অনলাইন
সিলেটে ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহে লাখো মুসল্লীর ঈদের নামাজ আদায়
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
(১ দিন আগে) ৩১ মার্চ ২০২৫, সোমবার, ১১:৩২ পূর্বাহ্ন

সিলেটের শাহী ঈদগাহ ময়দান। কয়েকশ’ বছরের ইতিহাস। মোঘল আমলে স্থাপিত এই শাহী ঈদগাহে প্রতিবছরই ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এটি সিলেটের ঐতিহ্য। খোলা আকাশের নিচে একসঙ্গে নামাজ আদায় করার রেওয়াজ প্রচলিত হয়েছে। এতে শরীক হন সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ। উপস্থিত থাকেন রাজনৈতিক, সামাজিক নেতৃত্ব। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও এতে শরীক হন।
এবার মুক্ত, চমৎকার পরিবেশ। শাহী ঈদগাহের ঈদ জামাতের প্রস্তুতি ক’দিন ধরে চলছিলো। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক’দিন ধরে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে এবারের ঈদ জামাত সবার কাছে ছিলো অন্যতম আকর্ষণ।
সকাল হতেই সিলেটের মেঘলা আকাশ। মৃদু বাতাস। কিছুটা ভ্যাপসা পরিবেশ। বৃষ্টি নিয়ে শঙ্কা ছিলো। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে ভোর থেকেই সিলেটের মানুষের গন্তব্য হয়ে দাঁড়ায় শাহী ঈদগাহ ময়দান। সকাল সাড়ে ৭ টার মধ্যে কানায় কানায় ভরে উঠে ঈদগাহ মাঠ। আশপাশের লোকজন আগেভাগেই চলে আসেন। এরপর আসতে থাকেন দুর-দুরান্তের মুসল্লীরা। গাড়ি নিয়ে তারা ঈদগাহ মাঠে আসেন। এবারের ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে ঈদগাহে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। প্রশাসনের তরফ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যুহ গড়ে তোলা হয়েছে। র্যাব-পুলিশ ছিলো নিরাপত্তায় নিয়োজিত। ফলে স্বস্তি নিয়ে ঈদ জামাতে শরীক হন মুসল্লীরা।
সিলেটের প্রখ্যাত আলেম ও বরুনার পীর আল্লামা রশীদুর রহমান ফারুক সকাল থেকে বয়ান শুরু করেন ঈদ জামাতে। এ সময় তিনি ইমান ও আলম নিয়ে বক্তব্য দেন। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের গাজার মুসলমানদের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন। বক্তৃতায় তিনি বলেন- এবার খুব শান্তিপূর্ণ ভাবে ঈদ পালন করা হচ্ছে। রমজানের এক মাসে ছিলো শান্তি ও স্বস্তি। এরই মধ্যে বাংলাদেশে ঈদ পালন করা হচ্ছে। এই ঈদে মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
ঈদগাহের মোতাওয়াল্লি সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এবার তার ব্যবস্থাপনায় ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৮ টায় হয় ঈদ জামাত। জামাতের আগে ঈদগাহের গণ্ডি পেরিয়ে মুসল্লীরা কাজী জালাল উদ্দিন স্কুল ও পূর্ব শাহী ঈদগাহের মাজার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েন। এতো বড় ঈদগাহ হওয়ার পরও দিন দিন মুসল্লী বাড়ায় স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এতে অনেক মুসল্লী ভোগান্তিতে পড়েন। এই অবস্থায় ঈদগাহের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর পর তাগিদ দেন মোতাওয়াল্লী আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বক্তৃতায় সবার কাছে দোয়া চান। বলেন- দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এবারের ঈদের মতো সবাই যেনো ভবিষ্যতে এক থাকতে পারেন সেই দোয়া তিনি সবার কাছে চান। পাশাপাশি ঈদে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি সবার কাছে আহবান জানান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী। ঈদগাহে সিলেটবাসীর উদ্দেশ্যে তিনিও বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন; দেশকে স্বাভাবিক রাখতে, এগিয়ে নিতে সবাইকে এক কাতারে শরীক থাকতে হবে। এজন্য প্রশাসন জনগণের সঙ্গে থাকবে। ঈদ জামাত শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করেন মোনাজাত করেন বরুনার পীর রশীদুর রহমান ফারুক। জামাত শেষে একে অন্যর সঙ্গে কোলাকুলি করেন। এদিকে- সকাল সাড়ে ৮ টায় সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ জামাতে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুর মুক্তাদির সহ বিএনপি নেতারা শরীক হন।
মানিক পীর ও দরগাহ কবরস্থানে ভিড় : সিলেটে ঈদ জামাতের পর বেশির ভাগ মুসল্লীর গন্তব্য ছিলো হযরত মানিকপীর (রহ) গোরস্থান। সিলেটের প্রধান গোরস্থান এটি। কবরবাসী স্বজনদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে মুসল্লীরা দোয়া করেন। অনেকেই আবার ছুটে যান হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাস্থ কবরস্থানে। সেখানে কবর জিয়ারতের পর কবরবাসী স্বজনদের জন্য চোখের জলে মোনাজাত করেন মুসল্লীরা।