঘটের ডাক দেয়। বিবৃতিতে বৈশ্বিক ধর্মঘট সফল করার আহ্বান জানানো হয়। এতে প্রতিরোধের কণ্ঠস্বর, ইসরাইলি বাহিনীর ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞ ও অপরাধ তুলে ধরার ওপর জোর দেয়া হয়। ইসরাইলি সেনারা ফিলিস্তিনের নিরীহ সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও নারীদের হত্যা করছে। ইসরাইলি হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি নিজেদের ঘর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়, ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে ঐক্যবদ্ধ করা জরুরি। আন্তর্জাতিক আইন ও ফিলিস্তিনিদের অধিকার লঙ্ঘনের জন্য ইসরাইলকে বিচারের মুখোমুখি করতে এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলের হামলায় কমপক্ষে ৫০ হাজার ৫২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর বেশির ভাগই নিষ্পাপ শিশু ও নারী। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৩৮ জন। বিশ্বের সব মুসলিম ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আহ্বান জানিয়ে একটি বিরল ধর্মীয় ফরমান বা ফতোয়া জারি করেছেন বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট আলেম। অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দাদের ওপর ১৭ মাস ধরে চলা নৃশংস ও নির্বিচার ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা এ ফতোয়া জারি করেন। ইউসুফ আল-কারযাভীর নেতৃত্বে গঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলারসের (আইইউএমএস) মহাসচিব আলী আল-কারদাঘি সব মুসলিম দেশকে এই গণহত্যা এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধে অবিলম্বে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ১৫ দফা-সংবলিত ওই ফরমানে আলী আর কারদাঘি বলেন, গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধে আরব ও ইসলামিক সরকারগুলো ব্যর্থ হলে তা ইসলামিক আইন অনুযায়ী আমাদের নিপীড়িত ফিলিস্তিনি ভাইদের বিরুদ্ধে বড় অপরাধ বলে গণ্য হবে।
কারদাঘি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে সম্মানিত ধর্মীয় নেতাদের একজন। তার ফরমান বা ফতোয়াগুলো বিশ্বের ১৭০ কোটি সুন্নি মুসলমানের কাছে উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব বহন করে। ফতোয়া হলো ইসলামিক আইনি আদেশ। সাধারণত কোরআন ও হাদিসের আলোকে একজন ধর্মীয় নেতা এ আদেশ জারি করেন। কারদাঘি বলেন, গাজার মুসলমানদের নির্মূলে কাজ করা কাফের শত্রুকে (ইসরাইল) সমর্থন করা নিষিদ্ধ, তা সে যে ধরনের সমর্থনই হোক না কেন। তিনি আরও বলেন, এদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা অথবা স্থল, জল বা আকাশপথে সুয়েজ খাল, বাব আল-মান্দেব ও হরমুজ প্রণালির মতো আন্তর্জাতিক জলসীমা বা বন্দরের মাধ্যমে তাদের পরিবহনকে সহায়তা করা নিষিদ্ধ। এই ধর্মীয় নেতা বলেন, গাজায় আমাদের ভাইদের সহায়তার লক্ষ্যে দখলদার শত্রুদের স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে অবরুদ্ধ করার দাবি জানিয়ে কমিটি (আইইউএমএস) একটি ফতোয়া জারি করেছে।
কারদাঘির বিবৃতির প্রতি অন্য আরও ১৪ জন মুসলিম পণ্ডিত সমর্থন জানিয়েছেন। ওই বিবৃতিতে বিশ্বের সব মুসলিম দেশের প্রতি তাদের সঙ্গে ইসরাইলের শান্তিচুক্তিগুলো পর্যালোচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমদের প্রতি প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে চাপ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে তিনি আগ্রাসন বন্ধে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করেন। এমন পরিস্থিতিতে ইসরাইলকে দেয়া সব সামরিক সরবরাহ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ঘোষণা দিয়েছে। একই সঙ্গে যেসব পণ্য ‘দ্বৈত ব্যবহার’ হয় তারও ইসরাইলে যাওয়ার ওপর কঠোরতা আরোপ করেছে দেশটি। এসব পণ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রেজ্যুলুশন মেনে চলছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। পার্লামেন্টে এক চিঠিতে সরকার বলেছে, সাধারণ রপ্তানি লাইসেন্স ব্যবহার করে এসব আর রপ্তানি করা যাবে না। ১৩ই মার্চ গাজায় ১৫ জন ত্রাণকর্মীকে হত্যা করে ইসরাইল। তাদেরকে বহনকারী এম্বুলেন্স বহরে হামলা চালিয়ে এই হত্যাযজ্ঞ চালায় ইসরাইল। এই অভিযোগকে হতাশাজনক অভিহিত করেছে জার্মানি। তারা এ জন্য জরুরি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান ওয়াগনার বলেন, ইসরাইলি সেনারা যেসব কাজ করছে তা নিয়ে বড় রকমের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে তদন্ত এবং জড়িতদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা উচিত। ওদিকে সোমবার সকাল থেকে কমপক্ষে ৩৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল।