দেশ বিদেশ
বরখাস্ত হলেন ড্যাফোডিলের সেই শিক্ষিকা, নানা আলোচনা
স্টাফ রিপোর্টার
৮ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবারফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ক্লাস বর্জন কর্মসূচিতে অংশ নিলে শিক্ষার্থীদের ‘ডাবল অ্যাবসেন্ট’ দেবেন- এমনটাই জানিয়েছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষিকা তাহমিনা রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রভাষক। তার এই লেখা ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ক্ষমা চেয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিয়ে সেই শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করেন।
রোববার রাতে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সোমবার শিক্ষার্থীরা যাতে এই কর্মসূচিতে ক্লাস বর্জন না করেন সেই ইস্যুতে বার্তা দেন। তাতে তিনি বলেন, ওয়ার্নিং, আগামীকাল কেউ যদি ক্লাস মিস দিয়ে স্ট্রাইকে যেতে চাও, যেতে পারো। আমি তাকে ২টা অ্যাবসেন্ট দিয়ে দেবো। সবাই না আসলে সবাই অ্যাবসেন্ট। আর এই টপিকে কেউ কাউন্সেলিং চাইতে আসবে না। জাস্ট অ্যা ওয়ার্নিং ইন কেস ইউ কাম আপ উইথ দিস বুলশিট এককিউচ। এই স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এমনকি বিভাগটির শিক্ষার্থীরাও তার এই মেসেজের প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে গ্রুপের ব্যাচ থেকে রিমুভ করে দেন। এরপর তিনি এক স্ট্যাটাসে লেখেনÑ আমার কথার ভুল বোঝাবুঝির কারণে যে গভীর কষ্ট ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত। আমি নিঃসন্দেহে গাজা ও তার জনগণের পাশে আছি, তাদের ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার দাবিকে কঠোরভাবে ও গভীরভাবে সমর্থন করি। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথোপকথনটি ছিল কিছুটা বিকালের দিকের, আমি সারাদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ না থাকার জন্য আমি বুঝতে পারিনি এটি পুরো বিশ্বের ও বাংলাদেশের স্টুডেন্টদের একটি কালেক্টিভ প্রটেস্ট। আমি নিতান্তই আমার নিজ ব্যাচের সেকশনের কিছু শিক্ষার্থীর সিদ্ধান্ত ভেবেছিলামÑ তাই আমার প্রতিক্রিয়া এরূপ ছিল। তবে সেটা হলেও আমার এইরূপ প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হয় নি। এই কারণে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।
এরপর গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র এবং এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু জানান, তাহমিনা রহমানকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে প্রাথমিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হবে। এদিকে এসব বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগটির সাবেক শিক্ষার্থীরা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখান। তারা বিভাগটির শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাদের দাবি, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র পরিচয়ের জেরে নিয়োগ হয়ে থাকে জার্নালিজম, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগে। তার শিক্ষকের দায়িত্ব পাবার পরই মর্জিমতো চালান বিভাগটি। এদিকে একইদিনে আরেকটি স্ট্যাটাস ঘিরে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে আন্দোলন, বিক্ষোভ আর মানববন্ধন। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের মাধ্যমে এই প্রতিবাদে সংহতি জানাচ্ছেন। তবে এই প্রতিবাদের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা, মিডিয়া ও যোগাযোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. আফতাব হোসেন।
রোববার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেনÑ আমার একটা বিষয় মাথায় ঢুকছে না।
বুদ্ধিহীন হয়ে যাচ্ছি দিনে দিনে। কেউ একটু বুঝতে সাহায্য করেন। গাজায় হামলা হয়েছে, ছাত্ররা প্রতিবাদস্বরূপ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছে। এতে কার কী উপকার হবে?
তিনি লেখেন, আমরা মুসলিম জাতি সবসময় আন্দোলন আর গালাগালি না করে ভালোমতো পড়াশোনা করতে পারলে ভালো হতো না? বিশ্বদরবারে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে তারপর দিতে হবে যথাযথ জবাব। করতে হবে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা আর রহহড়াধঃরাব... এই যেমন ফেসবুকটাও ওদের তৈরি। আমরা লেখাপড়া না করলে বিপক্ষের লাভটা কী?’