শরীর ও মন
সাইনুসাইটিস (Sinusitis) কারণ ও প্রতিকার
ডা. সৈয়দ জাহিদুল আলম
৭ আগস্ট ২০২২, রবিবার
নাকের চারপাশে অস্থিসমূহে যে ফাঁকা স্থান বা বায়ুপূর্ণ কুঠুরী অর্থাৎ সাইনাস থাকে সেই সাইনাসের অভ্যন্তরীণ আবরণি ঝিল্লিতে যখন প্রদাহ হয় তাকেই সাইনুসাইটিস বলা হয়। এটি আবার ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনের কারণেও হতে পারে। অনেকেই মাথাব্যথা হলেই সাইনাসজনিত সমস্যা বলে মনে করে থাকেন কিন্তু মাথাব্যথা মানেই সাইনুসাইটিস তা- মনে করা ঠিক নয়। সাধারণত সাইনুসাইটিসের ব্যথাটা একটু আলাদা ধরনের হয়ে থাকে। যেকোনো বয়সেই হতে পারে এই সমস্যাটি। তবে কমবয়সীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
প্রকার: সাইনুসাইটিস মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। ১. তীব্র সাইনুসাইটিস ২. ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি সাইনুসাইটিস (Sinusitis) কারণ সমূহ: # দাঁত, চোখ, নাকের অসুখ থেকে সাইনুসাইটিস হতে পারে। # ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা এলার্জির কারণেও সাইনুসাইটিস হয়ে থাকে। # দীর্ঘদিন ঠাণ্ডা লেগে থাকলে সাইনুসাইটিস হতে পারে। # নাকের ইনফেকশন। # দাঁতের ইনফেকশন। # নাকের প্যাক। # নাকের পলিপ। # নাকের বাঁকা হাড়। # নাকের মাংস ফুলে বড় হয়ে যাওয়া (হাইপারট্রফিড ইনফেরিয়র টার্বিনেট)। # দূষিত পানি কিংবা উচ্চমাত্রার ক্লোরিনযুক্ত পানিতে গোসল করলে সাইনুসাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। # যেকোনো আঘাতের কারণে সাইনাস ছিদ্র হয়ে উন্মুক্ত হলে ইনফেকশন হতে পারে। # সিস্টিক ফাইব্রোসিস। # এডিনয়েড বড় হয়ে গেলে। # জন্মগতভাবে নাকের পেছনের ছিদ্রটি বন্ধ থাকা ইত্যাদি
সাইনুসাইটিস (Sinusitis) লক্ষণ ও উপসর্গ সমূহ: # মাথাব্যথা প্রধান লক্ষণ। কপাল ও নাকের চারপাশে ব্যথা অনুভব করবে। মাথা ভার হবে ও নিচের দিকে ঝুঁকে পড়লে ব্যথা বেড়ে যাবে। রোদে গেলেও মাথাব্যথা বেড়ে যাবে। # সব সময় নাক বন্ধ থাকা # নাক দিয়ে অবিরত পানিপড়া। # হঠাৎ নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া। # মাথা ভারী লাগা। # বমি বমি ভাব হবে। # সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা হতে পারে। # কাজকর্মে অনীহা। # স্বাদ ও ঘ্রাণ বুঝতে না পারা। # মাথা নাড়াচাড়া করলে, হাঁটলে বা মাথা নিচু করলে ব্যথার তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। # জ্বর জ্বর ভাব থাকে, কোনো কিছুতেই ভালো লাগে না এবং অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যায়। # সাইনাস এর এক্স-রে করলে সাইনাস ঘোলাটে দেখায়।
জটিলতা: সাইনাসগুলো চোখ এবং ব্রেইনের পাশে থাকে বলে সাইনাসের ইনফেকশন হলে তা চোখ এবং মস্তিষ্কেরও জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- # অরবিটাল সেলুলাইটিস এবং এবসেস বা চোখের ভেতরের ইনফেকশন। # মেনিনজাইটিস বা ব্রেইনের পর্দার প্রদাহ। # এক্সট্রাডুরাল এবং সাবডুরাল এবসেস। # অস্টিওমায়েলাইটিস (মাথার অস্থির প্রদাহ)। # কেভেরনাস সাইনাস থ্রম্বোসিস প্রভৃতি। # সাইনুসাইটিসের কারণে চোখের ভেতরে ইনফেকশন ঢুকে চোখটি নষ্ট করে দিতে পারে, আবার মাথার ভেতর ইনফেকশন ঢুকে মেনিনজাইটিস এমনকি ব্রেইন এবসেসের মতো মারাত্মক জটিল রোগের জন্ম দিতে পারে।
চিকিৎসা: এই সমস্যার জন্য এন্টিবায়োটিক, নাকে বিশেষ ধরনের ড্রপ, এন্টিহিস্টামিন, ব্যথানাশক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। কিনু্ত অনেক সময় এসব পাওয়ার ফুল ওষুধ যা বহু ক্ষেত্রেই রোগ পুরোপুরি নির্মূলে ব্যর্থ হয়। তবে এর সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা রয়েছে হোমিওপ্যাথিতে। যারা সাইনাসের সমস্যায় আক্রান্ত থাকে তারা মূলত টিউবারকুলার ডায়াথেসিসের পেসেন্ট। এর একমাত্র স্থায়ী চিকিৎসা হোমিওপ্যাথি। রেজিস্টার্ড কোন হোমিও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিলে এই সমস্যা নির্মূল হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র । সাইনাস হলে অবহেলা না করে আমার অভিজ্ঞতার চিকিৎসা সেবা আপনাকে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে। ভালো থাকুন।
লেখক: হোমিও চিকিৎসক, লেখক ও গবেষক সেল: ০১৭২০-৯০৮১৫৭