ঢাকা, ২ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

৭০ জনের নামে মামলা

সিলেটের হরিপুরে গুড়িয়ে দেয়া হলো চোরাই আস্তানা

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

(২ দিন আগে) ৩০ মার্চ ২০২৫, রবিবার, ৫:০১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ২:৪৯ অপরাহ্ন

সিলেটের হরিপুরকে বলা হয় চোরাকারবারিদের শাসিত এলাকা। অথচ এক সময় ওই এলাকা ছিলো আলেম-উলামা শাসিত। উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওলি হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহ হরিপুরী (রহ.) স্মৃতি বিজরিত হরিপুর গত দুই দশক ধরে লাইনচ্যুত হয়ে চোরাই রাজ্যের ‘খ্যাতি’ পেয়েছে। চোরাই সিন্ডিকেট ও চোরাই মালামালের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিলো হরিপুর। গত ক’দিন ধরে হরিপুরে সেনাবাহিনী অভিযান চলছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে করা হয়েছে তল্লাশী। চোরাকারবারিরা নেই এলাকায়। তবে ঈদ উপলক্ষে অভিযান কিছুটা শিথিল করায় চাঞ্চল্য ফিরেছে হরিপুরে। চলছে ঈদবাজারের বিকিকিনি।

২৬ শে মার্চ রাতে হরিপুরে চোরাই গরু মহিষের গাড়ি দিয়ে টহলে থাকা এক সেনাবাহিনীর গাড়িকে চাপ দেয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- ওই গাড়ির ড্রাইভার ছিলা লামা শ্যামপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীন। সেনাবাহিনীর সঙ্গে গাড়িটি নিয়ে হরিপুর বাজারের পশুর হাটে চলে আসে। পিছু পিছু আসে সেনাসদস্যরা। বাজারের ভেতরে আসা মাত্র চোরাকারবারি ও স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা একজোট হয়ে সোনাবাহিনীর সদস্যদের উপর হামলা চালায়। এ সময় সেনাবাহিনীর পিকআপ ট্রাকও ভাংচুর করে। এতে এক সেনা কর্মকর্তা ও এক সেনা সদস্য গুরুতর আহত হন।

হামলায় হরিপুর বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির নেতা হেলাল আহমদ ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ চেয়ারম্যান নেতৃত্ব দেন বলে জানিয়েছেন উপস্থিত থাকা লোকজন।

এদিকে- এ ঘটনার পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা হরিপুরে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদসহ তার পরিষদের কয়েকজন মেম্বারকে সেনা ক্যাম্পে ডেকে এনে তাদের কাছ থেকে তথ্য উদঘাটন করা হয়। এক পর্যায়ে তাদের নিয়ে চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়। 

ইতিমধ্যে চিনি, কসমেটিক্সসহ প্রায় ৩ কোটি টাকার চোরাই পণ্য আটক করা হয়েছে। তবে চিহিৃত চোরাকারবারী ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

এই অবস্থায় সেনাক্যাম্পে আটক শিকারখাঁ গ্রামের আবুল হাসনাতের পুত্র মো হাবিবুর রহমান ও চান্দঘাট এলাকার জহির উদ্দিনের পুত্র মোহাম্মদ আলি আহমদ সহ শনিবার বিকেলে জৈন্তাপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে ঘটনায় তিন দিনে মোট ২৮ জনকে আটক করা হয়েছিলো। ৫ জন ছাড়া বাকিদের ছেড়ে দেয়া হয়। ওই ৫ জনের সঙ্গে থানায় একটি ৭০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি এজাহার দাখিল করা হয়। মামলায় বাদি হয়েছেন হরিপুর এলাকার জনপ্রতিনিধি আব্দুল মতিন মেম্বার। মামলায় চেয়ারম্যান সহ অন্য জনপ্রতিনিধিদের সাক্ষী করা হয়েছে। মামলায় উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুর রশিদ চেয়ারম্যান, ছাত্রদল সদস্য সচিব শাহীন আহমদকে আসামি করা হয়েছে।

হরিপুরে চোরাই রাজ্যে হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে গরু মহিষের হাট। সীমান্ত এলাকা পাড়ি দিয়ে আসা গরু ও মহিষের নিরাপদ স্থান হচ্ছে হরিপুর। ওই বাজারে পশু নিয়ে আসার পর সিট দিয়ে বৈধ করা হয় পশু। এরপর সেগুলো বিক্রি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সম্প্রতি চিনি চোরাচালানে হরিপুরের নাম নতুন করে রটেছে। অভিযান শুরু করার পর থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পশুর হাট ও বিভিন্ন গোডাউনকে টার্গেট করে তল্লাশী চালায়। সর্বশেষ রোববার দুপুরে প্রায় তিন ঘন্টাব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় পশুর হাট ও আশপাশ এলাকায়। 

জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন- হাট থেকে অন্তত ১০০টি অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমার নেতৃত্বে এ অভিযান চলে। এতে সেনা, পুলিশ সদস্যরা সহযোগিতা করেছে। জৈন্তাপুর থানার ওসি আবুল বাশার মো. বদিউজ্জামান জানিয়েছেন- অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানে পুলিশের সহযোগিতা ছিলো। পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েকটিম হরিপুর বাজারে টহল দিয়েছে। তিনি বলেন- সেনাবাহিনীর গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় ৭০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। আটক ৫ জনকে মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয় বলে জানান তিনি।

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status