ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

যেসব কারণে বন্ধ্যাত্ব

ডা. ইসরাত জাহান
৮ মার্চ ২০২৫, শনিবার

একজন স্বামী এবং স্ত্রী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়া ১ বছর একসঙ্গে সহবাস করার পরও যদি সন্তান না আসে তাহলে তাকে বন্ধ্যাত্ব বলে। 
বন্ধ্যাত্ব ২ ধরনের হতে পারে:-
১. প্রাইমারি: যে সকল দম্পতির কখনোই সন্তান হয়নি অথবা যারা আগে সন্তান জন্ম দেননি। 
২. সেকেন্ডারি: যাদের আগে সন্তান হয়েছিল কিন্তু এখন হচ্ছে না।
“আধুনিক চিকিৎসায় এমন অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি আছে যারা আগে মা হওয়ার কথা ভাবতে পারতেন না। এখন তারা চিকিৎসা নিয়ে মা হচ্ছেন’’।
বন্ধ্যাত্বের কারণ: 
বন্ধ্যাত্ব বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। বন্ধ্যাত্ব মোট জনসংখ্যার ৭-৮%। বন্ধ্যাত্বের কিছু কারণ মহিলাদের, কিছু পুরুষের এবং কিছু অজানা। 
মহিলাদের বন্ধ্যাত্বের কারণ: 
মহিলাদের বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ ডিম্বাশয়ের ডিম্বাণুর অপরিপক্বতা বা ডিম্বাণু না আসা। এটার জন্য দায়ী হতে পারে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম, হতে পারে বিভিন্ন হরমোন যেমন থাইরয়েড এবং ডায়াবেটিস। 
* টিউবে সমস্যা থাকতে পারে যেমন টিউবে ইনফেকশন অথবা পূর্বের কোনো টিউব সার্জারি অথবা টিবি বা যক্ষ্মাও বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ। 
* জরায়ুর টিউমার যেমন ফাইব্রোয়েড এন্ডোমেট্রিওসিস, এডিনো মায়োসিস। 
এসব প্রতিটি কারণ যদি আমরা খুঁজে বের করি এবং চিকিৎসা দেই তখন বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা সম্ভব। 
পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ: 
পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে:
১. বীর্যের মধ্যে শুক্রাণু না থাকা। 
২. শুক্রাণুর দৌড়ানোর ক্ষমতা কম থাকা। 
৩. শুক্রাণু সঠিক আকার আকৃতির না হওয়া। অনেক সময় হরমোনের স্বল্পতার কারণে শুক্রাণু কমে যেতে পারে। 
সে সকল ক্ষেত্রে শুক্রাণু বাড়ানোর ওষুধ অথবা হরমোন দিলে শুক্রাণু বাড়বে এবং সন্তান ধারণ সম্ভব হবে। 
৪. ইরেকটাইল ডিস-ফাংশন, এটি চিকিৎসা নিলে ভালো হয়। 
৫. ধূমপান। 
৬. গরম পরিবেশে কাজ করা। 
এ ছাড়া কিছু কারণ আমাদের জীবনযাপনের উপর নির্ভর করে যেমন মোটা হওয়া, পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই বন্ধ্যাত্বের একটি কারণ। ওজন কমাতে হবে। মানসিক চাপ কমাতে হবে। পুরুষ ও মহিলা দুজনের জন্যই বয়স বন্ধ্যাত্বের অন্যতম একটি কারণ। সাধারণত ২২-২৬ বছর বয়সে মেয়েদের সন্তান নেয়া উচিত। যদি দেখা যায় দেরি হতে থাকে, ৩০ বছরের পর থেকে ফার্টিলিটি ১% করে কমতে থাকে। তাই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 
মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় অনেক কিছুই রয়েছে যেমন, ওষুধ, ইনজেকশন থেকে শুরু করে লেপারোস্কোপিক সার্জারি আইভিএফ পর্যন্ত। সাধারণত দেখা যাচ্ছে যাদের অনিয়মিত মাসিক হচ্ছে, ডিম্বাশয়ের পরিপক্বতা হচ্ছে না তাদের ওষুধ দিলেই কাজ হয়। অনেক সময় ওষুধে কাজ না হলে ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। প্রত্যেকবার ওষুধ বা ইনজেকশন ব্যবহার করার সময় ফলিকল ট্র্যাক করতে হয়। ফলিকল ট্র্যাকিং হচ্ছে ১২-১৩তম দিনে মাসিকের রাস্তা দিয়ে ট্রান্স ভ্যাজাইনাল সনোগ্রাফির মাধ্যমে ডিম্বাণুর পরিপক্বতা দেখা। ডিম্বাণু পরিপক্ব হলে ওষুধ বা ইনজেকশন ৩/৪ মাস ব্যবহার করতে দেয়া হয়। যদি কোনো টিউমার অথবা চকোলেট সিস্ট, ওভারিয়ান সিস্ট অথবা ডারমোয়েড থাকে অবশ্যই সার্জারি করাতে হবে এবং সার্জারির পরপরই গর্ভধারণের জন্য চিকিৎসা নিতে হবে। সার্জারি পরবর্তী চিকিৎসা না নেয়াটা বড় ভুল কাজ হবে। কারণ চকোলেট সিস্ট অথবা এন্ডোমেট্রিওসিস্ট ওভারি না কেটে ফেলা পর্যন্ত শরীর থেকে একেবারে যাবে না।
তাই এর মধ্যদিয়ে সন্তান ধারণের চিকিৎসা নিতে হবে। 
এ ছাড়া জরায়ুতে যদি ফাইব্রোয়েড থাকে এবং আকারে বড় হয়ে থাকে সেটা গর্ভধারণে সমস্যা করছে এবং ফাইব্রোয়েড পজিশনের জন্য রেট্রোভারটেড করে রেখেছে যেখানে ডিম্বাণু শুক্রাণু মিলিত হতে পারছে না এসব ক্ষেত্রে মায়োমেকটমি অপারেশনের মাধ্যমে টিউমার অপসারণ করলে গর্ভধারণ হয়। 
এ ছাড়া যাদের টিউবে সমস্যা রয়েছে টিউব ব্লক অথবা টিউবের ইনফেকশন অনেক বেশি যা নরমাল গর্ভধারণ সম্ভব নয় তাদের জন্য আইভিএফ বা টেস্টটিউব বেবি একটা ভালো সমাধান। 
পুরুষদের যাদের শুক্রাণুর পরিমাণ কম (৫-১৫ মিলিয়ন) অথবা শুক্রাণুর দৌড়ানোর ক্ষমতা কম তাদের জন্য আই.ইউ.আই পদ্ধতি, যদি তাদের স্ত্রীর টিউব ভালো থাকে। এই পদ্ধতিতে সবচেয়ে ভালো এবং দ্রুত দৌড়ানোর ক্ষমতাসম্পন্ন শুক্রাণুগুলো আলাদা করে নেয়া হয় এবং স্ত্রীর জরায়ুর মধ্যে দিয়ে দেয়া হয় এবং এতেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। বন্ধ্যাত্বের জন্য মহিলা ও পুরুষদের জন্য অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি আছে। 
চিকিৎসকের কাছে আসুন। 
চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। 
সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করুন-ইনশাআল্লাহ অবশ্যই সফল হবেন এবং অনেকটা সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হবেন। বাবা-মা হওয়ার যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা তা পরিপূর্ণতা লাভ করবে। তাই হাল ছেড়ে দিবেন না। সঠিক সময়ে সঠিক ও আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি সম্ভব।
 

লেখক: স্ত্রী, প্রসূতি, বন্ধ্যাত্ব রোগ চিকিৎসক ও সার্জন, 
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উইমেন্স হেলথ কেয়ার সেন্টার, 
ভৈরব, কিশোরগঞ্জ।
এম.বি.বি.এস, সি.সি.ডি (বারডেম) 
সি-আল্ট্রা (ঢাকা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ট্রেনিং-গাইনি এন্ড অবস্‌) 
সাবেক এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার ও সার্জন (স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিভাগ) 
জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাজিতপুর। 
এক্স এইচ.এম.ও (স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিভাগ) 
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।

 

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status