খেলা
বিজয়ের অপরাজিত ১৪৯ তাসকিনের ‘লজ্জার’ ১০৭ রান!
স্পোর্টস রিপোর্টার
১৯ মার্চ ২০২৫, বুধবার
ডেলিভারিটা অফ স্টাম্পের বাইরেই করেছিলেন, সেটা তাড়া করে লংঅন দিয়ে উড়িয়ে মারেন আব্দুল গাফফার সাকলাইন। বল বাউন্ডারি পার হতেই রান খরচের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডে নাম লেখান তাসকিন আহমেদ। ১০০-এর বেশি রান খরচ করে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান খরচের রেকর্ড এখন তারই। একই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের বিপক্ষে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে জিতিয়েছেন অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের ম্যাচে গতকাল বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে মোহামেডানকে ৬৫ রানে হারায় গাজী গ্রুপ। টস হেরে আগে ব্যাটিং করা গাজী ৩৩৬ রানের পুঁজি পায়। জবাবে ২৭১ রানে গুটিয়ে যায় তামিম ইকবালের দল। ১৪৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা বিজয় জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ৬ ম্যাচে ৫ জয়ে টেবিলের ২ নম্বরে আছে গাজী। সমান ম্যাচে সমান জয় পেলেও রান রেটে এগিয়ে টেবিলের শীর্ষে আবাহনী। আর সমান ম্যাচে ৪ জয় পাওয়া মোহামেডান আছে টেবিলের ৩ নম্বরে।
এদিন বল হাতে দুঃস্বপ্নের দিন কাটান মোহামেডানের পেসার তাসকিন আহমেদ। ব্যক্তিগত শেষ ওভারের শেষ বলে রান দেয়ার সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ২৯ বছর বয়সী এই পেসার। সব মিলিয়ে ৩ উইকেটের জন্য ১০ ওভারে খরচ করেন ১০৭ রান। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ তো বটেই, লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেই বাংলাদেশিদের মধ্যে এটি সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড। এর আগে যৌথভাবে এই রেকর্ড ছিল ইকবাল হোসেন ইমন ও শাহাদাত হোসেনের। গত বছর প্রিমিয়ার লীগে স্বীকৃত ক্রিকেটে নিজের অভিষেক ম্যাচে ৯ ওভারে ১০৪ রান দেন গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমির হয়ে খেলা ইমন। আর ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের বিপক্ষে শাহাদাত ১০ ওভারে খরচ করেছিলেন ১০৪ রান। এই তালিকায় ৩ নম্বরে আছেন মুক্তার আলী। চলতি লীগে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে ৯ ওভারে ৯৯ রান দেন পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলা মুক্তার আলি। আর সব মিলিয়ে এই সংস্করণে রান খরচের রেকর্ডটি নেদারল্যান্ডসের বাস ডে লেডের। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০ ওভারে ১১৫ রান খরচ করেন এই পেসার। তাসকিনের দুঃস্বপ্নের দিনে স্বপ্নের দিন কাটান গাজী অধিনায়ক বিজয়। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের ২১তম সেঞ্চুরির ইনিংসে ১৪৩ বলে ১২ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কায় ১৪৯ রান করেন এই অভিজ্ঞ ওপেনার। বিজয় আর তার ওপেনিং সঙ্গী দুজনেই এদিন শুরু থেকে তাসকিনের উপর আগ্রাসী হন। দ্বিতীয় ওভারে তার বলে ৩টি চার মারেন গাজী গ্রুপের ওপেনার সাদিকুর রহমান। পরের ওভারে ছক্কা মারেন এনামুল। ওই ওভার থেকে আসে ১৬ রান। ৫৪ বলে ফিফটি পূর্ণ করে অনেকটাই খোলসে ঢুকে পড়েন বিজয়। পরের ৪৬ রান করতে আরও ৬৮ বল খরচ করেন ৩২ বছর বয়সী ব্যাটার। সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে আরও ধীরগতিতে ব্যাটিং করেন বিজয়। ১০০ বলে ৯২ থেকে ১২২ বলে পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। এরপর অবশ্য পরের ২১ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৪৯ রান করেন গাজী গ্রুপ অধিনায়ক। তাসকিন শেষদিকে গাজীর অন্য ব্যাটারদের তোপের মুখেও পড়েন। ৪৬তম ওভারে তাকে দুই চারের পর ছক্কা মারেন তোফায়েল আহমেদ। পরে স্ট্রাইক পেয়ে শেষ বলে চার-ছক্কা মারেন এনামুল। শেষ দুই ওভারে তাসকিনের খরচ ৪৫ রান। চতুর্থ উইকেটে বিজয় ও তোফায়েল মিলে গড়ে তোলেন মাত্র ৪৩ বলে ৯৮ রানের জুটি। ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ২৯ বলে ৬৩ রানের ইনিংস খেলেন তোফায়েল। গত জাতীয় ক্রিকেট লীগে সিলেট বিভাগের শিরোপা জয়ে অবদান রাখা তোফায়েল ডিপিএলেও নিজেকে চেনাচ্ছেন আলাদা করে। মোহামেডানের অন্য বোলাররাও এদিন খরুচে ছিলেন। ১০ ওভারে ৭৭ রান দেন সাইফ উদ্দিন। মিরাজের ১০ ওভারে খরচ ৬৬ রান।
রান তাড়ায় তামিম ইকবাল ও রনি তালুকদার ভালো শুরু এনে দেন মোহামেডানকে। দুজনে মিলে গড়েন ৭২ রানের জুটি। ১১তম ওভারে ৪৮ রান করা তামিম ফিরলে ভাঙে এই জুটি। এরপর রনি আর মুশফিকুর রহিম ছাড়া কেউই উইকেটে থিতু হতে পারেননি। রনির ব্যাট থেকে আসে ৭৫ রান আর মুশফিক করেন ৪৯ রান। গাজীর হয়ে ৪ উইকেট নেন আব্দুল গাফফার সাকলাইন।