দেশ বিদেশ
চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের অবস্থান
স্টাফ রিপোর্টার
৭ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
ক্ষতিপূরণসহ চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর চাকরিচ্যুত বিডিআর ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। গতকাল ১০টা থেকে ধানমণ্ডি জিগাতলা এলাকার বিজিবি সদর দপ্তরের ৪ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নেন। পরে বিজিবি মহাপরিচালকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার পর তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন। অবস্থান কর্মসূচিকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রস্তুত ছিল জলকামান ও সাঁজোয়া যানও।
এর আগে গতকাল সকাল ৯টার পর থেকে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের অদূরে ইবনে সিনা মেডিকেল ইমেজিং সেন্টারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাকরিচ্যুত সাবেক বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের লোকজন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সেখানে কয়েকশ’ লোকের উপস্থিতি হয়ে যায়। এরপর তারা পাতাম রেস্তরাঁর সামনে দিয়ে বিজিবি সদর দপ্তরের সামনে এগিয়ে যান। এ সময় উদ্ভূত পরিস্থিতি এড়াতে জিগাতলা, সীমান্ত স্কয়ার, বিজিবি সদর দপ্তরের সামনেসহ পুরো এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিজিবি সদর দপ্তরের নিরাপত্তায় পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হয় সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র সদস্যরাও। দৃশ্যপটে প্রস্তুত রাখা হয় জলকামান, সাঁজোয়া যান, রায়টকার।
সাবেক বিডিআর সদস্যরা বলেন, বিডিআর সদস্যরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি আদায়ে অবস্থান করছেন। তাদের একটাই দাবি- চাকরি পুনর্বহাল এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হোক। অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেয়া সাবেক বিডিআর সদস্য তারেক আজিজ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এখানে অবস্থান নিয়েছি এবং আমাদের একমাত্র দাবি হলো, আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দেয়া হোক এবং ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক। আমরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে এখানে আসিনি। সাবেক সিপাহী সাইফুল ইসলাম বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় আমি চট্টগ্রামে দায়িত্বে ছিলাম। আমরা ছিলাম ঢাকার বাহিরে অথচ এ বিদ্রোহ মামলায় আমাকে ৭ বছর জেল দিয়েছে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে প্রকৃত জড়িত আমরা তাদের বিচার চাই। আমাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হোক। যাদের বয়স শেষ হয়ে গিয়েছে তাদের সম্মানের সহিত পেনশনের ব্যবস্থা করে দেয়া হোক। সাবেক হাবিলদার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবির প্রতি কোনো সদুত্তর না পাওয়া যাবে বা বিজিবি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। আমাদের মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে বিনা অপরাধে জেল এবং চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমাদের গায়ে বিদ্রোহীর মিথ্যা ট্যাগ দেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের প্রাপ্য সম্মান ফেরত পেতে চাই। সাবেক এক বিডিআর সদস্যের কন্যা সাদিয়া রহমান বলেন, আমি আমার বাবার ওপর দেয়া কলঙ্ক মুক্ত করতে এসেছি। আমার বাবা মারা গিয়েছে ২০২১ সালে। আমরা স্কুল কলেজে গেলে আমাদের বিদ্রোহীর সন্তান বলে তকমা দেয়া হয়। আমরা আমাদের প্রাপ্য সম্মান ফেরত পেতে চাই। তৎকালীন হাবিলদার বাশার বলেন, যারা দোষ করেছে তাদের শাস্তি দিক আমাদের তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যারা অপরাধ করেনি তাদের প্রাপ্যটুকু ফেরত দেয়া হোক।
এদিকে অবস্থানের একপর্যায়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আন্দোলনরত সাবেক বিডিআর সদস্যদের পক্ষ থেকে পাঁচজন প্রতিনিধি পিলখানার ৪নং গেটে স্মারকলিপি নিয়ে যান। তবে বিজিবি মহাপরিচালক সদর দপ্তরের বাইরে থাকায় সরাসরি তার কাছে স্মারকলিপি দিতে পারেনি তারা। বিজিবি মহাপরিচালকের অনুপস্থিতিতেই তার কার্যালয়ে স্মারকলিপিটি পৌঁছানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কর্মসূচিতে আসা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য তারেক আজিজ বলেন, আমরা সশরীরে স্মারকলিপি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। তবে স্মারকলিপি গ্রহণ করে তা ডিজি কার্যালয়ে পৌঁছানো হয়েছে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। রমনার ডিসি মাসুদ আলম প্রায় পুরো সময়টা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি এও জানিয়েছেন- বিজিবি মহাপরিচালক সদর দপ্তরের বাইরে রয়েছেন। তাই আমরা ফিরে যাচ্ছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না নেয়া পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএমপি’র রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, সাবেক বিডিআর সদস্যরা তাদের দাবি নিয়ে জিগাতলা এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশি উপস্থিতি বৃদ্ধি করা হয়। পরে তারা বিজিবি সদর দপ্তর বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে ফিরে গিয়েছেন। তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।